নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

শিশু সুরক্ষা সম্মেলনে সায়মা ওয়াজেদ

মানসম্পন্ন শিক্ষায় নজর দিতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে, সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজমবিষয়ক উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ বলেছেন, নানা উদ্যোগ অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষায় পরিবর্তন এনেছে। এখন আমাদের মানসম্পন্ন শিক্ষার দিকে নজর দিতে হবে। সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউনিসেফের উদ্যোগে শিশু সুরক্ষায় প্রথম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি এ কথা বলেন।

সায়েমা ওয়াজেদ বলেন, বিশ্বজুড়েই অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, বাংলাদেশেও আছে। আমি মনে করি, আমরা শিশুরা কতটুকু সহিংসতার সম্মুখীন হই- তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করি না। আমরা পোস্ট ট্রমাটিক ডিসঅর্ডার নিয়ে কথা বলি। এটি অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ। আমাদের নীতিনির্ধারকদের জন্যও চ্যালেঞ্জ বটে। কারণ, কমিউনিটিতে এমনকি ঘরে ঘরে বোঝাতে হবে যে, সহিংসতা একটি শিশুর বিকাশে কোনো ধরনের সহায়তা করে না। পানিতে ডুবে মৃত্যুরোধ আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে সায়মা বলেন, পানি থেকে নিরাপদ থাকার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এটি নিয়ে আমাদের অনেক এনজিও কাজ করছে। শিশুদের শেখাতে হবে কীভাবে পানি থেকে নিরাপদে থাকা যায় এবং তাদের সাঁতার শেখানোর প্রয়োজন আছে। এ সময় সমাজকর্মী বাড়ানোর বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

সায়মা ওয়াজেদ বলেন, শুধু সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে শিশুদের জন্য বিনিয়োগ করলে হবে না। আমাদের প্রত্যেককে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে অনেক এলাকায় এমন মানুষ আছেন, যারা সত্যিই জানেন না শিশুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে। ঢাকার দিকে তাকালে দেখা যায়, শিশুদের জন্য নিরাপদ খেলার জায়গা কোথায়? প্রত্যেকটি শিশু সম্ভাবনাময় এবং প্রত্যেকটি শিশু যেন সমাজে কিছু না কিছু কন্ট্রিবিউট করতে পারে, আমাদের শুধু সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শিশুরা নীতিনির্ধারণ করে না, তারা পরিবেশও তৈরি করতে পারবে না। পরিবেশ আমরা তৈরি করি এবং শিশুরা তাতে সন্নিবেশিত হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি শেলডোন ইয়েট প্রমুখ।

কমিউনিটি পর্যায়ে শিশু সুরক্ষা পরিষেবার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ছয় হাজার সমাজকর্মী নিয়োগ দেবে সরকার। বর্তমানে এই সেবা দিচ্ছেন তিন হাজার কর্মী। এখন এটিকে ২০০% বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) যৌথ উদ্যোগে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে বাংলাদেশের শিশুদের নানামাত্রিক প্রতিবন্ধকতা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অধিকার ও শিশু সুরক্ষা আইন নিয়ে আলোচনা হয়।

সেমিনারে বাংলাদেশের শিশুদের নানামাত্রিক প্রতিবন্ধকতা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অধিকার ও শিশু সুরক্ষা আইন নিয়ে আলোচনা হয়।

দেশে বর্তমানে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুর সংখ্যা সাড়ে চার কোটি। এই শিশুদের ৮৯% নিয়মিতভাবে বাড়িতে সহিংসতার শিকার হয় বলে একটি জরিপে উঠে এসেছে। এই জরিপ নিয়ে অনুষ্ঠানে আলোচনা করা হয়।

আয়োজকরা জানান, দেশে অর্ধেক শিশুর জন্মনিবন্ধন নেই, যেখানে ত্রিশ লাখেরও বেশি শিশু শিশুশ্রমে আটকা পড়েছে। এ ছাড়া প্রতি পাঁচজনের একজন শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ালেখাও শেষ করতে পারে না।

তারা আরো জানান, প্রায় এক লাখ শিশুর পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক যত্নের অভাব রয়েছে। এই শিশুদের মধ্যে ৫০% বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছেন। শিশু সুরক্ষা পরিষেবা বাড়াতে জনবল বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ প্রতিনিধিদলের প্রধান রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, শিশুরা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নির্মাণে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রাখে। শিশুরা যে সহিংসতা বা অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের জন্য এ ধরনের সেমিনার সহায়ক হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close