বশির আহমদ মোল্লা, নরসিংদী
নরসিংদীতে জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি ঘোষণা
নরসিংদীতে জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি সম্মেলনের ডাক দিয়েছে। এ দুটি গ্রুপই পৃথক স্থানে সম্মেলন করবে বলে জানা গেছে। গ্রুপ দুটি একে অপরের সম্মেলন প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে মারাত্মক সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে জেলার রাজনৈতিক আড্ডাগুলোতে জোরসে চলছে বাগবিত-া।
জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদীতে দীর্ঘদিন ধরে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন গ্রুপটিই সক্রিয় ছিল এবং এখনো সক্রিয় আছে। জেলার প্রায় সব নেতাকর্মী এই গ্রুপের কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এদিকে জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব ওমর ফারুকের অদূরদর্শিতার কারণে সম্প্রতি জেলার জাপা নেতারা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কিছু নেতাকর্মী রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপে গিয়ে যোগ দেয়।
জি এম কাদের সমর্থিত গ্রুপটিকে সমর্থন দিচ্ছে জেলার একদল নেতাকর্মী, নেতাকর্মীদের এই গ্রুপটিই দলে ভারী। এছাড়া ২-৩ শতাংশ নেতাকর্মী রওশন এরশাদের নাম করে মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা ও গোলাম মসীহদের সঙ্গে আছে। রওশন এরশাদ অনুসারী গ্রুপটি শুক্রবার (২ জুন) নরসিংদী প্রেস ক্লাবে তাদের সম্মেলন আহবান করেছেন। অন্যদিকে জি এম কাদেরের অনুসারী শফিকুল ইসলাম, ওমর ফারুক মিয়া ও হাবিবুর রহমান, নেওয়াজ আলী ভূঁইয়ার নেতৃত্বে থাকা দুটি গ্রুপই জি এম কাদেরের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সম্মেলনে একাত্মতা পোষণ করেছেন। আজ হচ্ছে এই সম্মেলন।
এই দুই গ্রুপের মধ্যে জাতীয় পার্টির তৃণমূল নেতাকর্মীদের ৮০ শতাংশই হাবিবুর রহমান ও নেওয়াজ আলী ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন সম্মেলনের পক্ষে সমর্থন করছেন। তবে রওশন এরশাদের অনুসারীরা হঠাৎ দুই-তিন দিন আগে সম্মেলন আহ্বান করায় অপর গ্রুপের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আর এজন্য সবাই জেলা জাপার আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব ওমর ফারুকের দূরদর্শিতার অভাবকে দায়ী করেন। জাপার বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে জি এম কাদেরের অনুসারীরা এ সম্মেলনকে প্রতিহত করবে।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি বিগত সময়ে নরসিংদীতে বেশ শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত ছিল। কিন্তু বর্তমান জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে থাকা আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব ওমর ফারুকের নেতৃত্বের অদক্ষতার কারণে সংগঠনটিতে বিভিন্ন অসন্তুষ্টি তৈরি হয়েছে। জেলায় বর্তমানে জাতীয় পার্টি, জাতীয় যুবসংহতি, জাতীয় ছাত্র সমাজ ছাড়া বাকি অঙ্গ সংগঠনগুলো শুধু নামের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে সাংগঠনিক অদূরদর্শিতার কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বেশির ভাগ আহ্বায়ক শফিকুল ইসলামকে জেলার নেতৃত্বে দেখতে চায় না। পদ হারানোর ভয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে প্রচার বিমুখ সম্মেলন করতে চেয়েছিল জেলা জাপার বর্তমান কমিটি। কিন্তু একাধিক গ্রুপ থাকায় সেটা হচ্ছে না। এখন দুটি গ্রুপ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।
জানা গেছে, এ সম্মেলন নরসিংদী শিল্পকলায় হলেও দলীয় চেয়ারম্যানের আগমন উপলক্ষে বেশ লোক সমাগম হবে বলে জানা গেছে। জেলা জাপার পক্ষে থেকে সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করার বিষয়ে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা বলা হলেও নরসিংদী জেলা ছাত্র সমাজের সদস্য সচিব মো. মাহবুব আলম বলেন, জাতীয় পার্টির জেলা সম্মেলনে ছাত্র সমাজের নেতাকর্মীদের উপস্থিতির জন্য বড় উন্মুক্ত মাঠের প্রয়োজন।
জি এম কাদেরকে বরণ করে নিতে শুধু ছাত্র সমাজেরই হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী উন্মুখ হয়ে আছে। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমির যে স্পেস তা খুবই ছোট। আমরা উন্মুক্ত মাঠে সম্মেলনের প্রস্তাব করে ছিলাম। জেলা জাপা তা আমলে নেয়নি। শুধু ছাত্র সমাজ নয় জেলা জাপার বিভিন্ন ইউনিট কমিটি যেভাবে অংশ নিতে আগ্রহী ছিলেন জেলা জাপা তা পূরণে শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে বলে আমরা মনে করি। তবু তারা দলের চেয়ারম্যান আসবেন বলে আমরা সম্মেলন সফল করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আমরা এই সম্মেলনে জেলা নেতৃত্বে পরিবর্তন চাই।
রওশান এরশাদের অনুসারী গ্রুপের নেতা নাজমুল সিকদার বলেন, আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা জাপার একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করব। দলীয় নেতাকর্মীরা এই সম্মেলন বাতিলের জন্য অনুরোধ করলে তা করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। সেক্ষেত্রে আমাদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে তা করতে হবে।
জি এম কাদেরপন্থি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘জেলা জাপা কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বের বিভিন্ন উপজেলায় দলীয় কোন্দলের কারণে নেতাকর্মীদের মাঝে তার প্রতি অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাই দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী আগামীতে জেলার নেতৃত্বের পরিবর্তন চেয়ে হাবীবুর রহমান ভূঁইয়া ও আমাকে প্রার্থী হিসেবে সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনুরোধ করে। আমরা তাদের প্রতি সম্মান রেখেই জি এম কাদের তথা জাতীয় পার্টির হাতকে শক্তিশালী করতে দায়িত্ব নিতে আগ্রহী। আমরা আশা করি আমাদের চেয়ারম্যান তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আগ্রহকে বাঁচিয়ে রাখবেন।’ অন্যদিকে স্বল্পসংখ্যক নেতাদের উসকানি দিয়ে রওশন এরশাদের সমর্থনকারী গ্রুপটিতে যোগ দেওয়ায় এবং শনিবার (৩ জুন) তাদের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা দেয়। যা আদৌ সমীচীন নয় বলে মনে করছেন দলটির অনেক প্রবীণ নেতা।
নরসিংদী জেলা জাপার সদস্য সচিব ওমর ফারুক মিয়া বলেন, এই সম্মেলনকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের অনুমতিও নেওয়া হয়েছে। হুট করে গত দুই-তিন দিন অন্য একটি গ্রুপ রওশন এরশাদের অনুসারী হয়ে পাল্টা সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছে। আমি তাদের সম্মেলনটি বাতিলের জন্য অনুরোধ করেছি। জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে তার মোবাইলে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
"