আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৩ জুন, ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ ৪ পুলিশ

বিক্ষোভ দমাতে ট্রাম্পের সেনা মোতায়েনের হুমকি

জর্জ ফ্লয়েড হত্যকান্ড

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের হেফাজতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া হুশিয়ারি সত্ত্বেও রাস্তায় নেমেছেন হাজার হাজার মানুষ। ইতোমধ্যেই দেশটিতে গুলিতে চার পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, সোমবার রাজ্যের অন্তত ২০টি জায়গায় গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। সোমবার সেন্ট লুইসে চার পুলিশ সদসস্যের ওপর গুলি চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। রাতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় তারা আহত হন। তাদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত হলেও সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই বিক্ষোভ দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগের হুশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রাম্প জানান, শহর ও রাজ্যগুলোতে যদি বিক্ষোভকারীরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী পাঠানো হবে ও সমস্যার সমাধান করা হবে। হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘দাঙ্গা, লুটপাট, ভাঙচুর, হামলা এবং সম্পত্তির অযথা ধ্বংস বন্ধে হাজার হাজার ও ভারী সশস্ত্র সৈন্য, সামরিক কর্মী এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের পাঠাচ্ছি।

এর আগে গত ২৫ মে মিনেয়াপোলিসে ৪৬ বছর বয়সি জর্জ ফ্লয়েড স্থানীয় পুলিশের হাতে নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সহিংসতা শুরু হয়। যেখানে সাত দিন থেকে চলতে থাকা এই বিক্ষোভের কারণে বড় বড় সব শহরেই কারফিউ জারি করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে লকডাউন দেয়া হয়। আর ওয়াশিংটন ডিসি লকডাউনের সময়সীমা আরো দুই রাত বাড়িয়ে দেয়।

তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে সহসাই এই আন্দোলন থামছে না। মূলত রাস্তায় ফ্লয়েডকে আটক করে তার ঘাড়ে পুলিশ হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে রাখার ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পরই আন্দোলন শুরু হয়।

এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত অফিসার ডেরেক শাওভিনের ওপর ইতোমধ্যে তৃতীয় মাত্রার হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং তাকে আগামী সপ্তাহে আদালতে ওঠানো হবে। এছাড়া অভিযুক্ত আরো তিন পুলিশ অফিসারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবারই অবশ্য অফিসিয়াল ময়না তদন্তে নিশ্চিত করা হয়, ফ্লয়েডকে হত্যা করা হয়েছে।

এর আগে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, শুক্রবার রাতে নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রায় এক ঘণ্টা বাঙ্কারে অবস্থান করেন ট্রাম্প। দেশব্যাপী বিক্ষোভের জেরে শনিবার রাতেও প্রেসিডেন্টকে বাঙ্কারে নেওয়া হয় কিনা সে ব্যাপারে প্রতিবেদনে কিছু জানানো হয়নি। জর্জ ফ্লয়েড নিহতের ঘটনায় শনিবারেই সবচেয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।

ফ্লয়েড হত্যার শিকার হয়েছেন : আনুষ্ঠানিক ময়নাতদন্তে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে ‘হত্যাকা-’ (হোমিসাইড) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্রে জানিয়েছে, পুলিশি নির্যাতনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ওই আফ্রিকান আমেরিকান। এদিকে ফ্লয়েডের পরিবারের উদ্যোগে সম্পাদিত এক বেসরকারি ময়নাতদন্তেও দেখা গেছে, পুলিশ ঘাড় চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার কারণেই মৃত্যু হয়েছে তার। প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার গলায় হাঁটু চেপে ধরায় ফ্লয়েড নিঃশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার বলছেন, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না’। ওই ঘটনায় অফিসার ডেরেক চাওভিনের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত বা বেআইনি হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাকে আদালতে তোলা হবে। এছাড়া তিন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পুলিশ আটক করলে ৪৬ বছরের ফ্লয়েড হৃদরোগে আক্রান্ত হন। মৃত্যুর কারণ হিসেবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের গলায় চাপ বা আটকে ধরার কারণে দম বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কথা উল্লেখ করা হয়। ময়নাতদন্তে জর্জ ফ্লয়েডের হৃদরোগ ও সাম্প্রতিক মাদক গ্রহণের প্রমাণও পাওয়া গেছে। তদন্ত কর্মকতারা জানান, পুলিশ অফিসার চেপে ধরলে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর আগে ফ্লয়েডের পরিবারের পক্ষ থেকে আরেকটি পরীক্ষা করা হয়। সেখানে বলা হয় পুলিশ গলা ও ঘাড়ে চাপ প্রয়োগ করায় তিনি অক্সিজেন চলাচলের বাধাজনিত অ্যাসফিক্সিয়ায় আক্রান্ত হন। পরিবারের নিযুক্ত আইনজীবী বেঞ্জামিন ক্রাম্প বলেন, পুলিশ ডেরেক চাওভিন যদি ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চাপা না দিতেন ফ্লয়েড বেঁচে থাকতেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close