নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

ক্ষুদ্রঋণ প্রান্তিক মানুষের উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি

গোলটেবিলে বিশিষ্টজনরা

দেশে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থায় প্রান্তিক মানুষের জীবন মানে কোনো উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি। দারিদ্র্য থেকে মুক্তিও দিতে পারেনি। চড়া সুদে ঋণ নিতে নারীদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ব্যক্তিরা বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে

চেনাতে ক্ষুদ্রঋণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে পশ্চিমা বিশ্বকে সুযোগ করে দিচ্ছে। গতকাল শনিবার রাজধানীতে সম্পাদকদের শীর্ষ সম্পাদক এডিটরস গিল্ডের ‘ক্ষুদ্রঋণ বিতর্ক’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এমনটি বলেছেন বিশিষ্টজনরা। গোলটেবিল আলোচনা সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, দেশের টেকসই উন্নয়নে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গড়ে ১০ শতাংশ মানুষও তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি বরং দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্রে আটকে গেছে। গোষ্ঠীভিত্তিক ঋণ জামানত, চড়া সুদ, স্বল্প অর্থ- এসব দিয়ে এ দেশের মানুষকে আরো বেশি মানসিকভাবে ক্ষুদ্র করে তুলছে। ক্ষুদ্রঋণে আদায় মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়, বরং এ ব্যবস্থাকে আরো ঢেলে সাজানো উচিত। এটিকে টাকা ছড়ানোর কোনো মডেল না হয়ে স্থিতিশীল প্রকল্প হওয়া উচিত। ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ড. ইউনূস বাংলাদেশকে তার পরিচিত বাড়ানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন মাত্র।

অর্থনীতিবিদ কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, দারিদ্র্যবিমোচনের মডেল কতটা কাজ করে? সুদের হার, ঋণ দিয়ে পরের সপ্তাহে কিস্তির প্রেশার। রবীন্দ্রনাথ আদায়ে জোর দিতে পারেনি, কিন্তু কাবুলিওয়ালা পেরেছে। ১৯৭৪ সালে ব্র্যাক শুরু করেছে। গ্রুপভিত্তিক কাজ, সুদের হার, জামানত নেই কিন্তু এটা জামানত নিয়ে কাজ করেছে। কিন্তু গ্রুপ ঋণের ক্ষেত্রে বড় ঋণ হয়ে যায় তখন এটি কাজ করে না। ক্ষুদ্রঋণ থেকে ক্ষুদ্র চেষ্টা এটি বড় হতে দেয় না। সুদের হার চক্রাকারে বাড়তে থাকে। ঋণের একটা অংশ কেটে রাখা হতো। ৯০ দশকে এটি রীতিমতো ব্যবসা হয়ে গেল। এটি চলল ২০০৯-১০ পর্যন্ত।

গ্রামীণ ব্যাংকের সুদহার ২০-২২ শতাংশের কম নয়, অন্য জায়গায় ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ। ফলে দারিদ্র্য নিরসন ২০০৬ সালে মাত্র ৭ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে পেরেছে। ১৯৮০ সাল ২০১০ সাল পর্যন্ত ৯ দশমিক ৪ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠতে পেরেছে- এটি আন্তর্জাতিক গবেষণা। আরেক গবেষণা বলছে, আয় বাড়েনি, ভোগ বাড়েনি। কাজেই এই গবেষণাগুলো আমলে নিলে বলা যায়, ক্ষুদ্রঋণ যারা নিয়েছেন তাদের আয় অল্প বাড়লেও জীবনযাত্রার কোনো পরিবর্তন হয়নি, দারিদ্র্যসীমার মধ্যেই আছে। পারিবারিক ভোগও কমে গেছে কোনো কোনো দেশে। এসব কখনো সামনে আনা হয় না, মানুষ জানে না। এ সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতি হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সমাজবিজ্ঞানী সাদেকা হালিম বলেন, ক্ষুদ্রঋণে নারীদের কেন টার্গেট করা হয়? পুরুষরা ঋণের অর্থ নিলে সেটি নিয়ে চলে যায় কিন্তু নারীরা নিলে তা কাজে লাগায়। নারী পালাতে পারবে না, নারীদের টার্গেট করা সহজ। নারীরা ঋণ নিলে ক্ষমতায়ন হয়েছে, এটি একেবারে নয়। এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীরা ঋণ নেওয়ার ঢাল হয়েছে। নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। একেকজন চারটা বিয়ে করে, একজনকে ব্র্যাক, একজনকে আশা আরেকজনকে অন্য খানে পাঠায়। তবে এখন সে অবস্থা কিছুটা পরিবর্তন হলেও মোটাদাগে যায়নি। গ্রামীণ ব্যাংকে নারীদের পাটিতে বসে। চেয়ারে বসে কর্মীরা তাদের স্যার ডাকতে হয়। ঔপনিবেশিক ধারা থেকে এটি চলে আসে। সরকারের অনেক প্রকল্প আছে, সেটি নিয়ে কেন জনপ্রিয় হতে পারল না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন করা উচিত। কেন রুট লেভেলে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো এনজিওগুলো সফলতা পেল। ক্ষুদ্রঋণ সামাজিক সম্পর্ক ও পরিবেশ নষ্ট করছে।

অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর বলেন, যে অর্থ আমাদের ব্যাংক খাত পারেনি, মহাজন পারেননি সেটি এই মডেল পেরেছে। গ্রামীণ বাংলার রূপ এটি। জামানত সিস্টেম তো রাখতে হবে। টাকা দিয়ে যদি টাকা ফেরত না পাওয়া যায়, তাহলে তো সদকা হয়ে যাবে। সাধারণ অর্থনীতির দিক থেকে টাকা যাতে ফেরত আসে সে সিস্টেম রাখতে হবে। সামাজিক বিবর্তনের কথা চিন্তা করতে গেলে, নারীদের যে কেউ ঋণ দেবে সেটি সমাজ চিন্তাও করতে পারে না। একসেস টু ফাইনাল মূল ফান্ডামেন্টাল। এখানে ফাইন টিউনিংয়ের দরকার আছে। ক্ষুদ্রঋণ সফল। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক খাতে নারীদের অংশ ১ শতাংশ মাত্র। এগুলোতে নজর দিতে হবে। সুদের হার কমিয়ে আনতে প্রতিযোগিতা লাগবে। কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমিয়ে আনতে হবে। ফাইন অ্যান্ড টিউনিং লাগবে।

গোলটেবিল আলোচনার সঞ্চালক একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ক্ষুদ্রঋণ বিতর্ক বিষয়টি এমন যে, এটি অনেক আগে থেকে প্রচলন আছে। রবীন্দ্রনাথের সময় থেকে যেটি শুরু। ড. ইউনূস এটি বাংলাদেশে প্রচলন করেছে। এটি নিয়ে বিতর্ক আছে, আসলে এটি দরিদ্রতা ঠিক কতটা কমাতে পেরেছে? ক্ষুদ্রঋণকে কি পশ্চিমারা ব্যবহার করছে নাকি, নারী ক্ষমতায়নের নামে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন সেটি নিয়েই আলোচনা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close