ক্রীড়া ডেস্ক

  ১০ মে, ২০২৪

বায়ার্নের দপচূর্ণ

রাজসিক প্রত্যাবর্তনে ফাইনালে রিয়াল

পুরো ম্যাচেই দুর্দান্ত সব সেভ করে বায়ার্ন মিউনিখকে ম্যাচে রাখেন গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়ার। সেই নয়ারই শেষ দিকে করলেন শিশুসুলভ ভুল। তার হাত থেকে ছিটকে যাওয়া বলে গোল আদায় করে নেন হোসেলু। এর কিছুক্ষণ পর অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে করেন আরো একটি। তাতেই ফাইনালের টিকিট পেয়ে যায় স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। বুধবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বায়ার্ন মিউনিখকে ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় প্রথম লেগের ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র হয়েছিল। ফলে ৪-৩ ব্যবধানের অগ্রগামিতায় জয় পায় রিয়াল।

ম্যাচে এদিন শুরু থেকেই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে খেলতে থাকে দুদল। ম্যাচের পাঁচ মিনিটে দানি কারবাহালের ক্রসে সতীর্থ কেউ পা ছোঁয়াতে পারলেও এগিয়ে যেতে পারত রিয়াল। তিন মিনিট পর প্রায় একই ধরনের ক্রস দিয়েছিলেন সার্জ নাব্রিও। তবে হ্যারি কেইন পা ছোঁয়াতে পারেননি। ১৩ মিনিটে তো দুর্দান্ত নয়ার। দুটি দারুণ সেভ করেন তিনি। ডি-বক্স থেকে নেওয়া ভিনিসিয়াস জুনিয়রের শট তার হাতে লেগে বারপোস্টে লেগে ফিরে আসে। তবে ফিরতি বল শট নিয়েছিলেন রদ্রিগো। তার শটও দারুণ দক্ষতায় আটকে দেন এই জার্মান গোলরক্ষক। ২৮ মিনিটে হ্যারি কেইনের ভলি ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান রিয়াল গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিন। ১১ মিনিট পর টনি ক্রুসের ক্রসে নাচোর শট এক ডিফেন্ডার না আটকালে গোল পেতে পারত রিয়াল।

৫৪ মিনিটে কেইনের শট ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন লুনিন। পরের মিনিটে ভিনির ক্রস থেকে রদ্রিগোর শট বারপোস্ট ঘেঁষে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫৯ রদ্রিগোর ফ্রি-কিক ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন নয়ার। পরের মিনিটে ভিনির শটও আটকে দেন এই গোলরক্ষক। ৬৬ মিনিটে জামাল মুসিয়ালার দারুণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন লুনিন। দুই মিনিট পর আর আলফান্সো ডেভিসকে আটকাতে পারেননি রিয়াল গোলরক্ষক। কেইনের ক্রস থেকে রুডিগারকে কাটিয়ে দূরের পোস্টে জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই কানাডিয়ান। ৭২ মিনিটে বায়ার্নে জালে বল জড়িয়েছিল রিয়াল। তবে কিমিখকে নাচো ফাউল করায় গোল মিলেনি। চার মিনিট পর ভালো সুযোগ পেলেও লক্ষ্যে রাখতে পারেননি কেইন। ৮৩ রুডিগারের থ্রু বলে একেবারে ফাঁকায় ভিনির শট লক্ষ্যে থাকেনি।

৮৮ মিনিটে সমতায় ফেরে রিয়াল। ভিনির শট লুফে নিতে পারেননি নয়ার। আলগা বলে হোসেলুর শট জালে জড়ালে উল্লাসে মারে স্বাগতিকরা। যোগ করা সময়ে ফের হোসেলুর গোল। অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে রুডিগারের ক্রস থেকে দারুণ ভলিতে বল জালে পাঠান এ স্প্যানিশ ফরওয়ার্ড।

