জাবি প্রতিনিধি

  ১৬ জানুয়ারি, ২০২২

অটোরিকশা নিষিদ্ধ

জাবিতে বদলে গেছে সড়কের চিত্র

সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর আহতের জেরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়কের চিত্র বদলে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেপরোয়া চলাচলের অভিযোগ থাকা এই যানবাহনের দৌরাত্ম্য। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন সচেতন শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ এ জাতীয় কয়েকটি যানবাহন নিষিদ্ধের কথা জানানো হয়। এরপর থেকে গত কয়েক দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়কে অটোরিকশাসহ সেসব যানবাহন চলতে দেখা যায়নি।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইঞ্জিনচালিত রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের ফলে আশঙ্কাজনক হারে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারি আহত হচ্ছেন। এজন্য এসব ইঞ্জিনচালিত যানবাহন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হলো। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদিত পায়ে চালিত রিকশা চলাচল করতে পারবে।

এ ছাড়া যানবাহন সংকট এড়াতে বাস সার্ভিস চালুর কথা জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। প্রতিদিন দুটি বাস সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় পৃথক দুটি রুটে চলাচল করবে বলেও জানানো হয়।

গত কয়েক দিন বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সড়কেই ব্যাটারিচালিত রিকশা বা নিষিদ্ধ ঘোষিত অন্য যানবাহন চলছে না। তবে হাতেগোনা কয়েকটি পায়ে চালিত রিকশা চলতে দেখা গেছে বিভিন্ন সড়কে। রবিবার সকালে যাত্রীসমেত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামনগর বাজারসংলগ্ন ফটক দিয়ে প্রবেশের অপেক্ষায় ছিল কয়েকটি রিকশা। পরে দায়িত্বরত প্রহরীর বাধায় ফিরে যায় সেগুলো। তবে বিশ মাইল গেট থেকে পানধোয়া পর্যন্ত সড়কে রিকশা চলছে। বিশ মাইল গেট থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের মধ্যবর্তী চৌরাস্তার কাছে কৃত্রিম ব্যারিকেড চোখে পড়েছে। মূলত রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনের প্রবেশ ঠেকাতেই এই ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়েছে। এই ব্যারিকেডের কাছেই অপেক্ষায় রয়েছে দুটি একতলা সবুজ রঙের বাস। এগুলোই শিক্ষার্থীদের যানবাহনের ঘাটতি মেটাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রদক্ষিণ করছে।

গতকাল মঙ্গলবার শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে কথা হয় রিকশাচালক মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। সাভার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পায়েচালিত রিকশা চালাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আগে অটোরিকশার চাপে এখানে আসতে পারতাম না। এখন অটোরিকশা বন্ধ হওয়ায় কয়েক দিন ধরে আসতাছি। তবে ভাড়া একটু কম কিন্তু যাত্রী অনেক আছে।

পায়েচালিত রিকশা বেশি নিরাপদ মন্তব্য করে এই চালক বলেন, ‘আমি ১৪-১৫ বছর ধরে এই বাংলা রিকশা (পায়েচালিত রিকশা) চালাচ্ছি। এইডাই নিরাপদ। ওরা (অটোরিকশা) তো পারলে গাড়ির আগে উইড়া যায়।’

এদিকে সম্প্রতি সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। পরে ওই শিক্ষার্থীকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। এরপরই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধের জোর দাবি ওঠে। এ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিও পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এমন প্রেক্ষাপটে অটোরিকশাসহ কয়েকটি যানবাহন নিষিদ্ধ করায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে এ নিয়ে আলোচনা চলছে বিস্তর। ব্যক্তিগত ওয়ালেও এই খবর প্রচারের পাশাপাশি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। যদিও অটোরিকশা চলাচলের পক্ষেও মত রয়েছে অনেকের।

আশরাফুল নাহার ইলা নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর মন্তব্য, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা ছাড়া রাস্তায় হেঁটে অনেক শান্তি পাচ্ছি। ক্যাম্পাসে আগে আতঙ্ক নিয়ে হাঁটতাম। আসলেই ব্যাটারিচালিত রিকশার গতি ক্যাম্পাসের জন্য উপযোগী না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এস্টেট) ও মুখ্য উদযানতত্ত্ববিদ মো. নুরুল আমিন বলেন, এটা ভালো একটা পদক্ষেপ হয়েছে। এখন সবাই নিরাপদে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারবে। পরিবেশ ভালো থাকবে। হাঁটার অভ্যাসও তৈরি হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আগে অটোরিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য নিবন্ধন দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আশপাশের অনেক চাপের কারণে সেটা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এখন পায়েচালিত যেসব রিকশার নিবন্ধন রয়েছে, তাদের ডাকতে হবে। প্রয়োজনে পায়েচালিত আরো রিকশার ফ্রি নিবন্ধন দিতে হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close