মজিবার রহমান, কয়রা (খুলনা)

  ২৫ মে, ২০১৯

আইলার ১০ বছর পূর্তি আজ

কয়রায় এখনো নির্মাণ হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ

আজ ভয়াল ২৫শে মে। ২০০৯ সালের এই দিনে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল কয়রা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই থেকে এই দিনটিকে এ জনপদের মানুষে বিভীষিকাময় দিন হিসেবে স্মরণ করে আসছে। এই দিনে কয়রার পাউবোর বেড়িবাঁধের ২৭টি পয়েন্ট ভেঙে গেলে গোটা উপজেলা লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পায়নি সাধারণ মানুষ, গবাদি পশু, গাছপালা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, মৎস্য ঘেরসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ। একই সঙ্গে ৫৭ জন প্রাণ হারায়। আইলার ১০টি বছর পেরিয়ে গেলেও উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ তাদের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সহায় সম্বলহীন স্বজনহারা মানুষগুলো এই দিনটিকে আজো আতঙ্কের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কৃষকরা আইলা হওয়ার দুই বছর পর থেকে বেশকিছু জমিতে ভালভাবে ফসল উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার এস এম মিজান মাহমুদ বলেন, এখনও লবণাক্ততার গ্রাস থেকে পূর্ণাঙ্গ রক্ষা পায়নি কয়রা এলাকার কৃষি জমি। লবনাক্ত জমিতে লবন সহনশীল ফসল উৎপাদন করতে পারছে স্থানীয় কৃষকরা। আইলার তিন বছর পর ভেঙে যাওয়া ভয়াবহ পবনা বাঁধ, হারেজখালি, পদ্মপুকুর, শিকারিবাড়ি, পাথরখালি মেরামত হয়েছে। কিন্তু জলচ্ছ্বাসের ১০ টি বছর কেটে গেলেও উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ৬টি ইউনিয়নের কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৬০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত মাটি নেই। পাউবো কর্তৃপক্ষ মাটি না দেয়ায় বাঁধগুলোর সর্বত্র দুর্বল অবস্থা বিরাজ করছে।

কয়রা সদর ইউনিয়নের ৯নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, আইলার পর থেকে এ জনপদের মানুষের খাবার পানির তিব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে খাবার পানির জন্য প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানিয়েছে তিনি। উপজেলা জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ অদ্রিশ আদিত্য মন্ডল বলেন, আইলার ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে বিশেষ বরাদ্দে দিয়ে কয়রাকে পূর্বের ন্যায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে উপকুলীয় এলাকা ব্যাপক ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানায়।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙা উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা, কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬নং কয়রা, ৪নং কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, ঘাটাখালি, হরিণখোলা, মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকার বেড়িবাঁধগুলো অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এসব বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে আবারো গোটা উপজেলা লোনা পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, আইলার ক্ষতি এখনও কেটে উঠা সম্ভব হয়নি। কয়রা সবচেয়ে বড় সমস্যা বেড়িবাঁধ। টেকসই বেড়িবাধ নির্মাণ না করা হলে আতংক কাটবেনা এ জনপদের মানুষের। পাউবোর আমাদী উপ-বিভাগীয় শাখা কর্মকর্তা মো. মশিউল আবেদিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বাঁধে মাটির কাজ চলছে। তা ছাড়া ভাঙনকবলিত অনেক এলাকায় টেন্ডার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে খুব তাড়াতাড়ি কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া সম্প্রতি যে সকল বাঁধ ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে সেগুলো মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহ বলেন, আইলা বিধ্বস্ত কয়রা এলাকার মানুষের ভাগ্যে উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা করা হচ্ছে। কয়রা উপজেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলার সবথেকে বড় সমস্যা বেড়িবাঁধ সংস্কার, সে ব্যাপারে কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close