গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি

  ১৫ মে, ২০২২

২ বছর ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলাচলকারী লোকাল ট্রেনটি দুই বছর বন্ধ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও চালু হয়নি ট্রেনটি। একমাত্র এই লোকাল ট্রেনটি দেশে করোনার আঘাত হানার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন একই সূচিতে সময় মেনেই চলাচল করত। এতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল উপজেলা ও গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরে প্রতিদিন যাতায়াতকারীদের কাছে ট্রেনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ভাড়াও ছিল বাসের তুলনায় অল্প।

জানা গেছে, ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা এই লোকাল ট্রেনটিতে গাদাগাদি করেই মানুষ চলাচল করত। সরকারের রাজস্ব আয়ও হতই ভালো, লোকাল ট্রেন হিসেবে। কিন্তু জনপ্রিয় এই লোকাল ট্রেনটি বন্ধ হওয়া ২ বছর পার হয়ে গেছে। এই সময়ে করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে দেশে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরে এলেও এখনো চলাচল শুরু করেনি ট্রেনটি। কবে নাগাদ তা আবার চালু হতে পারে, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেননি। লোকাল এই ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মধ্যে আপ এবং ডাউনে ৬টি নাম্বার নিয়ে চলাচল করত।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তা বেড়ে চললে ওই বছরের ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। ফলে সারা দেশে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ট্রেন চালু করা হলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনপ্রিয় এই লোকাল ট্রেনটি বন্ধই রয়ে গেছে। পাশাপাশি চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে আর দুটি সাটল ট্রেনেরও একই অবস্থা। রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রী আনা নেওয়ার জন্য এই সাটল ট্রেন দুটি চালু হয়েছিল।

ট্রেনগুলো চালুর বিষয়ে একাধিকবার আবেদন করেও এখন পর্যন্ত চালু করা যায়নি। মানববন্ধনও হয়েছে বেশ কয়েকবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনসহ নাচোল ও রহনপুরে। রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গত বছরের ১২ মার্চ রহনপুর রেলস্টেশনে পরিদর্শনে এলে সে সময় তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে করোনাকালীন বন্ধ হওয়া লোকাল ট্রেনটি চালু করা হবে বলে আশ্বাস দেন। তার সে আশ্বাসও আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। লোকাল ও সাটল ট্রেন দুটি চালু না হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এলাকার মানুষ। বিশেষ করে স্বল্পআয়ের লোকজন। তাদের দাবি, দ্রুতই ট্রেনগুলো চালু করা হোক।

এ বিষয়ে রহনপুর রেলস্টেশনের কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, করোনাকালীন থেকে লোকাল ট্রেনটি বন্ধ রয়েছে। অনেক যাত্রী স্টেশনে এসে খোঁজ নেয়। তবে ট্রেনটি চালুর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলতে পারবেন।

রহনপুরের বাসিন্দা ও রেলবন্ধর বাস্তবায়ন পরিষদের মুখপাত্র পারভেজ শেখ বলেন, লোকাল ট্রেনটি সবশ্রেণীর কাছে জনপ্রিয় ছিল। ভোলাহাট, নাচোল, নওগাঁর নিয়ামতপুর পোরশা ও সাপাহার এলাকার লোকজন যাতায়াত করত এই ট্রেনে। ট্রেনটি পুণরায় চালুর দাবি জানান তিনি। নাচোল উপজেলার যাত্রী রফিকুল ইসলাম জানান, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক রহনপুর শাখায় চাকরি করার কারণে কয়েকজন কর্মকর্তা প্রতিদিন সকালে নাচোল স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে রহনপুরে কর্মস্থলে হাজির হতাম। অফিস শেষ করে আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যেতাম। বন্ধ থাকায় আর যেতে পারছি না।

রহনপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা কাউসার জামান জানান, ট্রেনটি চলাচলে গরীব, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেনীর যাত্রীরা চলাচলে প্রিয় ছিল। অনেকে আসবাবপত্র ও পণ্য নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কাঁকনহাট, রাজশাহী, আনাড়ী ও ঈশ্বরদীতে কম খরচে নিয়ে যেত। আবার নিয়ে আসত। ট্রেনটি চালু না হওয়ার যাত্রীরা দুর্ভোগে রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছি অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য এখন পর্যন্ত ট্রেনটি পায়নি। যদিও রেলমন্ত্রী আমাদের এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছিলেন। অবিলম্বে ট্রেনটি চালুর দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, কোচ সংকটের কারণে ট্রেনটি চালু করা যাচ্ছে না। তবে ট্রেনটি চালু করার পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close