আখলাছ আহমেদ প্রিয়, হবিগঞ্জ

  ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩

ভ্রমণের অন্তরালে শান্তির ছোঁয়া

জীবন একটি যাত্রা, কোনো গন্তব্য নয়! ভ্রমণ কখনো অর্থের নয়, সাহসের বিষয়! আর এ ভ্রমণ যদি হয় শান্তির, তাহলেই হৃদয়ে মিলে পূর্ণতা। যদিও কথাগুলো মনীষীদের। তবে একটি ক্ষুদ্র জীবনের প্রয়াস কথাগুলোর বাস্তবতা দেখা দিয়েছে ঢাকার এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম টুটুলের সাহসী ভ্রমণ কাহিনিতে। সম্প্রতি দেশের ৬৪টি জেলা ভ্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তিনি। ইতিমধ্যে ৫৫টি জেলায় ভ্রমণ করেছেন। বাকি জেলাগুলো কিছুদিনের মধ্যেই ভ্রমণ করবেন বলে জানান তিনি।

টুটুল একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। তিনি হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বড়চর গ্রামের মৃত আব্দুস সোবানের ছেলে। চাকরির সুবাদে তিনি এখন বসবাস করছেন গাজীপুরে। টুটুল জেলায় জেলায় ভ্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি বাড়িয়ে দিচ্ছেন মানবতার হাত। নতুন জেলায় প্রবেশ করেই একটি করে গাছ রোপণ করছেন। দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের হাতে তুলে দিচ্ছেন খাবার এবং পরণের কাপড়। এতে আনন্দিত টুটুল। ভ্রমণ শেষে খুশি মনেই টুটুল ফিরেন নিজ জেলা হবিগঞ্জ এবং গাজীপুরে।

গত মঙ্গলবার হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে চায়ের আড্ডায় প্রতিদিনের সংবাদকে ভ্রমণ কাহিনী বলেন টুটুল। তিনি বলেন, ‘আমার কিছু না বুঝে ওঠা শৈশব আর উন্মাতাল কৈশোরের সময়টা কেটেছে গ্রামে। আমি সর্ব প্রথম ২০০৬ সালে নিজ জেলা থেকে অন্য জেলায় পা রাখি। তখন আমি খুব ছোট। সিলেট-ঢাকা সৌদিয়া বাসে করে যাচ্ছিলাম। বাসে বসেই প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করি। এত লম্বা ভ্রমণের একটা মিনিটও আমি বাসের ভেতরে চোখ রাখতে পারিনি। শুধু চারপাশ দেখার চেষ্টা করেছি। তখন থেকেই মূলত আমার ভ্রমণের ইচ্ছা জাগে। একটা পর্যায়ে পড়াশোনার পাশাপাশি শুরু হল চাকরি জীবনের অধ্যায়। প্রাইভেট সেক্টরের চাকরি তাই জীবন একটা সময়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠলো। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখনই মাথায় ঘুরপাক খেল ভ্রমণ করা যায়। যেহেতু চাকরি করি, ঈদের ছুটি ছাড়া ভ্রমণের দীর্ঘ সময় নেই। তারপরও সবকিছু ম্যানেজ করে শুরুতে বছরে দুই বার দূরে কোথাও ঘুরতে যাই। এতে যেন দুর্বিষহ জীবনে কিছুটা প্রশান্তি আসে। আমার অনেক আগে থেকেই ৬৪ জেলা ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিল। তবে তা বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছি ২০২২ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝিতে। প্রায় দুই মাসে আমি ভ্রমণ করেছি ৫৫টি জেলা। এতে আমি প্রতিটি জেলায় একটি করে গাছ রোপন করেছি। সেইসঙ্গে অসহায় ও সাধারণ মানুষদের সঙ্গে একবেলা ভাত খেয়েছি এবং সামর্থ অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় একজন মানুষকে পোশাক দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সাগর, নদী, পাহাড়, হাওর আমাকে মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ করেছে। তা ভুলতে পারছি না। দেখেছি ইট পাথরের দালান এবং ঝিঁঝিঁ ডাকা সন্ধ্যার গ্রাম। দেশের বেশিরভাগ যানবাহনই ব্যবহার করেছি। বাদ যায়নি বিমানও। দেখেছি বিভাগীয় রেলওয়ে স্টেশন এবং কোন গ্রামের মধ্য দিয়ে চলমান রেললাইন রূপকথার মতো চন্দ্রদিঘলিয়া স্টেশনে থেমে যাওয়া। যেন তার চন্দ্রদিঘলিয়া ছেড়ে যাওয়া বারণ। বিস্তৃত চা বাগান দেখেছি যেখানে সবুজের সমারোহ। মেঘের অনেক রং, কখনো সে দুধের মত সাদা, কখনো বা ধূসর কালো, আবার কখনো লালচে আভা মিশে থাকে মেঘের গায়ে, তবুও সব রঙেরই যেন ভিন্ন মাধুর্যতা রয়েছে। মেঘের সেই সৌন্দর্য উপভোগ করেছি খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালিতে। যেখানে শুধু মেঘ আর মেঘ। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার এ দেশের ইতিহাস বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রাচীন আমলে নির্মিত জমিদার বাড়ি, মসজিদ বিভিন্ন বিহার বরাবরের মতোই কাছে টেনেছে। সোনারগাঁওয়ে ইশা খাঁর আমলের তৈরি বাড়িগুলো এখন লোকশিল্প যাদুঘর করা হয়েছে। হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখর থাকে জায়গাটি। আজকের বাংলাদেশ তখনো অনেক সমৃদ্ধ ছিল এসব প্রাচীন নির্মাণ দেখে বুঝতে পেরেছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close