আসাফুর রহমান কাজল, মহানগর (খুলন)

  ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

জালের ফোঁড়ে স্বপ্ন বুনেন কপোতাক্ষ পাড়ের নারীরা

আর মাসদেড়েক পর এলাকার অধিকাংশ পুরুষ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাবেন। সেখানে থাকবে কমপক্ষে পাঁচ মাস। এ জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মহাজন, দাদন ব্যবসায়ী ও মাঝিরা। সেই সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন কপোতাক্ষ পাড়ের জেলে পরিবরের নারী সদস্যরা। জালের ফোঁড়ে ফোঁড়ে স্বপ্ন বুনে চলছেন তারা।

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নের রামনাথপুর, মাহমুদকাঠি পুরোনো খেয়াঘাট এলাকার নদী পাড়ে দেড়শতাধিক জেলে পরিবারের বসবাস। জয়ন্তী বিশ্বাস, রিতা বিশ্বাস, স্বষ্ঠী রানী বিশ্বাস, সন্ধ্যা বিশ্বাস, অসীমা বিশ্বাস, শেফালী বিশ্বাস ওই জেলে পরিবারের সদস্য। তাদের স্বামী-সন্তানরা প্রতিবছরই পাঁচ মাসের জন্য বঙ্গোপসাগরে যান। এই পাঁচ মাসের তারা আয় করে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা। আর পুরো বছর ধরে এখানকার নারীরা আয় করেন জাল তৈরি করে। প্রত্যেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করেন। এই আয় তাদের পরিবারকে আরেকটু স্বচ্ছল করে তোলে।

সংসারের কাজ সেরে ঘরের বারান্দায় বসে জাল বুনছেন অসীমা বিশ্বাস। তিনি জানান, একটি বেন্টি জালে প্রায় দুইমণ সুতা লাগে। ১০-১২ জন মিলে ভাগে ভাগে জাল বুনি। একটি জাল বুনতে সময় লাগে প্রায় ১ থেকে দেড় মাস।

একই এলাকার স্বষ্ঠী রানী বিশ্বাস জানান, এখন আমরা দিন চুক্তিতে কম কাজ করি। নিজেরাই ১০-১২ জন মিলে জালের অর্ডার নেই। সেই জাল বুনে দিয়ে ১০০ টাকা নেই। তাতে আমাদের বেশি লাভ হয়।

এদিকে খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট অঞ্চলের প্রায় ২ হাজার ৭০০ ট্রলার সাগরে যায়। আর এ পেশার সঙ্গে যুক্ত এ অঞ্চলের প্রায় ২ লাখ মানুষ। বংশ পরস্পরায় এসব জেলেরা ঝুঁকিপূর্ণভাবে মাছ আহরণ করে থাকে। জেলে পরিবারের সুরক্ষায় কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাওসেড’ সূত্রে এই তথ্য জানা যায়। এ মূহুর্তে নদী পাড়ের খাস জমিতে থাকা এসব পরিবারের পুরুষাও নৌকা তৈরি, নৌকায় আলকাতরা দেয়া, ড্রামে তেল ভরা, কাছি মেরামত, বাঁশ খুঁটি জোগাড় করা, জালে গাব দেওয়ার কাজে ব্যস্ত।

রামনাথপুর এলাকার চরন কুমার বিশ্বাস জানান, আমার ৪টি নৌকা সাগরে যাবে। সেই জন্য ৪টি বেন্টি জাল প্রয়োজন। সেই জাল বুনে (তৈরি) করে দিয়েছে এলাকার নারীরা। এছাড়া ঘেরা জাল, খেওলা জালও তারা বুনতে পারে। ৮-১০ জন নারী মিলে বেন্টি জাল বোনে। একটি জাল ২০০ হাত লম্বা হয়ে থাকে। প্রতিটি জালে প্রায় ৪০/৪৫ হাজার টাকা মজুরী হয়ে থাকে। সংসারের জাবতীয় কাজ সেরে জাল বুনার কাজ করে এইসব পরিবারের নারীরা। তারা যে বাড়তি টাকা আয় করে। যা তাদের পরিবারকে সহায়তা করে। ৮০/৮৫ হাজার টাকা খরচ করে জাল বুনলে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় সেই জাল বিক্রি করা যায়।

জেলে পরিবারের সুরক্ষায় কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাওসেড-এর নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফীন জানান, ঝুঁকিপূর্ণভাবে মাছ আহরণ নিয়োজিত জেলেদের সবচেয়ে বড় বিপদের কথা হলো, তাদের কোনো ব্যাংক ঋণ ও বীমা সুবিধা নেই। যা আয় হয় তা দিয়ে কোনমতে তারা চলে। তাদের নারীরা এখন জাল বুনে বাড়তি আয় শুরু করেছেন। তারা নদীপাড়ে খাস জমিতে বসবাস করেন। কিন্তু নদীর তীরও ক্রমাগত ভাঙনের কবলে পড়ে তাঁদের সব কিছুই হারাতে হচ্ছে দিনদিন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close