reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ নভেম্বর, ২০২২

মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেনের হাসির গল্প

জামাই শাশুড়ির কীর্তি

রসুলপুর গ্রাম। এ গ্রামেরই বাসিন্দা গুড্ডু মিয়া। হাড় কিপটে হিসেবেই তাকে গ্রামের সবাই চিনে। অনেক ধন সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও তার কৃপণতার শেষ নেই। তার পায়ের জুতার দিকে তাকালেই বোঝা যায়, তিনি কতটা কৃপণ। জুতাতে শুধু সেলাই আর সেলাই।

তার তিনটি মেয়ে। তিনটি মেয়েকে বিয়ে দিতে পেরে সে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। কিছুদিন আগে ছোট মেয়েটার বিয়ে দিয়েছেন। অনেক টাকা খরচ হয়েছে বিয়েতে। জামাইকে অনেক কিছু পণ হিসেবে দিতে হয়েছে। গুড্ডু মিয়ার গিন্নি স্বামীকে বলে তোমার কিসের এত চিন্তা? সব তো মেয়ের জামাইরাই পাবে। তবুও গুড্ডু মিয়ার কিপটামি যেন কিছুতেই যায় না।

এক দিন গুড্ডু মিয়ার গিন্নি বলছে, ওগো শুনছো, নতুন জামাইকে দাওয়াত করে আনা প্রয়োজন। নতুন জামাইকে গিয়ে না আনলে সে কি আসবে ভেবেছো? তুমি জামাইকে নিয়ে আসো।

গুড্ডু বিরক্ত হয়ে বলল, জিনিসপত্রের যে দাম বেড়েছে তাতে বাড়িতে জামাই আনা কি সহজ কথা! অনেক খরচের ব্যাপার। এত ব্যস্ত হয়ো না তো, সে যাব এক দিন।

কিন্তু গিন্নির ঘ্যানঘ্যানানিতে গুড্ডু মিয়া এক প্রকার বাধ্য হয়ে চলল জামাই আনতে। যাওয়ার পথে গুড্ডু মিয়া মনে মনে এমন এক ফন্দি আঁটল যে, বউ আর কোনো দিন যেন জামাই আনার নাম মুখে উচ্চারণ না করে। আর জামাই বাবাজিও কোনো দিন যেন শ্বশুরবাড়ি মুখো হতে না পারে।

গুড্ডু যখন জামাই নিয়ে বাড়ি পৌঁছাল, বউ তখন কি যে খুশি। কিন্তু বেশ কয়েক দিন যাওয়ার পরও জামাইয়ের ফিরে যাওয়ার নামটি মুখে নেই। আর যাবেই বা কেন, জামাই আদর বলে কথা। এদিকে কিপটে গুড্ডু মিয়ার বাজার করতে করতে কাহিল অবস্থা।

গুড্ডু মিয়া জামাইকে আনতে যাওয়ার পথে যে ফন্দি এঁটেছিল তা বাস্তবায়ন করার জন্য এক দিন জামাইকে ডেকে চুপিচুপি বলল, দেখ বাবাজি কত দিন ধরে আমার বাড়ির উঠানের বেল গাছ থেকে বেল চুরি যাচ্ছে। তুমি গাছটার দিকে তীক্ষè নজর রাখবে। চোর ধরার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম।

কথাটা শোনার পর থেকে জামাই বাবু বেল গাছটার দিকে খুব নজর রাখছে। জামাইও পণ করেছে চোরকে ধরে শ্বশুর মশাইয়ের প্রশংসা তাকে পেতেই হবে। একবার যদি চোরকে ধরতে পারি কোনো অবস্থাতেই ছাড়ব না।

গুড্ডু মিয়া এক দিন ইফতার শেষ করার পর হঠাৎ গিন্নিকে বলল, গিন্নি আমার শরীরটা কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে। এক গ্লাস বেলের শরবত নিয়ে এসো তো।

শুনে তো গিন্নি অবাক, যেকোনো দিন লেবু গাছের লেবু খায় না, রমজান মাসে বেশি দামে বিক্রি করবে বলে। লেবু খাওয়ার কথা বললে উত্তেজিত হয়ে বলত, জানো গিন্নি লেবুর হালি এখন কত? ৪০ টাকা। বেল খেতে বললে তো আরো রেগে গিয়ে বলত, জানো একটি বেলের দাম ১০০ টাকা।

গিন্নি তাই দেরি না করে ছুটল বেল গাছের দিকে। ওদিকে জামাই বাবাজিও ঘাপটি মেরে বসে আছে বেল গাছের কাছে। যেই না শাশুড়ি বেলে হাত দিয়েছে অমনি জামাই বাবু তার সব শক্তি দিয়ে জাপটে ধরে ‘চোর চোর’ বলে চেঁচাতে লাগল। এত জোরে জাপটে ধরেছে যে গুড্ডুর গিন্নি কথা বলার সুযোগই পেল না।

চেঁচামেচি শুনে গুড্ডু টর্চ লাইট নিয়ে সেখানে এসে যা দেখল তাতে হাসি চেপে রাখা দায়!

কিন্তু গুড্ডু দুজনকে এই অবস্থায় দেখে বলল, ছিঃ ছিঃ, তলে তলে এত কিছু! এজন্যই তুমি জামাই আনো জামাই আনো বলে প্রতিদিনই কানের কাছে প্যানপ্যান করতে। জামাই শাশুড়ি কথার কোনো জবাব দিতে পারলে তো! জামাই সেই রাতেই না বলে পালাল, আর এদিকে শাশুড়ি এই ঘটনার পর ঘূর্ণাক্ষরেও আর জামাই আনার কথা গুড্ডুকে বলতে চিরদিনের জন্য ভুলে গেল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close