নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ জানুয়ারি, ২০২৪

দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা

এ বিজয় জনগণের

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। নির্বাচনের এই বিজয়কে জনগণের বিজয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিজয়টা আমার বিজয় না। মনে করি জনগণের বিজয়। কারণ জনগণের ভোটাধিকার ও ক্ষমতা প্রতিফলিত হয়েছে ভোটের রায়ে। আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সংসদ নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু হতে পারে সে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছি। গতকাল সোমবার বিকেলে গণভবনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অনেকবারই নির্বাচন করেছি। ১৯৮৬ সাল থেকে আটবার। তবে এত মানুষের আগ্রহ আগে দেখেনি। আমি মনে করি বাংলাদেশের জনগণ অনেক আনন্দিত এবং নির্বাচন যারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, মতামত দিয়েছেন। সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে দেশি সাংবাদিকদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি। শেখ হাসিনা বিদেশিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমি আনন্দিত, আপনারা আমাদের দেশটাকে দেখতে এসেছেন।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবসময় এটাই চেষ্টা ছিল নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করা। মানুষের ভোটের অধিকার, অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনায় কে সরকার গড়বে, সেটা দেশের ভোটারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। সেজন্য নির্বাচনের পদ্ধতিকে সংস্কার করেছি। এ সময় নির্বাচন কমিশন আইনসহ অন্যান্য বিধানবলি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচন চলাকালে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবাইকে নির্বাচন কমিশনের অধীনস্ত করে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা, সেটাই লক্ষ্য ছিল। এবারের নির্বাচনটা আরেকটু ব্যতিক্রমী। সাধারণত আমরা দলকে প্রার্থী ঠিক করে দেই বা সব দল তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে দেয়। এবার আমরা আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত করেছি, পাশাপাশি এ নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছি যে যার ইচ্ছামতো দাঁড়াতে পারবে।

তিনি আরো বলেন, আপনারা দেখেছেন একটি দল হয়তো অংশগ্রহণ করেনি। কারণ তারা কখনোই নির্বাচন করতে চায় না। সে দলগুলো সামরিক স্বৈরশাসকের হাতে অবৈধভাবে তৈরি হয়, সেগুলো নিজেরা চলতে পারে না, তাদের জনসমর্থন থাকে না। সেজন্য নির্বাচনকে ভয় পায়। আমাদের দল হলো জনগণের দল। এবারে নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিয়েছে, যাকে নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছেন। অন্য দলেরও এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এই দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন এবং নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সম্পূর্ণ ফলাফল এলে গেজেট হবে, তখনই শপথ হবে। এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবেন সেটা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সেটা নির্বাচিত করবেন। মেজরিটি পার্টি যাকে নির্বাচিত করবেন তিনিই হবে সংসদীয় দলের নেতা।

বিদেশি সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নির্বাচনটা যে অবাধ, সুষ্ঠু হতে পারে সেই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পেরেছি। আপনাদের আগমন আমাদের দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকারটা আরো সুরক্ষিত হয়েছে। আপনারা যার যার দেশে ফিরে যাবেন, বাংলাদেশের কথা বলবেন। আপনাদের আগমন আমাদের গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থাকে আরো মজবুত করবে। এ বিশ্বাস আমার রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষ যেন উন্নত জীবনের অধিকারী হতে পারে। আমরা সরকারে এসে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করি। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট আমার পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছোট বোন শেখ রেহানা আর আমি বেঁচে যাই। ছয় বছর আমরা স্মরণার্থী ছিলাম বিদেশে। খুব কষ্টকর জীবন ছিল।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যারা নারী ধর্ষণ করেছিল, লুটপাট করেছিল, অগ্নিসংযোগ করেছিল, স্বাধীনতার পরপর তাদের বিচার শুরু হয়েছিল। কিন্তু সামরিক স্বৈশাসক ক্ষমতায় এসে বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসায়। যখন আমার মা-বাবার খুনিরা এবং যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়, ওই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি। আমার আসার একটাই লক্ষ্য ছিল- বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা; মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা; গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে আর্থসমাজিক উন্নতি করা।

তিনি বলেন, আমার চলার পথটা এত সহজ ছিল না, অনেকবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আমি অনেক বার মৃত্যুর মুখোমুখি হই। কখনো গুলি, কখনো বোমা হামলা, কখনো গাড়িতে হামলা। আমার সভায় গ্রেনেড হামলা করা হয়। আমার দলের নেতাকর্মীরা আমাকে রক্ষা করে মানবঢাল রচনা করে, অনেকে জীবন দেয়। জনগণের কথা বলতে গিয়ে অনেকবার গ্রেপ্তার হয়েছি, বন্দি হয়েছি। তারপরও আমি দমে যাইনি।

বিদেশি এক সাংবাদিকের এক প্রশ্নে জবাবে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। কোনো দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তার মানে এই নয় যে দেশে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে মানুষ অংশ নিয়েছেন কিনা। বিএনপি আগুন দেয়, মানুষ হত্যা করে। কিছুদিন আগে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছে। এটা কি গণতন্ত্র? এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। মানুষ এটা গ্রহণ করে না। ভোটে মানুষের অংশগ্রহণই বড় কথা। বিএনপি মানুষকে এ নির্বাচনে ভোট না দিতে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মানুষ তাদের কথা শোনেননি। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। শান্তিপূর্ণ হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close