reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪

সাক্ষাৎকার

জীবন বদলে দিয়েছেন সত্যজিৎ রায় : শর্মিলা

সত্তর দশকের ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের নন্দিত অভিনয়শিল্পী শর্মিলা ঠাকুর। দ্বাবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন তিনি। এ উৎসবের এশিয়ান চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরির দায়িত্ব নিয়ে ১০ দিনের সফরে ঢাকায় অবস্থান করছেন শর্মিলা। গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের সঙ্গে। প্রবীণ অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূরের উপস্থাপনায় সোয়া এক ঘণ্টা কথা বলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে। সেখানে ওঠে আসে শর্মিলার সিনেমা-ক্যারিয়ারের নানা গল্প। যার চুম্বক অংশ তুলে ধরেছেন তুহিন খান নিহাল।

ঢাকায় এসে কেমন লাগছে?

- খুব ভালো লাগছে। ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবের এ আসরে আমাকে যুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। এখানে এসে আমার একবারও মনে হচ্ছে না কোনো হোটেলে আছি, একেবারেই বাড়ির মতো। প্রথম দিন থেকেই খুব যত্ন করে সবকিছু হচ্ছে। যা আবদার করছি, পাচ্ছি। মাছের ঝোল খেতে চেয়েছি। তারা সেটা হাজির হচ্ছে। এয়ারপোর্টে নামার পর থেকেই আমার খুব ভালো লেগেছে। আর এখানকার বইয়ের দোকানগুলোও খুব সুন্দর, সময়ের অভাবে ঘুরে দেখা হচ্ছে না।’

জুরি বোর্ডের দায়িত্ব পালন করছেন, সিনেমা দেখার চাপ তো আছেই?

- প্রতিদিন তিন-চারটি সিনেমা দেখতে হচ্ছে। কয়েকটি বাংলা সিনেমাও দেখেছি। প্রথম দিনেই ফেরেশতে সিনেমাটি দেখেছি। পাশাপাশি আফরিন সিনেমাটা দেখা হলো। দুটোই ভালো লেগেছে। জয়া আহসানের অভিনয় দেখলাম খুব ভালো লাগল।’

আপনার কারিয়ারের প্রথম ছবি অপুর সংসার নিয়ে কিছু জানতে চাই

- আমি তখন স্কুলে পড়তাম, বয়স ১৩ বছর। এক দিন ফোন এলো সত্যজিৎ রায় আমাকে ‘অপুর সংসার’-এ নিতে চান। যখন আমি অপর্ণা চরিত্র করলাম খুবই পপুলার হয়ে গেলাম। তাই আমাকে সেভাবে স্ট্রাগল করতে হয়নি। আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে, আমার প্রথম ছবি মানিক দার (সত্যজিৎ রায়) সঙ্গে। আমার পরিবার চায়নি যে, আমি কখনো ফিল্মে কাজ করি। যদি সত্যজিৎ রায়ের ছবির অফার না আসত আমার জীবনটা হয়তো অন্যরকম হতো। তিনি আমার জীবন বদলে দিয়েছেন।

কার সঙ্গে বেশি বন্ধুত্ব ছিল উত্তম নাকি সৌমিত্র?

- - - অপুর সংসার সিনেমার মাধমে সৌমিত্র আর আমি শুরু করি। তারপর আমাদের গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তাকে আমি খুবই মিস করি। আলাদা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল আমার। আর উত্তম বাবুর সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ফর্মাল ছিল। ‘নায়ক’, ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’, ‘শেষ অংক’, ‘অমানুষ’ এমন অনেক ছবি করেছি। তাকে অনেক সম্মান করতাম। ‘অমানুষ’ যখন করেছি, তখন এক মাস আমরা সুন্দরবনে ছিলাম একটা অস্থায়ী কাঠের ঘরে। অসম্ভব গরম ছিল। রাতে দেখতাম কাঠের ওপর ইঁদুর হাঁটছে। সাবান যেটা রাখতাম, সকালে দেখতাম নেই। ইঁদুর খেয়ে ফেলেছে। এমন একটি কঠিন আউটডোরে দেখেছি, উত্তম বাবু কেমন করে আমাদের সবাইকে চিয়ারআপ করতেন। গাইতেন, আড্ডা দিতেন। এই স্মৃতিগুলো খুব মনে আছে। এটা তো সত্যি, জনপ্রিয়তার বিচারে তার কাছে এখনো কেউ যেতে পারেনি।

নারীকেন্দ্রিক সিনেমা প্রসঙ্গে আপনার অভিমত জানতে চাই

- বর্তমানে নারী চরিত্র এগিয়ে যাচ্ছে। যেগুলো খুব সহজ করে দিয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। আমার মতে নারীকেন্দ্রিক সিনেমা বেড়েছে। পিকু সিনেমার কথাই যদি বলি, একটা মেয়ে রোজগার করে তার বাবাকে দেখছে, এটা আগে কেউ বিশ্বাসই করত না। কিন্তু এখন এটা বিশ্বাস করে। বিদ্যা বালানসহ অনেকেই কাজ করছে। নায়িকাপ্রধান ছবি হচ্ছে। নায়িক প্রধান সিনেমা মানুষ দেখতেও যাচ্ছে। তারপরও নারীরা সেভাবে সুবিধা পাচ্ছে না।

ওটিটি প্রসঙ্গে কী বলবেন?

- ওটিটিতে বিভিন্ন গল্পের সিনেমা মুক্তি পাওয়াকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখি। সেন্সর বোর্ডের নিয়মের কড়াকড়িতে সব ধরনের সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয় না। পাশাপাশি এখন ওটিটি বা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থাকায় পুরোনো অনেক সিনেমাও নতুন করে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে করোনা মহামারিতে ঘরবন্দি থাকার সময়টায় অনেক পুরোনো সিনেমা নতুন করে দেখার সুযোগ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন, কী কথা হলো আপনাদের?

- - অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিংয়ের ফাঁকে তিনি সময় দিয়েছেন। মন খুলে আলাপ করেছেন। উৎসাহ নিয়ে আমার সঙ্গে ছবি তুলেছেন। এমনকি এর আগে আমি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করতে এখানে এসেছিলাম, সে কথাও আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে তাকে খুব সহজ মানুষ মনে হয়েছে। অমায়িক আচার-ব্যবহারের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে তাকে সাধারণ মানুষ মনে হয়েছে। এ কারণে আমার কাছে তাকে আপনজন মনে হয়েছে। সুন্দর সময় কেটেছে তার সঙ্গে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close