ঝালকাঠি প্রতিনিধি

  ২১ অক্টোবর, ২০১৯

ঝালকাঠি

অপর্যাপ্ত সরকারি সুবিধা, ঋণের জালে জড়াচ্ছেন জেলেরা

‘সরকারি নির্দেশনা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নদীতে জাল ফেলতে যাচ্ছি না। কিন্তু এ সময়ে বরাদ্দের ভিজিএফ ২০ কেজি চালের সহায়তাও পাচ্ছি না। তাই সংসার চালানোর জন্য এনজিও ‘আশা’ থেকে মাসিক শতকরা ১০ টাকা হারে সুদে ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি।’

বলছিলেন ঝালকাঠি শহরের জেলেপাড়া এলাকার ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি ও জেলে সমবায় সমিতির সভাপতি নবদ্বীপ মালো। তিনি বলেন, ‘ঋণ না নিলে পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্তÍতি নিয়ে না খেয়ে থাকতে হতো। এভাবে শুধু আমিই না অধিকাংশ জেলেই আশা, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিও-সমবায় সমিতি (মাল্টি পারপাস) থেকে ঋণ নিয়েছে।’

ঝালকাঠির শহরের পূর্বচাঁদকাঠি ও কৃষ্ণকাঠি এলাকার মধ্যবর্তী পাড়ায় জেলেদের বসতি। এক সময় এখানে বিপুল সংখ্যক জেলে পরিবার বাস করায় এলাকাটির নামকরণ হয় ‘জেলেপাড়া’। কিন্তু বর্তমানে সেখানে জেলে পরিবার রয়েছে মাত্র ৩৫টি। এদের মধ্যে ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক পুরুষ নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।

গত ৯ অক্টোবর শুরু হওয়া মা ইলিশ নিধন বিরোধী অভিযান ২২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এ সময়ে নদীতে জাল ফেললেই ভ্রাম্যমাণ আদালত এসে জেলেদের আটক, জেল-জরিমানাসহ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলে। ভুক্তভোগি জেলেরা জানান, একেকটি জাল তৈরিতে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।

অধীর মালো জানান, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে জাল না ফেলার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন। কিন্তু এ সময় জেলেরা কি খাবে এমন কোন সুযোগ করা হয়নি? জাটকা নিধনের সময় মাত্র ৪০ কেজি চাল দেয় সঙ্গে অন্য কোন উপকরণ নেই। কিন্তু মা ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করা হেেয়ছে। তাই আমরা এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে জীবন বাঁচাচ্ছি।’

জেলে নবদ্বীপ মালো জানান, ‘আশা’ থেকে ঋণ নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যেই কিস্তি দেওয়া শুরু করতে হয়। আমাদের প্রথম কিস্তির সময়ে কর্মকর্তাদের হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ করলে তারা মানবিক কারণে আমাদের সুযোগ দেয়। এরপরেই জাল ফেলার সুযোগ আসলে মাছ ধরে বিক্রি করে কিস্তি দেওয়া শুরু করি। ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ এ ২২ দিন সময়ের ঘাটতি পোষাতে আমাদের কমপক্ষে ৩ মাস বেগ পেতে হয়। মাস খানেক পরে আবার শুরু হবে জাটকা বিরোধী অভিযান। যত প্রতিকূল অবস্থা সবই আমাদের প্রান্তিক জেলেদের।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনজিও মাঠ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা জানান, জেলেদের জন্য আমাদের বিশেষ কোন ঋণের ব্যবস্থা নেই। সাধারণ গ্রাহকের মতোই জেলেরা এসে আমাদের কাছ থেকে ঋণ নেয়। কিস্তি নেওয়ার সময় অনুরোধ করলে আমরা মানবিক কারণে তাদের প্রতি সুযোগ দেই। জানতে চাইলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল কৃষ্ণ ওঝা প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, জেলেদের প্রণোদনা হিসেবে ২০ কেজি ভিজিএফ চাল সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। মা ইলিশ নিধন না করতে নিষেধাজ্ঞা সময়ের অনেক পূর্ব থেকেই তাদের সচেতন করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close