নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ অক্টোবর, ২০২২

পদ্মা ঘিরে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ

পদ্মায় সেতু গড়ে তোলায় পাল্টে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা। এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এবার আগেই সেতু হওয়া যমুনাপাড় ঘিরে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ দেখবে দেশবাসী। প্রতিনিয়ত ভাঙনে নিঃস্ব জনগোষ্ঠীও ঘুরে দাঁড়াবে; বাড়বে আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্য। এ লক্ষ্যে যমুনা নদী ঘিরে সোয়া তিন লাখ কোটি টাকার ‘যমুনা রিভার ইকোনমিক করিডর ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বা ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বিশ্বব্যাংক।

জানা গেছে, দুই পাড় বাঁধাই করে পর্যায়ক্রমে সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর উত্তর পাড় থেকে কুড়িগ্রামের নুনখাওয়া পর্যন্ত ২৩০ কিলোমিটার ঘিরে ইকোনমিক করিডর, টাউনশিপ, ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলা হবে।

অর্থনীতিবিদদের আশা, নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা ডেলটা প্ল্যান বা বদ্বীপ পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ যমুনাকেন্দ্রিক এ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভারতের সঙ্গে বছরে পণ্য পরিবহন তিন গুণ বেড়ে দাঁড়াবে ১ দশমিক ১৫ কোটি টনে। বর্তমানে নাব্যতা সংকটের কারণে যা মাত্র ৩৫ লাখ টন। এ ছাড়া নৌপথে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও পণ্য পরিবহন করা যাবে। সেই সঙ্গে ২০৪৪ সাল নাগাদ দেশের অর্থনীতিতে ৩৬২ বিলিয়ন ডলার বা ৩০ দশমিক ৭১ লাখ কোটি টাকা যুক্ত হবে।

অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘এখানকার ইকো ট্যুরিজমটা আমরা মোটেও ব্যবহার করছি না। সেটা করতে পারলে বড় ধরনের একটা কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, যমুনা নদীর উন্নয়নের করিডর অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল। এমনকি শাখা নদীগুলোরও করিডর উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোটের রাজনৈতিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন এ উন্নয়ন করিডর বাস্তবায়ন করতে প্রকৌশলীদের সহযোগিতা লাগবে, একই সঙ্গে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও লাগবে।

সাবেক এই মন্ত্রী আরো বলেন, যেকোনো কানেকটিভিটি দেশের উন্নয়নের দুয়ার খুলে দেয়। যমুনা নদীর ইকোনমিক করিডর উন্নয়নের কথা চিন্তা করেই দুপাশের স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। এই করিডর শুধু বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনে অবদান রাখবে, তা নয়। এ করিডর বিদেশেও পণ্য পরিবহন করতে সহায়তা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনায় যমুনা তীরের মানুষের এখন উন্নতর জীবন ও জীবিকার স্বপ্ন দেখছে।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেছেন, যমুনা নদী ঘিরে বাণিজ্য ও শিল্পায়নের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। যমুনা নদীর ইকোনমিক করিডর উন্নয়ন করতে পারলে রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন গড়ে উঠবে।

এনামুল হক শামীম বলেন, যমুনার তীরকে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে কাজে লাগাতে না পারা দুঃখজনক। যমুনা নদীর করিডরকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। সরকার শাসন, নদী রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বন্যার ঝুঁকি কমানো ও নদীর পানি প্রবাহ বাড়ানো, পলি ব্যবস্থাপনার কাজ চলছে।

১৩ বছর আগেও দেশে নদীভাঙন সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর ছিল উল্লেখ করে এই প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নদীভাঙন সাড়ে ৩ হাজার হেক্টরে নিয়ে এসেছে। আরো কয়েক বছর কাজ করলে এক হাজার হেক্টরে নিয়ে আসা যাবে।

শামীম বলেন, প্রজন্মের সৌভাগ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব পেয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ গড়তে দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে নদীশাসন, বন্যা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়েছিলেন। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও পানি ব্যবস্থাপনা, নদী খনন, পানি নিষ্কাশন নদীশাসনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ডেল্টাপ্ল্যান দিয়েছেন তিনি। সুনীল অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যমুনা করিডর ঘিরে নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে অথনীতির গতি সঞ্চার হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close