ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ভালুকা
দেশি মাল্টা-কমলা চাষে সাফল্য, কমছে আমদানি
* ইতিমধ্যে ভালুকায় বিদেশি মাল্টা আমদানি কমেছে প্রায় ৮০ ভাগ * ভালুকার মাল্টা বিদেশে রপ্তানি করার স্বপ্ন দেখছেন অনেকে
ময়মনসিংহের ভালুকায় বারি-১ মাল্টা চাষে বেশ সাফল্য দেখছেন চাষিরা। এমনই একজন চাষি উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারগাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম নাননু। ফল ব্যাবসায়ীরা জানায় ইতিমধ্যে উপজেলায় বিদেশি মাল্টা আমদানী
প্রায় ৮০ ভাগ কমে গেছে। স্থানীয় ভাবে মাল্টা চাষে সফলতা আসলে চাষিরা ঝুঁকিমুক্ত চাষাবাদ ও আর্থিক লাভবান হবেন। কমে আসবে বিদেশি মাল্টার আমদানী।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫৬ হেক্টর জমিতে ৬৫০টি মাল্টা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে ৪২০টি বাগানে উৎপাদন শুরু হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২২৫০ মেট্রিক টন মাল্টা। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৭ থেকে ১৮ কোটি টাকা। মাল্টার পাশাপাশি রয়েছে ফেন্সি জাতের লেবু। দার্জিলিং ও চায়না জাতের কমলা। মাল্টা বাগানেই লেবু চাষ হয়। এটাকে সাথী ফসল বলে। উপজেলায় ২৫৫ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। ফলন এসেছে ২৪০ হেক্টর জমিতে ১০ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।
উপজেলা সদর, সিডষ্টোর বাজার, মাষ্টারবাড়ী, ভরাডোবা সহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমদানীকৃত অল্পপরিমাণে মাল্টা দোকান গুলিতে শোভা বর্ধন করলেও স্থানীয় মাল্টাই বাজার দখলকরে আছে। বর্তমানে যে পরিমাণে উৎপাদন হচ্ছে এর ধারাবাহিকতা থাকলে অচিরেই ভালুকা উৎপাদিত মাল্টা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাহিরে রপ্তানী করা যাবে। যেখানে আমদানী কৃত পাকিস্তানী মাল্টা বাজারে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, সেখানে স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত মাল্টা ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে কেজি বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় মাল্টাতে কোনো ভেজাল নেই। অন্যদিকে আমদানী কৃত মাল্টাতে কেমিক্যাল ও ভেজাল থাকে। স্বাদেও রয়েছে পার্থক্য। আমদানী কৃত মাল্টা অনেকটা টক হলেও স্থানীয় মাল্টা মিষ্টি ও সু-স্বাদু। অনেকেই স্বপ্ন দেখছেন ভালুকার মাল্টা বিদেশে রপ্তানী করার। উপজেলায় মাল্টার পাশাপাশি উন্নত জাতের লেবু ও কমলা চাষ হচ্ছে। কম পুঁজিতে মাল্টা চাষ করে অনেকেই সফল হয়েছেন। এমনি এক কৃষক উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারগাড়া গ্রামের মৃত শামছুল হক মেম্বারের ছেলে রফিকুল ইসলাম নাননু।
রফিকুল ইসলাম নাননু জানান, তার বড় ভাই অসর প্রাপ্ত মেজর শফিকুল ইসলামের উৎসাহে মাল্টা বাগান করার পরিকল্পনা করেন। পরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হোন বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করার। এজন্য তিনি চাষের ওপর ট্রেনিংও নিয়েছেন। ট্রেনিং শেষে বিনা মূল্যে ৪৫০টি চারাও পান। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুুযায়ী সেই চারা ৬ বিঘা জমিতে রোপন ও পরিচর্যা শুরু করেন। ইতোমধ্যে ৩ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। আরো প্রায় ৩ লাখ টাকা বিক্রির আশা তার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, ভালুকার মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা, লেবু ও কমলা চাষের জন্য খুবই সহায়ক। ফলে এখানে মাল্টা, লেবু ও কমলা চাষে তিনি ব্যাপক সফলতা দেখছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মাল্টা, কমলা ও লেবু চাষিদের ট্রেনিং দেওয়া হয়। চাষিরা ইচ্ছে করলে
মাল্টা চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল, যেমন, লেবু, পেঁপে, শাক, সবজি লাউ, সিম চাষ করে
বাড়তি আয় করতে পারেন। ভালুকায় উৎপাদিত মাল্টা, লেবু ও কমলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাহিরে রপ্তানী হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীনূর খান বলেন,
মাল্টা ও কমলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাতে
রপ্তানী করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
"