নিজস্ব প্রতিবেদক, শ্যামনগর থেকে ফিরে

  ২১ মার্চ, ২০২৩

শ্যামনগরে বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়ম

* পাউবো মহাপরিচালক ও দুদক চেয়ারম্যানকে অভিযোগ * পাউবোর এসও এবং অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ * অভিযুক্ত কর্মকর্তার সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীর যোগসাজশ * অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাউবোর এসও সাজ্জাদুর রহমান

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়মণ্ডদুর্নীতির অভিযোগে উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা (এসও) সাজ্জাদুর রহমান ও অফিস সহায়ক (পিয়ন) খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে লিখিত দিয়েছেন একাধিক জনপ্রতিনিধি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মহাপরিচালক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর সম্প্রতি এই অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগে স্বাক্ষর করেছেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও গাবুরা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান এস এম রবিউল ইসলামসহ কয়েকজন ইউপি সদস্য। অভিযোগে পাউবোর এসও এবং অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিন নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ এলাকায় গেলে গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ও গোলাম কিবরিয়া, জি এম মাছুম বিল্লাহ জানান, উপজেলার সুন্দরবন উপকূলীয় আটুলিয়া, বুড়িগোয়ালিনী এবং দ্বীপ ইউনিয়নের গাবুরা আওতাধীন ৫ ও ১৫ নম্বর পোল্ডারের দায়িত্বে আছেন এসও সাজ্জাদুর রহমান। এই এসওসহ অফিস সহায়ক খোরশেদ আলম টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়মণ্ডদুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে নানা সময়ে বাগবিত-া হচ্ছে। তারা এই কর্মকর্তাদের উপকূলীয় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দেখতে চান না। কারণ সরকার দ্বীপ ও উপকূলীয় এলাকার মানুষদের বসবাস নিশ্চিত করতে অর্থ বরাদ্দ করেছেন। তারা চান একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হোক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া, বুড়িগোয়ালিনী ও গাবুরা ইউনিয়নে প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ও নদী ভাঙনে এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। এতে মারাত্মক ক্ষতি হয় এলাকাবাসীর।

ভুক্তভোগীরা জানান, দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে সব সময় তাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মরত এসওসহ অন্যরা নিজেদের পকেট ভারী করতে ব্যস্ত। স্থানীয় ঠিকাদারকে উপেক্ষা করে বাইরের ঠিকাদারদের কাজ করাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এতে যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ সংস্কার হয়। ফলে সামান্য জোয়ারের তোড়ে নদী ভাঙন দেখা দেয়, পুনরায় প্লাবিত হয় এলাকা। ২০০৯ সাল থেকে আজও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে জীবনযাপন করছেন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরো অভিযোগ জানান, শ্যামনগর উপজেলার এসও সাজ্জাদুর রহমানের কাছে শিডিউল ও ডিজাউন অনুযায়ী কাজ দেখতে চাইলে এ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি দিচ্ছেন। এসও গংদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।

বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের বলেন, ‘খোরশেদ আলম একজন পিয়ন হলেও তার হাতে জিম্মি এসও, এসডিও সাহেবরা। খোরশেদ আগেই জানেন সাতক্ষীরায় কোন ঠিকাদার কাজ পাচ্ছে। এসও, এসডিওরা ঠিকাদারকে বলেন, খোরশেদ আলমের মাধ্যম দিয়ে এলে আমাদের সবাইকে পাবেন। খোরশেদ আলমের ওপর বিরক্ত হয়ে তার কার্যক্রম স্থাগিত করার জন্য উপজেলা পরিষদে আমরা ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের দাবি মুখে রেজুলেশন করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামনগর পাউবোর এসও সাজ্জাদুর রহমান বলেন, এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। অভিযোগের ভিত্তি নেই। যোগাযোগ করা হলে পাউবোর অফিস পিয়ন খোরশেদ আলম বলেন, ‘কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই।’ দুদকে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভাই আপনার নাম্বারটি সংরক্ষণ করে রাখছি। সাতক্ষীরা শহরে এলে আমার সঙ্গে দেখা করবেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close