অধ্যাপক ডা. সুকুমার মুখোপাধ্যায়
ডেঙ্গু জ্বরে অ্যাসপিরিন খেলে বিপদ বাড়বে
যখন-তখন বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরম, এডি ইজিপ্টা আর অ্যানোফিলিস মশাদের বাড়বাড়ন্তের জন্য আদর্শ আবহাওয়া। সঙ্গে জোট বাঁধে ডেঙ্গু আর ম্যালেরিয়ার জীবাণুরা। এই সময়টায় ভালো থাকার একটাই উপায় মশার হাত থেকে বাঁচা। শহরাঞ্চলের মানুষদের মশারির সঙ্গে আড়ি অনেক দিনের। তাই মশাবাহিত ডেঙ্গু আর ম্যালেরিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইদানীং ডেঙ্গু জ্বরের প্রবণতা খুব বেড়েছে। তাই জ্বর হলে ফেলে না রাখাই মঙ্গল।
সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে মাথাব্যথাসহ শরীরজুড়ে ব্যথার প্রবণতা থাকে। ডেঙ্গু জ্বরও তার ব্যতিক্রম নয়। একটা কথা মনে রাখতে হবে, সাধারণ জ্বর হলে গা হাত পা ব্যথা কমাতে অনেকেই আইব্রুফেন বা অ্যাসপিরিন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খান। কিন্তু বর্ষার দিনে ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তের সময় এ ধরনের ওষুধ ভুলেও খাবেন না। ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার হলে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠতে পারে।
জ্বর হলে অবশ্যই প্রথম দু-তিন দিনের মধ্যে এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে নেওয়া জরুরি। অবশ্য একই সঙ্গে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসাও করে যেতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। তাই জ্বর হলে জ্বরের ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বারে বারে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। পানি, শরবত, ফল, ফলের রস, পাতলা ঝোল, ডাল, স্যুপ ইত্যাদি খাবার বারে বারে খেতে হবে। ঘণ্টায় ঘণ্টায় পানি ও তরল খাবার খেলে ডিহাইড্রেশনের ভয় থাকবে না।
শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু প্রবেশ করেছে কি না পরীক্ষা করে জানা যায় তিন থেকে পাঁচ দিনের মাথায়। কিন্তু এর মধ্যে রোগীকে ঠিক রাখতে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো দরকার। অনেক সময় জ্বরের সঙ্গে পেটের গোলমাল ও বমি থাকতে পারে। তাই ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে। ডেঙ্গু সন্দেহ হলে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট করা আবশ্যক। এই প্রসঙ্গে একটা কথা জেনে রাখা দরকার যে, প্রথম দু-তিন দিনের মধ্যে এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন টেস্ট নেগেটিভ হলেই যে ডেঙ্গু জ্বর হয়নি তা বলা যায় না। দরকার হলে রিপিট টেস্ট করতে হয়। এ ছাড়া আইজিএম ও আইজিজি এলাইজা টেস্ট করাতে হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বর হলে অনেক সময় ব্লাড প্রেশার কমতে শুরু করে ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্তপাত হয়। এই অবস্থায় পৌঁছনোর আগেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া দরকার। তবে সব থেকে আগে প্রয়োজন ডেঙ্গুর মশা দমন করা। নিজেদের বাড়িতে তো বটেই, আশপাশে কোথাও পানি জমতে দেখলে সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে সেই অঞ্চলের পরিবেশের দিকে নজর রাখতে হবে। মশার লার্ভা দেখলেই তা বিনাশের ব্যবস্থা করা ভীষণভাবে জরুরি। ডেঙ্গুর সঙ্গে জমা পানিতে ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী মশারাও ডিম পাড়ে ও রোগ ছড়ায়। আমরা প্রত্যেকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকলে তবেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিকেল হলেই বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ করে দিলে মশার হাত থেকে কিছুটা রেহাই মেলে। আর মশারি টাঙিয়ে ঘুমনো বাধ্যতামূলক। তবেই ডেঙ্গু থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাবে।
"