ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ১৯ জুন, ২০২২

ক্যারিবীয়দের থামিয়ে লড়ছে টাইগাররা

ক্যারিবীয় সফরে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়েছে বাংলাদেশকে। অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে গুটিয়ে গেছে টাইগাররা। সেই দুঃস্মৃতি ভুলে দ্বিতীয় দিন কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে সফরকারীরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ১১২ রানে পিছিয়ে সফরকারী বাংলাদেশ।

অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টেস্টের প্রথম দিনই অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর নিজেদের ইনিংস শুরু করে দিন শেষে ২ উইকেটে ৯৫ রান করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তখনো ৮ রানে পিছিয়ে ছিল ক্যারিবীয়রা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ৪২ ও এনক্রুমার বোনার ১২ রানে অপরাজিত ছিলেন।

দ্বিতীয় দিনের সপ্তম ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে লিড এনে দেন ব্র্যাথওয়েট। তবে দিনের দশম ওভারে উইকেট শিকারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। পেসার খালেদ আহমেদের ডেলিভারি ঠিকঠাক খেলতে পারেননি বোনার। বল তার ব্যাট ছুঁয়ে প্রথম সিøপে যাওয়া বল মিস করেন শান্ত। উইকেট শিকারের সুযোগ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ।

পরের ওভারে ১৭৪তম বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ব্র্যাথওয়েট।

অধিনায়কের ধৈর্যশীল হাফ-সেঞ্চুরির পর বিদায় নেন বোনার। বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আর্ম বলের ডেলিভারিতে বোল্ড হন ২৩ রানে জীবন পাওয়া বোনার। শেষ পর্যন্ত ৩টি চারে ৩৩ রান করেন বোনার। তৃতীয় উইকেটে ব্র্যাথওয়েট-বোনার জুটি ৬২ রান যোগ করেন।

জার্মেই ব্ল্যাকউডকে সঙ্গে নিয়ে দলের রানের চাকা সচল রাখেন ব্র্যাথওয়েট। ফলে ৩ উইকেটে ১৫৯ রান তুলে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

বিরতি থেকে ফিরে পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের দুই ওভারে ১টি করে বাউন্ডারি মারেন ব্র্যাথওয়েট-ব্ল্যাকউড। ৯০তম ওভারে ব্র্যাথওয়েটকে তুলে নেন খালেদ। খালেদের হালকা ইনসুইংয়ের বল সামলাতে না পেরে লেগ বিফোর আউট হন ব্র্যাথওয়েট। তবে রিভিউ নেননি ব্র্যাথওয়েট। নাভার্স-নাইন্টিতে আউট হয়ে ৬ রানের জন্য টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি মিস করেন ব্র্যাথওয়েট। ৪০০ মিনিট ক্রিজে থেকে ৯টি চারে ২৬৮ বল খেলে ৯৪ রান করেন তিনি। এই নিয়ে পঞ্চমবার নাভার্স-নাইন্টিতে আউট হলেন ব্ল্যাকউডের সঙ্গে ৬৩ রান করা ব্র্যাথওয়েট।

অধিনায়কের বিদায়ের পর বাংলাদেশ বোলারদের বিপক্ষে স্বাচ্ছেন্দ্যে খেলেছেন ব্ল্যাকউড ও কাইল মায়ার্স। মায়ার্সকে ৭ রানে লেগ বিফোর আউট করে ইনিংসে প্রথম উইকেটের দেখা পান স্পিনার মিরাজ। রিভিউ নিয়ে মায়ার্সকে ফেরায় বাংলাদেশ।

মায়ার্স ফেরার পর বাউন্ডারি দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ব্ল্যাকউড।

নিজের প্রথম উইকেট শিকারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক জশুয়া ডা সিলভাকে ১ ও আলজারি জোসেফকে খালি হাতে বিদায় দেন মিরাজ। দুজনই উইকেটের পেছনে নুরুলকে ক্যাচ দেন।

মিরাজের জোড়া আঘাতের পর উইকেট শিকারের আনন্দে মাতেন পেসার এবাদত। কেমার রোচকে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় দেন এবাদত।

১৫ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে আড়াইশর নিচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকে দেওয়ার পথ তৈরি করেন মিরাজ ও এবাদত। তবে ৩টি চারে দলের রানকে আড়াইশ পার করেন মতি।

তারপরও যত দ্রুত সম্ভব ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ ২ উইকেট তুলে নিতে মরিয়া ছিল বাংলাদেশ। অবশেষে মিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে ব্ল্যাকউডকে থাকায় বাংলাদেশ। খালেদের করা বলে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ২১৩ মিনিটে ১৩৯ বল খেলে ৯টি চারে ৬৩ রান করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সহ-অধিনায়ক ব্ল্যাকউড।

ব্ল্যাকউডকে শিকারের পরের ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের ইতি টানেন মিরাজ। শেষ ব্যাটার জেইডেন সিলেসকে ১ রানে থামান তিনি। ২৬৫ রানে অলআউট হয় ক্যারিবীয়রা। ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন মতি। মিরাজ ৫৯ রানে ৪টি, খালেদণ্ডএবাদত ২টি করে উইকেট নেন। মুস্তাফিজুর-সাকিবের শিকার ছিল ১টি করে।

১৬২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি আদায় করেন তামিম ইকবাল। তৃতীয় ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি আসে মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাট থেকে। আর অষ্টম ওভারে পরপর দুই বলে চার মারেন তামিম। এতে দলের স্কোর বিনা উইকেটে ২৭ অতিক্রম করে। সর্বশেষ তিন ইনিংসে এমনটা দেখা যায়নি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৫ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রানে ৪ উইকেট ও চলমান টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ।

তামিম-জয়ের সাবধানি শুরু ৩৩ রানে থমকে যায়। জোসেফের আউট-সুইং ডেলিভারি উইকেটরক্ষক জশুয়া তালুবন্দি করলে ৪টি চারে ৩১ বলে ২২ রানে থামে তামিমের ইনিংস। তামিমের আউটের পর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে তিন নম্বরে নামেন মিরাজ। প্রথম ইনিংসে ২২ বলে ২ রান করা মিরাজ, এবার ৬ বলে ২ রান করেন। জোসেফের অফ-স্টাম্পের বল ব্যাকফুটে খেলে প্রথম সিøপে মায়ার্সকে ক্যাচ দেন মিরাজ। দলীয় ৩৫ রানে মিরাজ ফেরার পর দিনের বাকি সময়ে আর কোনো উইকেট পড়তে দেননি জয় ও শান্ত। ৫০ বল খেলে ১৫ রান যোগ করেন তারা। জয় ১৮ ও শান্ত ৮ রানে অপরাজিত আছেন। জোসেফ ২ উইকেট নেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close