এদিকে এক মৌসুমের জন্য ধারে ১২ বছর পর রিয়াল মাদ্রিদে খেলতে আসা হোসেলু নায়কে পরিণত হলেন। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল নিশ্চিত করার মঞ্চে তিনি কেড়ে নিলেন সব আলো। জোড়া গোল করে খাদের কিনারায় থাকা দলকে নাটকীয়ভাবে পৌঁছে দিলেন কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়।

ম্যাচের পর স্প্যানিশ স্ট্রাইকার বললেন, তার সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্নও এতটা আনন্দদায়ক ছিল না। প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক মানুয়েল নয়্যারের ভুল ও বদলি ফরওয়ার্ড হোসেলুর নৈপুণ্যে অসাধারণ প্রত্যাবর্তনের আরেকটি অবিশ্বাস্য গল্প লিখেছে দলটি। অথচ আলফোনসো ডেভিসের গোলে ম্যাচের ৮৮ মিনিট পর্যন্ত পিছিয়ে ছিল স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা।

৮১ মিনিটে ফেদেরিকো ভালভার্দের পরিবর্তে মাঠে নামা হোসেলু রিয়ালকে সমতায় ফেরাতে নেন মাত্র আট মিনিট। ভিনিসিয়াসের সোজাসুজি দুর্বল শট ঠেকাতে গিয়ে তালগোল পাকান নয়্যার। জার্মান গোলরক্ষকের অমার্জনীয় ভুলের সুযোগে আলগা বল জালে জড়িয়ে দেন হোসেলু। তারপরের গোল আসে স্রেফ তিন মিনিট পর। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে বাঁ দিক থেকে অ্যান্টোনিও রুডিগারের গোলমুখে বাড়ানো বল টোকা দিয়ে জালে পাঠান ৩৪ বছর বয়সি ফরওয়ার্ড।

ম্যাচের পর অবশ্য নিজেকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ভাবতে রাজি হননি হোসেলু। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নানা বাঁক পেরিয়ে রিয়ালে ফিরে আসা ফুটবলার আরো একবার তুলে ধরেন ক্লাবটির অদম্য মানসিকতা, ‘নায়ক বা এরকম কিছু একদমই বুঝি না, তবে আমি খুবই খুশি- আমাকে দেখে ধারণা করে নিতে পারেন। অবিশ্বাস্য ছিল এটি, অসাধারণ কিছু। এই দল কখনোই হাল ছাড়ে না। শেষ পর্যন্ত লড়াই করাটা দলের রক্তেই আছে এবং আজ আমরা সেটাই করেছি।’

যুব দলের ধাপ পেরিয়ে ২০১১ সালে রিয়ালের মূল দলের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল হোসেলুর। বদলি নেমে গোলও পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই এক ম্যাচেই থমকে যায় রিয়ালে তার প্রথম অধ্যায়। কারণ তারকায় ঠাসা দলটিতে সেসময় ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা ও গঞ্জালো হিগুয়েইনের মতো ফরওয়ার্ডরা। এরপর বহু বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এই মৌসুমে এস্পানিয়ল থেকে ধারে ফের রিয়ালে ঠাঁই পান হোসেলু। নিয়মিত মাঠে নামার সুযোগ না মিললেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন তিনি।

তবে বায়ার্নের বিপক্ষে চোখধাঁধানো পারফরম্যান্সে আগের সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছেন হোসেলু। ম্যাচশেষে কোচ আনচেলত্তি ও সতীর্থ জুড বেলিংহ্যামের কাছ থেকে ভূয়সী প্রশংসা পাওয়া স্ট্রাইকার অবশ্য এমন কিছু কল্পনাতেও আনতে পারেননি, ‘এই ধরনের পারফরম্যান্সের স্বপ্ন সবাই দেখে। কিন্তু আজ যা হলো, আমার সুন্দরতম স্বপ্নেও কখনো এটা ভাবতে পারিনি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close