জহির টিয়া

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

অঙ্ক স্যার কি ভূত হয়ে গেলেন

রাত প্রায় এগারোটা। রাতের খাবার খেয়ে অঙ্ক করার জন্য বসেছি। বেশ কয়েকটা অঙ্ক ইতিমধ্যে করেও ফেলেছি। কিন্তু একটা অঙ্ক কিছুতেই মেলাতে পারছি না। কোনোভাবেই মাথায় আনতেও পারছি না। আগামী সপ্তাহ থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু। তাই পড়াশোনার চাপও বেশি। মা বলেছেন, পরীক্ষা শেষ হলেই শহরে মামার বাসায় বেড়াতে নিয়ে যাবে। এই আনন্দে পড়াশোনাটাও ঠিকঠাক চলছে।

যখন অঙ্কটা কিছুতেই মেলাতে পারছি না, ঠিক তখনই মনে হলো- স্যারের কাছে গিয়ে সমাধান করে নিয়ে আসি। যেই ভাবনা সেই কাজ। অঙ্ক স্যারের বাড়িটা আমাদের গ্রামের শেষ সীমানায়। স্যার, একটু-আধটু লেখালেখি করেন। তাই আশা করলাম, স্যার অবশ্যই জেগে আছেন। তা ছাড়া স্যারও অনেক দিন ক্লাসে বলে থাকেন। তিনি এখনো অনেক রাত জেগে বিভিন্ন বই পড়ে থাকেন।

স্যারের বাড়ি মূলগ্রাম ছেড়ে একটু দূরে। যেতে একটা সরু পথ। সেই পথটুকু পার হতে হেঁটে যেতে মিনিট দু-এক লাগবে।

মা-বাবাকে না জানিয়ে স্যারের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলাম। বাম হাতে বই-খাতা। আর ডান হাতে একটা ছোট্ট টর্চ লাইট। লাইটে খুব বেশি আলো দেয় না। মিটমিটে আলোতেই

পথ দেখে চলছি। পথ ছাড়া কোনো দিকে আলো ছটকাচ্ছি না। সরু পথে ঢুকতেই

গা ছমছম করে উঠল। একটু ভয়-টয় কাজ করতে লাগল। কিন্তু মনের জোর ছিল তাই

ভয় কাটিয়ে হেঁটেই চললাম। হেঁটে চলেছি

বেশ দ্রুত গতিতে। কিন্তু মনে হচ্ছে, অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছি। দুই মিনিটের পথ তবুও শেষ হচ্ছে না।

মনে মনে এ-ও ভাবলাম, আমি কি ভুল পথে চলে এসেছি! কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। কারণ, এই একটাই পথ স্যারের বাড়ি যাওয়ার, যা হোক একসময় ঠিকই স্যারের বাড়ি পৌঁছে গেলাম।

স্যার যে ঘরে থাকেন সেই ঘরের সামনে গিয়ে স্যার, স্যার বলে ডাক দিলাম। আমার ডাক শুনে স্যার দরজা খুলে দিলেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে স্যারকে সালাম দিলাম। স্যার উত্তর দিলেন কি না শুনতে পেলাম না। স্যার শুধু হাত ইশারায় আমাকে ভেতরে ঢুকতে বললেন। তারপর চেয়ার দেখিয়ে বসতে বললেন।

আমি যেন স্যারকে আগেই ফোন করে এসেছি, স্যারের কার্যক্রম দেখে বোঝা গেল। কিন্তু আমার কাছে তো ফোন নেই। ফোন করে আসব কেমনে! বাবার একটা ছোট্ট বাটন মোবাইল ফোন থাকলেও বাবার কাছে হতে নিয়ে ফোন করে আসিনি। কারণ, তখন তো মা-বাবা ঘুমিয়ে পড়েছিল।

স্যার বললেন, তোমার কোন অঙ্কে সমস্যা? বের করো।

বই খুলে স্যারকে অঙ্কটা দেখিয়ে দিলাম। স্যার খাতাণ্ডকলম নিয়ে অঙ্কটি করে বুঝিয়ে দিলেন। তাতে আমার যে ঘাটতি ছিল, তা সহজেই সমাধান পেয়ে গেলাম। আমিও বেশ খুশি হলাম।

আবার স্যার বললেন, আর কোনো অঙ্কে সমস্যা আছে?

না স্যার। আপাতত নেই। সমস্যা হলে আবার আসব।

ঠিক আছে। বলেই স্যার বিছানা ঠিকঠাক করতে লাগলেন। আর আমি স্যারের ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে লাগলাম। বাড়ি এসে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটা বাজছে। তার মানে রাত তিনটা! সময় দেখে আমি বেশ আশ্চর্য হলাম। বই-খাতা টেবিলে রেখেই শুয়ে পড়লাম। বেশ কিছু সময় পার হলেও ঘুম আসছে না।

শুধুই মনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে- স্যারকে আজ এমন কেন লাগল? স্যার তো অনেক হাসিখুশি মানুষ। স্যারের কাছে গেলে কখনই বিরক্ত হতে দেখিনি। স্যারের কাছে গেলে, স্যার তো আরো খুশি হয়ে বেশ আগ্রহ নিয়ে অঙ্কের সমাধান করে দেন। কিন্তু স্যারকে, আজ কেমন যেন লাগল! কণ্ঠস্বরও আলাদা, কর্কশ লাগল। মনে হলো, স্যার আমার ওপর রাগ করে আছেন। ভালোভাবে কথা বললেন না। তাহলে কি এত রাতে যাওয়ায় স্যার বিরক্তবোধ করলেন। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। সকালে মায়ের ডাকে যখন ঘুম ভাঙল তখন সকাল নয়টা। আমি কখনোই এত দেরি করে উঠি না। যা হোক, তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে স্কুলে গেলাম। প্রথম পিরিয়ডে অঙ্ক ক্লাস। কিন্তু অঙ্ক স্যার না এসে, এলেন বাংলার ম্যাডাম। ম্যাডাম এসেই বললেন, আজকে তোমাদের অঙ্ক ক্লাসটা পরের ঘণ্টায় হবে। কারণ, তোমাদের অঙ্ক স্যার ছুটিতে আছেন। তার বিশেষ কাজে ঢাকা গেছেন।

ম্যাডামের কথা শুনে জানতে চাইলাম, ম্যাম, স্যার কবে গেছেন?

ম্যাম বললেন, গত বৃহস্পতিবার স্কুল ছুটির পর।

ম্যামের কথা শুনে তো আমার চক্ষুচড়ক। রাতে যে স্যারের কাছে অঙ্ক করে এলাম। তবে কী তিনি স্যার ছিলেন না! মনে মনে বেশ ধাক্কা খেলাম। কিন্তু কারো সঙ্গে শেয়ার করার সাহস হলো না। এই কথা বলতে যদি আমাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করে দেয়। আমাকে বেশ ভাবনায় দেখে ক্লাসমেট ফাহিম জিজ্ঞেস করল, কী রে জুনাইদ। কী ভাবছিস?

না কিছু না। বলে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ক্লাসে মন বসছিল না। শুধু ভাবনা জুড়ে রাতের ঘটনা। তাহলে আমাকে রাতে কে অঙ্ক করে দিলেন! স্যারের তো কোনো ভাইও নেই। তাহলে কী স্যারের রূপ ধরে ভূত-টুতে আমাকে অঙ্ক করে দিল। এ কী করে সম্ভব! তবে কি স্যার ভূত হয়ে

গেলেন?

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close