reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১২ মে, ২০২৪

মো. আশতাব হোসেনের হাসির গল্প

লাউয়ের মাচায় ভূতের ছানা

লতিফ বাওয়ানী জুটমিলের পরিত্যক্ত জায়গায় অনেকের মতো রাকিব, নূরু মিয়া লাউ চাষ করেছে। তা দেখাশোনা করার জন্য নূর আলম সিদ্দিকী ভাই নিজের ইচ্ছায় নিয়োজিত হয়েছেন। নূর আলম সিদ্দিকীর শখ হলো কেউ রান্না করলে সেখানে গিয়ে বসে থাকা এবং তরকারি মজা করার জন্য নানা পরামর্শ দেওয়া। সেই মতে কেউ বাগান, বা সবজিখেত পরিষ্কার করলেও সেখানে অকাতর পরামর্শ দেওয়াই তার প্রধান কাজ। নূর আলম ভাই যদিও মাঠের কাজকাম করেন না কিন্তু পরামর্শ দেওয়ার ওস্তাদ। তিনি লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের একজন স্টাফ। মনটিও বেশ উদার।

মানুষকে ডেকে নিয়ে চায়ের দোকানে বসে চা খেয়ে নিজেই বিল পরিশোধ করে খুব আগ্রহভরে। নিজে না গিয়ে নূরু মিয়া ও রাকিবকে দোকানে পাঠায় এটা-ওটা আনার জন্য। নূরু আর রাকিব বয়াতিও নূর আলম ভাইয়ের এটা-ওটা করে দিতেও বেশ আগ্রহী। আর হবেই না কেন, নূর আলম সিদ্দিকী ভাই কাউকে কখনো ঠকায় না। রাকিব বয়াতি লাউ, বেগুন, টমেটো চাষ করেছে সেখানে প্রতিদিন বিকেলে দেখতে যান নূর আলম ভাই, সঙ্গে নূরু মিয়াও স্বেচ্ছায় শ্রম দেয় রাকিবের সবজিখেতে। রাকিব আবার দক্ষ বাবুর্চি। সে মিলের স্টাফ কোয়ার্টার-মেচে রান্নাবান্নার কাজ করে বেশ সুনাম জড়ো করেছে তার ঝুলিতে। রাকিব মশায় উপদ্রব থেকে লাউ রক্ষা করে চকচকা তেলতেলে রাখার জন্য লাউয়ের গায়ে পলিথিনের জামা পরিয়ে দিয়েছে। পলিথিনে একটু বাতাস লাগলেই ফরফর চরচর শব্দ করে উড়তে থাকে।

এক রাতে সেখানে ঘটে মজার এক কাণ্ড! শীতের বিদায়ি পথে হঠাৎ করে একটু গরম পড়েছে। অনেকেই সন্ধ্যার পরে গা ঝাড়া দিয়ে সবজি বাগানের পাশ দিয়ে যায় রাস্তায় হাঁটাহাঁটি শুরু করেছে। গরমের দিনে অনেক রাত পর্যন্ত। এসব রাস্তা দিয়ে ঘুরে ঘুরে মানুষ বাতাস খায়। বাগানটির পুবপাশে পরিত্যক্ত চারতলা কলোনি। মিল চালু অবস্থায় এই কলোনিতে অনেক শ্রমিকের বসবাসের গুমগুমে আওয়াজে এলাকা সরগম থাকত, এখন সেখানে নীরব সন্ধ্যা কাঁদে। রাত হলে সেখানে কেউ যেতে চায় না ভয়ে! আর এই ভুতরে কলোনির পেছনেই লাগিয়েছে সবজিখেত। রাতে সেখানে কেউ ভুলেও যায় না। অনেকেই বলে থাকে রাত হলে কলোনির পেছনে জঙ্গলের ভেতরে কি যেন শিশুদের মতো আওয়াজ করে কান্না করে। আবার কেউ বলে জঙ্গলের ভেতরে রাতে ভূতের ছানারা দৌড়াদৌড়ি করে। এসব ধারণা এখন কিছু মানুষের ভেতরে বিশ্বাসের গোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। সেই বিশ্বাসে সীমানায় ঘটে যায় অবাক ঘটনা! রাত ১১টা বাজে, রাকিবের সবজি বাগানে সুনসান নীরবতার সঙ্গে আঁধারও জমেছে। বইছে বসন্তের দক্ষিণা বাতাস। রাকিবের লাউয়ের মাচায় কি যেন ফরফর ছরছর শব্দ করছে। বেশ কিছু দূরেই ফজলু মিয়া টোঙ ঘর। ফজলু মিয়ে পুকুরের মাছ পাহারা দেয় সেই টোঙ ঘরে থেকে। সেদিন ফজলু মিয়া স্টাফ কোয়ার্টার চায়ের দোকান থেকে চা পান করে রাত ১১টার সময় ফিরছে তার আস্তানা টোঙ ঘরটিতে।

ফজলু মিয়া রাকিবের সেই লাউয়ের মাচার পাশ দিয়ে যেতেই ফরফর ছরছর শব্দ শুনে হকচকিয়ে দাঁড়িয়ে যায়! এরপর মাচার নিচে তাকিয়ে দেখে মাচাতে কি যেন বানরের মতো করে ঝুলে দোল খাচ্ছে, সেই সঙ্গে বেশ শব্দ করছে! ফজলুর মনে সন্দেহ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সে মনে করে এখানে তো অনেক ভূতের কাহিনি শুনেছি, না জানি লাউয়ের মাচা ধরে আজ ভূতের ছানারাই দোল খাচ্ছে! বড় ভূত মনে হয় মাচার ওপরেই বসে আসে! এমন চিন্তা করতে করতে কলোনির পিছে ছোট বাচ্চার মতো ওয়া ওয়া কান্নার শব্দ ভেসে আসে ফজলু মিয়ার কানে! ফজলু মিয়া এবার খুব ঘাবড়ে যায়! সে ভয়ে জোরে চিৎকার করে বলে কে আছো গো জলদি করে রক্ষা করো আমাকে ভূতে মেরে ফেলছে! ভূত আমাকে পেয়ে বসেছে! তার চিৎকার শুনে রাকিব নূরুসহ সবাই দৌড়ে গিয়ে দেখে ফজলু মিয়া ভয়ে দিশা হারিয়ে ফেলেছে। তার সেই টোঙ ঘরটি কোনদিকে স্থির করতে পারছে না। রাকিব আর নুরু জিগ্যেস করে, কী হয়েছে? সে বলে ভূত ভূত ওই যে দেখো লাউয়ের মাচার ফরফর করে দোল খাচ্ছে! রাকিব নুরু, নূর আলম ভাইসহ অনেকেই লাউয়ের মাচায় কাছে গিয়ে দেখে পলিথিনের জামায় মোড়ানো লাউ বাতাসে দুলছে!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close