নেত্রকোনা প্রতিনিধি

  ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

লেখাপড়া ব্যাহত, প্রশাসন উদাসীন

কালভার্টের মুখ বন্ধ করে ফিশারি বিদ্যালয়ের চারদিকে জলাবদ্ধতা

নেত্রকোনা সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মেয়ারগাতী গ্রামে কালভার্টের মুখ বন্ধ করায় সুরাইয়া আব্বাছ ডিএমসিসি উচ্চবিদ্যালয়ের চারদিকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। দেখে মনে হয় বিদ্যালয়টি যেন পানির ওপর ভাসছে। এতে করে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি দিন দিন কমছে ও লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে কেন্দুয়া সড়কের পাশে ১৯৯৬ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়। বিদ্যালয়টিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ২৬৫ জন এলাকার ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করে। গত দুই বছর ধরে বিদ্যালয়টির বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য সড়কের কালভার্টের মুখ বন্ধ করে গত প্রায় তিন বছর আগে জনৈক প্রভাবশালী মাহফুজুর রহমান ফিসারি স্থাপন করেন। এতে করে গত দুই বছর ধরে সামান্য বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়টির চারদিকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয়ের চলাচলের রাস্তা, দক্ষিণ পাশের টিন সেডে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠদান কক্ষ, শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ পানিতে ডুবে থাকে। পানি কমলেও টিন শেড কক্ষটি স্যাতস্যাতে থাকে। এতে করে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়। খেলার মাঠ পানিতে ডুবে থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারে না। এই অবস্থা বর্ষকালে প্রায় ৬ মাস ধরে থাকে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ছাড়াও জলাবদ্ধতার কারণে ইউনিয়নের মেয়ারগাতী, চন্দনকান্দি, ধাওয়াপাড়া গ্রামের বিস্তৃর্ণ এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে করে ওই তিনটি গ্রামের ৫ শতাধিক একর জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এলাকার কৃষকরা বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সাক সবজি ও মৌসুমি ফসল। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি প্রবেশ করছে এলাকার ঘরবাড়িতে। তিন গ্রামের মানুষের চলাচলে অনুবিধে হচ্ছে।

সরজমিনে বিদ্যালয়ে গতকাল শনিবার গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথে হাঁটু পানি, খেলার মাঠে পানিতে থৈ থৈ করছে। হাঁটু পানি মাড়িয়ে কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে জরজীর্ণ টিন শেড ঘর। শ্রেণি কক্ষে মাত্র ৪০-৫০ জন শিক্ষার্থী স্যাত স্যাতে ঘরে বসে ক্লাস করছে। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষকের বসার কোনো চেয়ার নেই। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় করে চলাচল করছে এলাকার মানুষ ও শিক্ষার্থীরা।

সুরাইয়া আব্বাছ ডিএমসিসি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম, জাকিয়া সুলতানা, মো. পারভেজ উদ্দিন সবাই বলেন, বিদ্যালয়ের এই অবস্থার জন্য ছাত্রছাত্রী কমে যাচ্ছে। তারপর দীর্ঘদিন পানি জমে থাকার কারণে পানিতে জোক রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে বিদ্যালয়ে আসে না। খেলার মাঠে পাপজি জমে থাকায় ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে পারছে না। বিষয়টি ফিসারির মালিক দেখার পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। একটু ভারী বর্ষণ হলেই পানিতে পাশের টিন শেড ঘরটি তলিয়ে যায়। তখন আরো ঘরে লেখাপড়া করানো সম্ভব হয় না।

এলাকাবাসী এমদাদুল হক বলেন, গ্রামের সামনে (নেত্রকোনা-কেন্দুয়া সড়কের পূর্ব পাশে) ফসলি মাঠে পানি নেই। পানি না সরার কারণে সড়কের ভেতরে বিদ্যালয়টিতে পানি জমে আছে প্রায় তিন মাস ধরে। ভারী বৃষ্টি হলেই পাশের টিন শেড ঘরে পানি প্রবেশ করে ভিটি তলিয়ে যায়।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আহমাদুল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে কালভার্টের মুখ বন্ধ করে ফিসারি করার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের কাজ হচ্ছে না। এতে করে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি নূরুজ্জামন বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা এলাকাবাসী বসেছিলাম। এলাকার কয়েকজন মাতবর দায়িত্ব নিয়ে ফিসারি মালিকের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মীমাংসা করবে বলে জানান। সমাধান না হলে পরবর্তীতে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফিসারির মালিক মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতার বিষয়টি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close