ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৪ মার্চ, ২০২৩

বাংলাদেশের রঙিন দিনে জোড়া ইতিহাস

সিলেটে বাংলাদেশের পেসারদের স্বপ্নের দিন! এমন লাইন নিশ্চয় কয়েকশ বার শুনে ফেলেছেন। না শুনে উপায় কী? ওয়ানডেতে এক ইনিংসে পেসারদের ১০ উইকেট, এমন দিন হয়তো আর প্রতিদিন আসে না। তাই সিলেটের এই দিনটা বাংলাদেশের জন্য বিশেষ। বাংলাদেশের রঙিন দিনে তিন সংস্করণ মিলিয়েই এই প্রথম ১০ উইকেটের জয় পেল বাংলাদেশ। যে জয়ে বাংলাদেশ গড়ল একদিনে জোড়া ইতিহাস। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিল বাংলাদেশ।

সূর্যের আলো তখনো যথেষ্টই আছে। সঙ্গে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটগুলোও। কিন্তু সব আলো যেন ম্লান বাংলাদেশের পেসারদের বোলিং রোশনাইয়ের কাছে। দুপুর আড়াইটায় শুরু ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষ বিকেল পৌনে ৫টাতেই! পেসত্রয়ীর বোলিং দ্যুতিতে ঝলসে গেল যেন আইরিশ ব্যাটিং। গতি, সুইং আর দুর্দান্ত স্কিলের মিশেলে তিন পেসার মিলে গড়লেন ইতিহাস।

আগের দুই ম্যাচে টস জিতে বোলিংয়ে নামা আইরিশরা আরো একবার টস জিতে বেছে নেয় এবার ব্যাটিং। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জে মুখথুবড়ে পড়ে তারা। বাংলাদেশের পেসারদের স্কিলের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি আইরিশ ব্যাটিং। স্রেফ ২৮.১ ওভারেই অলআউট তারা ১০১ রানে। বাংলাদেশের পেস আক্রমণের সবচেয়ে তরুণ যিনি, সেই হাসান মাহমুদই ছিলেন উজ্জ্বলতম।

ইনিংসের প্রথম বল থেকে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৫ উইকেট নেন তিনি ৩২ রানে। ২৩ বছর বয়সি পেসারের ছোট্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং এটি। দুর্দান্ত বোলিংয়ের ধারাবাহিকতায় পেস আক্রমণের নেতা তাসকিন আহমেদের শিকার ৩ উইকেট। ইবাদত আহমেদের প্রাপ্তি ২ উইকেট। রান তাড়ায় লিটন কুমার দাস ও তামিম ইকবালের উদ্বোধনী জুটিতেই বাংলাদেশ ম্যাচ শেষ করে দেয় ১৩.১ ওভারে।

১০০ ওভারের ম্যাচ শেষ ৪১.২ ওভারেই। সিলেটে এ দিন সকাল থেকেই ছিল রোদণ্ডমেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি। দুপুর নাগাদ অবশ্য বৃষ্টি থেমে যায়। তবে আকাশ ছিল কিছুটা মেঘলা। উইকেটে আগের মতোই ছিল খানিকটা ঘাসের ছোঁয়া। সেখানেই জ্বলে ওঠেন বাংলাদেশের তিন পেসার। দুর্দান্ত লেংথ আর দুই দিকে সুইংয়ের মোহনীয় বোলিংয়ে প্রথম ওভার থেকেই সুর বেঁধে দেন হাসান। আরেকপাশ থেকে শুরুটা ভালো করেন তাসকিন। আইরিশ ওপেনাররা কোনো জবাব পায়নি এই বোলিংয়ের। প্রথম ৪ ওভারে ৮ রান তোলার পর পঞ্চম ওভারে প্রথম উইকেট আসে হাসানের হাত ধরে। ধুঁকতে থাকা স্টিভেন ডোহেনি উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২১ বলে ৮ রান করে। একটু পর এক ওভারেই জোড়া শিকার ধরেন তিনি দুর্দান্ত ডেলিভারিতে। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে অনেকটা ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ অভিজ্ঞ পল স্টার্লিং (১২ বলে ৭)। দুই বল পর আরেকটি ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে হেরি টেক্টর এলবিডব্লিউ কোনো রান না করেই।

পরের ওভারে আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি স্লিপে ক্যাচ দেন তাসকিনের বলে। ২৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আইরিশরা তখন ধুঁকছে। ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি এরপরই পায় আয়ার?ল্যান্ড। লর্কান টাকার নেমে আগ্রাসী কিছু শট খেলেন। ইবাদতের এক ওভারে তিনটি চার মারেন তিনি। ৪২ রানের জুটি ভাঙেন ইবাদতই। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে ফিরিয়ে দেন তিনি ২৮ রান করা টাকারকে। পরের বলেই গতিতে পরাস্ত জর্জ ডকরেলের স্টাম্প ডিগবাজি খায় কয়েকটি। এরপর কিছুটা লড়াই করেন কেবল কার্টিস ক্যাম্পার। তাসকিন দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে তিন বলের মধ্যেই ফিরিয়ে দেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও মার্ক অ্যাডায়ারকে। শেষটায় আবার হাসানের হাসি। ক্যাম্পারকে ২৬ রানে ফিরিয়ে প্রথমবার ৪ উইকেটের স্বাদ পান তিনি। পরের ওভারেই নিজের সেরা বোলিংকে সমৃদ্ধ করেন আরো। ১০১ রানে শেষ হয়ে যায় আইরিশ ইনিংস। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে কোনো দলের যা তৃতীয় সর্বনিম্ন ইনিংস।

সহজ রান তাড়া আরো অনায়াস হয়ে যায় তামিম ও লিটনের স্ট্রোকের ফোয়ারায়। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারিতে শুরু করেন তামিম। দ্বিতীয় ওভারে লিটন মারেন দুই চার, তৃতীয় ওভারে তামিম তিনটি। এরপর অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটতে থাকেন দুজন।

এক পর্যায়ে লড়াইটা দাঁড়ায়, কে আগে ফিফটি করবেন! শেষ পর্যন্ত অধিনায়ককে ছাড়িয়ে সেখানে জিতে যান লিটনই। যথারীতি চোখজুড়ানো সব শটের সমাহার সাজিয়ে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি ৩৮ বলে। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৪১ বলে ৪১ রানে অপরাজিত তামিম। ২২১ বল বাকি রেখেই ম্যাচ শেষ করে বাংলাদেশ। বল বাকি রাখার হিসেবে এর চেয়ে বড় জয় আছে আর কেবল একটি। ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে ৪৪ রানে গুটিয়ে জয় এসেছিল ২২৯ বল বাকি রেখে। সিরিজ জয় ছিল প্রত্যাশিতই। এক ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে না গেলে হয়তো হোয়াইওয়াশের লক্ষ্যও পূরণ হতো। তবে প্রাপ্তি শুধু এটুকুই নয়। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিভিন্নজনকে নানা ভূমিকায় পরখ করা, এমন ছোট ছোট যেসব চাওয়া ছিল, সেখানেও সফল বাংলাদেশ। দুই দল এখন মুখোমুখি হবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে, চট্টগ্রামে সেই লড়াই শুরু সোমবার থেকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আয়ারল্যান্ড : ২৮.১ ওভারে ১০১

বাংলাদেশ : ১৩.১ ওভারে ১০২/০

ম্যাচসেরা : হাসান মাহমুদ

ফল : বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close