প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ মে, ২০২৪

আরাকান আর্মির নিপীড়ন, পালাচ্ছেন রোহিঙ্গারা

বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক জান্তার সেনাদের সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) তুমুল লড়াই চলছে। দুই পক্ষের এ যুদ্ধ ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের কবলে পড়ে ফের পালাচ্ছেন সেখানকার রোহিঙ্গা বাসিন্দারা। সেনাবাহিনীর হত্যা-নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালে প্রাণ বাঁচাতে এ অঞ্চল থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। তবে এবার পরিস্থিতি অনেক ভিন্ন। মিয়ানমারের এ প্রদেশে আগে রোগিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্মূলকরণ ও উৎখাত অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী এবং জান্তা-সমর্থক সংখ্যাগরিষ্ঠ বামার বা বর্মিরা। এখন এ নিপীড়ন চালাচ্ছে প্রদেশটির বিপুল এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী আরাকান আর্মির সদস্যরা। আলজাজিরা ও বিবিসি সূত্রে গতকাল মঙ্গলবার এ খবর জানা গেছে।

পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক দিনগুলোয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। আরাকান আর্মি শহরটি দখলের দাবি করার পর এ সংঘাত বেড়ে যায়। এতে ওই অঞ্চলে বসবাসকারী হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গার জীবন ফের সংকটে পড়েছে। রাখাইনের বুথিডং শহরে রোহিঙ্গারা জানান, গত কয়েকদিনে শহরজুড়ে ব্যাপক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তারা অগ্নিসংযোগের জন্য আরাকান আর্মিকে অভিযুক্ত করেছে। এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আরাকান আর্মি বলছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিমান হামলা ও অগ্নিসংযোগ শুরু করেছে। এদিকে আরাকান আর্মি বুথিডং দখল করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছেন। আগুনে ঘরবাড়ি হারা রোহিঙ্গাদের কোনো আশ্রয়কেন্দ্র, সরকারি ভবন, হাসপাতাল বা স্কুলভবনে আশ্রয় নিতে দিচ্ছে না আরাকান আর্মি। আরকান আর্মির কমান্ডাররা রোহিঙ্গাদের বিশ্বাস করছে না। তারা মনে করে, এরা হচ্ছে সামরিক সরকারের দালল। আরাকানে যে জনযুদ্ধ চলছে, তার প্রতিপক্ষ শক্তি।

ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন অ্যাডভোকেসি গ্রুপের সহপ্রতিষ্ঠাতা নে সান লুইন বলেন, সব শহরে আরাকান আর্মির সেনারা রোহিঙ্গাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু নিরাপদ জায়গার সন্ধানে ছুটছেন। তাদের কোথাও যাওয়ার নেই। তাদের কোনো খাবার বা ওষুধ নেই। আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের একটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং তাদের ৩০ হাজার সেনা রয়েছে। ইউনাইটেড লিগ অব আরাকানের সশস্ত্র শাখা আরাকান আর্মি রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ রাখাইনদের প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। তারাই মুসলিম রোহিঙ্গাদের আরাকানে থাকতে দিনে নারাজ। আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যম্যে প্রকাশিত রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, রাখাইনের মুসলিম জনগোষ্ঠী ও উগ্রপন্থি বৌদ্ধদের মাঝে ধর্মীয় টানাপড়েন আছে। পাশাপাশি রয়েছে সংস্কৃতিগত বিরোধ ও রাজনৈতিক রশি টানাটানি। রয়েছে পারস্পরিক বিশ্বাস-আস্থার ঘাটতি। তাই আরাকান আর্মির কাছ থেকে রোহিঙ্গারা এ শত্রুতামূলক আচরণের সম্মুখীন হচ্ছে।

সান লুইন দাবি করেন, আরাকান আর্মি গত সপ্তাহে একটি আলটিমেটাম দিয়েছে, এতে দাবি করেছে যে ১৮ মে সকাল ১০টার মধ্যে রোহিঙ্গারা বুথিডং খালি করবে। আরাকান আর্মির কমান্ডার-ইন-চিফ তয়াং এমরাট নাইং নিজের এক্স পোস্টে এ আলটিমেটাম দেন। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যা-উৎখাতের মুখে পড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম। এখন বিদ্রোহী আরাকান আর্মিও রোহিঙ্গাদের উৎখাতে লিপ্ত। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার এখন কক্সবাজার ও নোয়াখালীর হাতিয়ায় ভাসানচরের আশ্রয়শিবিরগুলোয় বসবাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close