জিয়াউদ্দিন রাজু

  ০৪ জুলাই, ২০২২

রাজধানীতে জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ১০ জুলাই কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। কোরবানির পশু কেনার প্রতি নজর মানুষের রয়েছে। তবে ঈদে নতুন জামা-কাপড়ের চাহিদা রয়েই যায় এবং ঈদের কেনাকাটা এরই মধ্যে বেশ জমে উঠেছে। রাজধানীর অভিজাত বিপণিবিতানগুলোর পাশাপাশি ফুটপাতেও ঈদের কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা। মূলত, কোরবানির পশু কেনার জন্য এই ঈদে অর্থের বড় একটা অংশ বরাদ্দ রাখতে হয়। চলতি সপ্তাহের শেষ দিনগুলোতে কোরবানির পশু কেনায় মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। তাই এখন মার্কেটে জামা-কাপড় কেনাকাটা চলছে। শিশু ও নারীদের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে- এমনটাই মত ব্যবসায়ীদের।

রাজধানীর কয়েকটি শপিং মলে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের কেনাকাটা করার জন্য ক্রেতারা আসছেন। অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে ভিড় বেশি দেখা গেছে। মধ্যমানের মার্কেটগুলোতে ক্রেতা না ভেড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা দেশের বন্যা পরিস্থিতি সামনে আনছেন। তাছাড়া এখন অনেক অফিসে বেতন কিংবা বোনাস না পাওয়াকে দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।

নিউমার্কেটে সন্তান নিয়ে আসা নাজমুন নাহার বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এবার আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি, নিজের জন্য কিছু নেব না। এই ঈদে কোরবানির জন্য গরু কিনতে হবে। যে কারণে খরচটা একটু বেশি হবে। কিন্তু ছোটদের তো আর এই কথা বোঝানো যায় না।

রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেট, জাহান ম্যানশন, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টার, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও আলপনা প্লাজা ঘুরে দেখা গেছে, ছেলেদের বাহারি পাঞ্জাবির পসরা। গরমের সময়ে ঈদ হওয়ায় আরামদায়ক কাপড় নির্বাচনে জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে লিলেন, সুতি, রেমি কটন, ফাইন কটনের পাঞ্জাবি বেশি দেখা গেছে। রং বিবেচনায় সাদা, হালকা সাদা, ছাই, লালচে, নেভি ব্লু ও বেগুনির প্রাধান্য বেশি। পুরুষের পোশাকের মধ্যে পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, কাবলি, সুলতানি কাবলি রয়েছে বড়দের। ছোটদেরও পাঞ্জাবি ও শেরওয়ানি রয়েছে। সব শ্রেণিপেশার মানুষই এসব মার্কেটে ভিড় করছে।

তবে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রুচির পরিবর্তন ও মানের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়ায় অভিজাত পণ্যে ঝুঁকছে নগরীর মানুষ। অভিজাত কাপড়ের দোকনগুলোতে সারা বছর যে পরিমাণ কেনাবেচা হয়, দুই ঈদে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয়। যমুনা ফিউচার পার্ক ও গুলশানের কয়েকটি অভিজাত মার্কেটে প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায় গতকাল। ক্রেতাদের টানতে অভিজাত ব্র্যান্ড হাউসগুলো কেনাকাটায় ঈদের ছাড় দিয়েছে। বেশিরভাগ ব্র্যান্ড হাউস ১০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে।

যমুনা ফিউচার পার্কে ঢুকতেই ইনফিনিটি শোরুমে অনেক ক্রেতা দেখা যায়। নির্দিষ্ট কিছু ডিজাইনের পোশাকের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে ব্র্যান্ডটি। সেখানে কেনাকাটা করতে আসা আরাফাত হোসেন বলেন, আজকের পর আর কেনাকাটা করার সুযোগ নেই। আগামী বুধ থেকে শুক্রবারের মধ্যে কোরবানির গরু কিনতে হবে। তাই সপরিবারে আজই মার্কেটে চলে আসলাম। আর ছাড়ের কারণে এখানে সাধ্যের মধ্যে কোনো পণ্য আছে কি না দেখছি।

রাজ নামের এক ক্রেতা বলেন, সরকারি নির্দেশের কারণে রাত ৮টার পর সব বিপণিবিতান বন্ধ হয়ে যেত। অফিস থেকে বের হতেই ওই সময় পেরিয়ে যেত। তাই গত কয়েক দিন মার্কেটে আসতে পারিনি। তবে এখন যেহেতু ৮টার পরও মার্কেট খোলা থাকে তাই এরই মধ্যে কেনাকাটা সেরে ফেলতে চাই। দুই দিন পরে গ্রামের বাড়ি যাব।

বাদল নামের এক ক্রেতা বলেন, আজ আর আগামীকালের মধ্যে কেনাকাটা শেষ করতে হবে। চলতি সপ্তাহে ছুটির দুই দিন কেনাকাটার সময় থাকবে না। কারণ এই ঈদে গরু কেনাকাটার জন্য বাড়তি সময় রাখতে হয়।

ক্রেতার ভিড় থাকায় ব্যবসায়ীদেরও ব্যস্ততা বেড়েছে। আড়ং শোরুমের ইনচার্জ ফারুক হাসান বলেন, এ ঈদে খুব বেশি কেনাবেচা হয় না। তবে যা হচ্ছে তার মধ্যে আজই ক্রেতাদের ভিড় বেশি। রঙ বাংলাদেশের অপারেশন ম্যানেজার কামরুল হাসান বলেন, দুপুরের পর থেকে ক্রেতা শোরুমে আসছেন। বিশেষ করে নারীরা আসে। পুরুষরা সন্ধ্যার পরে বেশি আসে।

এদিকে বসুন্ধরায় সিটি মার্কেটে ঢুকতে ক্রেতাদের লাইন চোখে পড়ে। চলন্ত সিঁড়িগুলোতেও ভিড়, লিফটের মুখেও জটলা। পোশাকের দোকানগুলোতেও বেশ ভিড়। এক মার্কেট থেকে অন্যটিতে গিয়ে ভিড় বেশি ছাড়া কম দেখা যায়নি।

ঈদকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার থেকে ২ ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে রাত ১০টা করা হয়েছে। যদিও সময় আরো বেশি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close