ডা. মহসীন কবির
প্রচণ্ড গরমে হতে পারে হিটস্ট্রোক
চলছে ভয়াবহ গরম। এ গরমে প্রচন্ড রোদের তাপে মাঝে মধ্যেই আমরা শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ বোধ করি। যেমনÑ হঠাৎ মাথা ঝিমঝিম করা কিংবা চোখে ঝাপসা দেখাসহ বমি বমি ভাব হওয়া ইত্যাদি। আমরা সবাই জানি, এটি গরমের জন্য হচ্ছে এবং তা একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এ ধারণাটি ভুল। প্রচন্ড গরমের কারণে আমাদের যখন-তখন হতে পারে হিটস্ট্রোক, এমনকি মৃত্যুও। তাই এ গরমে আমাদের অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। আসুন জেনে নিই হিটস্ট্রোক নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যÑ
হিটস্ট্রোক কী?
প্রচন্ড গরমের কারণে আমাদের শরীর থেকে ঘাম ঝরে। আর এ ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যায় শরীরের প্রয়োজনীয় লবণ। লবণ ও পানির পরিমাণ কমে গিয়ে শরীরে তৈরি হয় ডিহাইড্রেশন। আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। যদি এটি ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায় তখনই হিটস্ট্রোক হতে পারে। আর দেহের এ তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে সূর্যের প্রখর তাপ ও ক্লান্তি থেকে। ডিহাইড্রেশন ও দেহের তাপমাত্রার তারতম্যই হলো হিটস্ট্রোকের প্রধান কারণ।
হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে যারা
ছোট বাচ্চা, প্রবীণ ব্যক্তি, যাদের দেহের ওজন অতিরিক্ত এবং যারা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ বেশি করেন, তারা প্রচন্ড গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। শিশু ও বাচ্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সাবধানে থাকতে হবে। কারণ তাদের দেহে তাপ নিয়ন্ত্রণ সিস্টেমটি বড়দের মতো নয়। তাই তারা বুঝতে পারে না তাদের দেহে তাপের তারতম্য ঘটছে।
হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পূর্ব লক্ষণ
* প্রচন্ড গরমে হঠাৎ ক্লান্তিবোধ হওয়া।
* প্রচন্ড তৃষ্ণা পাওয়া ও গলা শুকিয়ে মাথা ঘোরা।
* মাথা ঝিমঝিম করা ও বমি বমি ভাব হওয়া।
* মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা।
* দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেশি হওয়া।
* শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ও হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
* রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকা ও খিঁচুনি হওয়া।
হিটস্ট্রোকের প্রাথমিক জরুরি চিকিৎসা
* আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত ঠান্ডা জায়গায় নিতে হবে ও শরীরের ভারী জামাকাপড় খুলে দিতে হবে।
* আক্রান্ত রোগীকে পানি খাওয়াতে হবে। সম্ভব হলে ডাব ও স্যালাইনের পানি খাওয়াতে হবে।
* কিছুক্ষণ পরপর দেহের তাপমাত্রা দেখতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা কোনোভাবেই ১০১-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে রোগীর ঘাড়ের নিচে, হাতের তালুতে, পেটের নিচের অংশে বরফ দিতে হবে, যাতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়।
মনে রাখতে হবে, এ সময় আক্রান্ত রোগীকে কোনো ধরনের জ্বরের ওষুধ বা প্যারাসিটামল একেবারেই দেওয়া যাবে না। এতে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে।
* দেহের তাপমাত্রা ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে।
হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত না হওয়ার জন্য যা করণীয়
* প্রচন্ড গরমে কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করতে হবে।
* বেশি ঘাম ঝরলে ডাব বা স্যালাইনের পানি খেতে হবে।
* প্রচন্ড গরমে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
* ভারী কাজ করতে হলে কিছুক্ষণ পরপর স্যালাইনের পানি খেতে হবে।
* গরমে আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে। ভারী কাপড় বা কালো রঙের পোশাক পরা যাবে না।
* প্রয়োজনে দিনে দু-তিনবার গোসল করতে হবে।
* পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘সি’যুক্ত ফলমূল ও খাবার খেতে হবে।
* উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
লেখক : গবেষক
ইনচার্জ, ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন
বাংলাদেশ প্রবীণহিতৈষী সংঘ, ঢাকা
"