নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বিদ্যুতে আশার আলো

আসছে গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ২ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার অন্তত আরো ৫টি গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র চলতি বছর বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু করবে। গেল বছরে দেশে এক দিনে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। আসন্ন গ্রীষ্মের দিনগুলোয় সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ফলে দেশে বিদ্যুৎ খাতে আশার আলো জাগাচ্ছে বছরের শুরুতেই। ৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ২টিকে চলতি মাসেই সিওডি অনুমোদন দেওয়া হবে।

রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ ক্রয়কারী সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেকোনো দিন ৫৮৪ মেগাওয়াটের ইউনিক মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ৫৮৩ মেগাওয়াটের সামিট মেঘনাঘাট-২ বিদ্যুৎকেন্দ্র তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পাবে।

এদিকে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, নেপাল থেকে ভারত হয়ে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। আরো ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টির অগ্রগতিও দৃশ্যমান। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে একটি কমিটি করে দেওয়া হবে। এ কমিটি নেপালের সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা কীভাবে আরো বাড়ানো যায়, তা নিয়ে কাজ করবে।

গত বুধবার সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। সভায় তারা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

নেপালের রাষ্ট্রদূত পুনরায় প্রতিমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় নসরুল হামিদকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের জ্বালানি সহযোগিতা উত্তরোত্তর বাড়ছে। তিনি বিদ্যুৎ ব্যবসা, সঞ্চালন লাইন ও নেপালে বিনিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, একসঙ্গে কাজ করলে উভয় দেশ লাভবান হবে। যৌথ বিনিয়োগের জন্য জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তি করা যেতে পারে।

নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট এলাকায় এই ২টি কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থিত ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ার ও জাপানের জেরা ৭১৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের লাইনটি প্রস্তুত হলে সেটিও উৎপাদনে আসবে। মেঘনাঘাটের ওই এলাকার মানুষের জীবিকা ছিল ধানচাষ আর মাছ শিকার। বর্তমানে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের হাব হিসেবে গড়ে ওঠা ওই এলাকায় ১ হাজার ৮৮৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩টি কেন্দ্র ২০১৯ সালে অনুমোদন পায়।

২০২২ সালের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার শর্ত থাকলেও নির্মাণকাজ বেশ কয়েক দফা পিছিয়ে এখন উৎপাদনে আসছে। এই ৩ বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও পিডিবির আরো ২টি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘোড়াশাল রিপাওয়ারিং স্টেশন ইউনিট ৩ ও ৪ নির্মাণাধীন রয়েছে। পিডিবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে একটি কেন্দ্রের ৯৭ শতাংশ ও আরেকটির ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

বর্তমানে দেশের উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াটের মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার ৭১২ মেগাওয়াট। এসব কেন্দ্রগুলো চালাতে দৈনিক ১ হাজার ৯৬৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের দরকার হয়। কিন্তু গ্যাস সরবরাহকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থা পেট্রোবাংলা স্বাভাবিক সময়েও সাড়ে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পারে, যার মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে দিতে পারে ১ হাজার মিলিয়ন ঘটফুট। আর বর্তমান গ্যাস সংকটে পেট্রোবাংলার সরবরাহ ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যার মধ্যে বিদ্যুৎ খাত পাচ্ছে মাত্র ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। জ্বালানির মধ্যে গ্যাস সবচেয়ে সস্তা হলেও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বর্তমান উৎপাদন মাত্র সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে সাড়ে ৯ হাজার থেকে সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৬ সালে গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। নতুন গ্যাসকূপ খননের পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানি চুক্তিগুলোর ফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো ২ বছর।

নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় কীভাবে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে, জানতে চাইলে পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, গ্যাস সরবরাহ কীভাবে আরো বাড়ানো যায়, তা নিয়ে আমাদের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আরো আলোচনা করতে হবে। তবে জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে ইউনিক মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ পাবে বলে বিশ্বাস কেন্দ্রের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা অনুপম হায়াতের।

তিনি বলেন, আমাদের কেন্দ্রটি ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত দক্ষতা নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, যেখানে বেসরকারি ও সরকারি মালিকানাধীন অনেক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, যেগুলো মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ দক্ষতায় কাজ করে। অর্থাৎ একই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে আমরা অন্যদের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারব এবং আমাদের ইউনিট খরচও কম হবে।

অনুপম হায়াত আরো বলেন, এনএলডিসি (ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টার) সক্ষমতা ও সাশ্রয়ের কথা বিবেচনা করে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চাহিদা নিরূপণ করে থাকে। আমাদের বিশ্বাস, আমরা সেই তালিকার শীর্ষে থাকব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close