আবদুল্লাহ আল মামুন, মাদারীপুর ও মো. রফিকুল ইসলাম, শিবচর

  ২০ মার্চ, ২০২৩

শিবচরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২০

নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের সহায়তা

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভাঙ্গা-মাওয়া-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছে। রবিবার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় খুলনা থেকে ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের বাস খাদে পড়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষার্থীও রয়েছেন।

পুলিশ জানায়, সকালে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ১৮ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আহতদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঢামেকে নেওয়ার পর আরো দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

শিবচর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু নাঈম মো. মোফাজ্জেল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ১৮ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। ঢামেকে নেওয়ার পর আরো দুজনের মৃত্যু হয়। মাদারীপুরে শিবচরে রেলিং ভেঙে বাস খাদে পড়ে নিহত ২০ জনের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় জানা গেছে। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহতরা হলেন- ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিতোডাঙ্গা গ্রামের সৈয়দ মুরাদ আলীর ছেলে মো. ইসমাইল (৩৮), গোপালগঞ্জে রগপিনাথপুর গ্রামের তৌয়ব আলীর ছেলে হেদায়েত মিয়া বাহার (৪২), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা গ্রামের বকু সিকদারের ছেলে ফরহাদ সিকদার (৩০), গোপালগঞ্জ সদরের শান্তি রঞ্জন মন্ডলের ছেলে ও পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক অনাদী মন্ডল (৪২), গোপালগঞ্জে সরকারের বনগাও এলাকার সামচুল শেখের ছেলে মোস্তাক আহমেদ (৩০), গোপালগঞ্জ সদরের ছুটকা গ্রামের নশর আলী শেখের ছেলে সবজি শেখ, গোপালগঞ্জ সরদরের পাচুরীয়া গ্রামের মো. মাসুদের মেয়ে সুইটি আক্তার (২২), গোপালগঞ্জর টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কাঞ্চন শেখের ছেলে মো. কবির শেখ, গোপালগঞ্জ সদরের আবু হেনা মোস্তফার মেয়ে আফসানা মিমি (২০), গোপালগঞ্জ মোকসেদপুর উপজেলার আমজাদ আলীর খানের ছেলে মাসুদ খা (৩২), খুলনার সোনাডাঙার শেখা আহমেদ আলী খানের ছেলে শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪২), খুলনার চিত্ত রঞ্জন মন্ডলের ছেলে চিন্ময় প্রসন্ন মন্ডল, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পরিমল সাধুর ছেলে মহাদেব কুমার সাধু, খুলনার টুটপাড়ার শাজাহান মোল্লার ছেলে আশরাফুল আলম লিংকন, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সখীপুর গ্রামের আমজেদ আলী সরদারের ছেলে রাশেদ সরদার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের আলী আকবরের ছেলে জাহিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়।

নিহতের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিবুল ইসলাম। এর আগে ঢাকা ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ রাখা হয় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহগুলো আনা হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এরপর সারি করে লাশগুলো রাখা হয়। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর স্বজনদের খুঁজতে অনেকেই ছুটে এসেছেন হাসপাতালে। নিহতদের মধ্যে একজন সুইটি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তার বাবার নাম মাসুদ মিয়া। সুইটির বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের পাঁচুরিয়া গ্রামে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন জানান, দুর্ঘটনা কেন ঘটলো, তা তদন্ত করে দেখা হবে; এর জন্য আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করবো।’

বাসের সামনের সিটের যাত্রীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি : বাসটির সামনের দিকের সিটের যাত্রীদের বেশির ভাগই মারা গেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ফরিদপুর জোনের উপসহকারী-পরিচালক শিপলু আহম্মেদ। তিনি জানান, বাসটিতে মোট ৫৪টি আসন রয়েছে। প্রতিটি আসন ও সামনের ইঞ্জিনের কাভারেও যাত্রী ছিল। এর মধ্যে যারা সামনের দিকে বসেছিলেন তাদের মৃত্যুই বেশি ঘটেছে। তিনি বলেন, কমপক্ষে ৬০ জন যাত্রী ছিল গাড়িতে। যাত্রীদের প্রায় সবাই আহত হয়েছে। আমরা খবর পাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে এসে ১৪ জনকে মৃত হিসেবে শনাক্ত করি। তাদের উদ্ধারের পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি। হাসপাতালে নেওয়ার পরে আরো ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পারি। এখানে ফায়ারসার্ভিসের ৩টি ইউনিট কাজ করছে। আমাদের উদ্ধার কাজ এখনো চলমান হয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনা কবলিত বাসটি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এদিকে আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে আরো ২ জন মারা গেছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। খুলনা থেকে ইমাদ পরিবহনের বাসে করে ঢাকা যাচ্ছিলেন মহারাজ। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী হালিমা আক্তার। মহারাজ বলেন, ‘ভোর ৪টার পরে বাসে উঠি। সঙ্গে ছিল আমার স্ত্রী। স্ত্রী অফিসের কাজে যাচ্ছিলেন ঢাকায়। এরপর চলতে চলতে দেখলাম হঠাৎ গাড়ি বামে মোড় নিয়েছে। লোকজন চিৎকার শুরু করে। মুহূত্বেই গাড়ি উল্টে গেল। বাস কতবার উল্টাইছে নিজেও বলতে পারি না। এরপর বাস খাদে পড়ে যায়।’

মহারাজের সামনের সিটে ছিলেন আনোয়ারা। ছেলে সাজ্জাদকে নিয়ে আনোয়ারা বাগেরহাটের মোল্লারহাট থেকে আসছিলেন। ভোর ৬টার দিকে মোল্লারহাট থেকে বাসে ওঠেন তিনি। দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কীভাবে কী হলো বলতে পারছি না। মুহূর্তেই বাস খাদে পড়ে যায়।’

নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের সহায়তা : মাদারীপুরের শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা ও আহতদের ৫ হাজার টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আর আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close