প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৯ জানুয়ারি, ২০২২

শনাক্তের হার উদ্বেগজনক

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা সংক্রমণের হার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে করোনা রোগী শনাক্তের হার ৭৫ শতাংশ, ফরিদপুরে রেকর্ড ৬০ দশমিক ৮২, রংপুরে ৪৬ এবং সাতক্ষীরায় ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

রাজশাহী : রাজশাহীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার প্রায় ৭৫ শতাংশে পৌঁছালেও সে তুলনায় হাসপাতালে চাপ কমই; মানুষ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গতকাল শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে ৪৬১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে পজেটিভ এসেছে ৩৪৫ জনের। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ৭৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ।’

তিনি বলেন, রাজশাহীতে এখন ঘরে ঘরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। তারা বাড়িতে থেকেই স্বাভাবিক নিয়মে জ্বর-সর্দি-কাশির চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে ভালোও হয়ে যাচ্ছেন তারা। এ জন্য হাসপাতালে রোগীর চাপ কম। তবে যাদের অবস্থার অবনতি ঘটছে তারাই শুধু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে টিকা না নেওয়ার সংখ্যা বেশি।’

এ সময়ে দুজন মারা গেছেন উল্লেখ করে শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের ২৯ ও ৩০ নম্বর কোভিড ওয়ার্ডে তারা মারা যান। এদের মধ্যে করোনায় মারা গেছেন একজন। তিনি কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা। আর উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি পাবনা থেকে এই হাসপাতালে এসেছিলেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবে ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৫৮ জনের শরীরে। একই সময়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৩৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে পজেটিভ এসেছে ২৮৭ জনের।

এর আগের দিন বুধবার রাজশাহীতে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার ছিল ৬০ দশমিক ৩৯ শতাংশ; গত মঙ্গলবার ছিল ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ এবং গত সোমবার রাজশাহী জেলায় করোনাভাইরাস শনাক্তের হার ছিল ৫৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক জানান, ২৪ ঘণ্টায় কোভিড ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন আটজন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১০ জন রোগী। ১০৪ শয্যার এই ইউনিটে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ৪৯ জন।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসেইন শাফায়েত করোনা সংক্রমন থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে মাস্ক পরার এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।

ফরিদপুর : ফরিদপুরে করোনা শনাক্তের হার সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৬০ দশমিক ৮২, অর্থাৎ প্রায় ৬১ শতাংশ। শুক্রবার ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত পিসিআর ল্যাব সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত দুই বছরে করোনা প্রাদুর্ভাবের সময়কালের ইতিহাসে এটিই শনাক্তের সর্বোচ্চ হার। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি ৩০৩টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয় ১৫৫ জনের। ওই দিন শনাক্তের হার ছিল ৫১ দশমিক ১৫।

শুক্রবার বিকালে এ ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এ তথ্য।

ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী এ ল্যাবে ফরিদপুর শহরসহ ৯টি উপজেলার ১৭১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১০৪ জনের। অর্থাৎ পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৬০ দশমিক ৮২।

ফরিদপুর পিসিআর ল্যাবে শুক্রবার যে নমুনাগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে তার মধ্যে ভাঙ্গায় দুজনের নমুনা পরীক্ষা করে দুজনেরই এবং বোয়ালমারীতে একজনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনেরই করোনা শনাক্ত হয়েছে। ওই দুটি উপজেলায় শনাক্তের হার শতভাগ। এরপরে রয়েছে ফরিদপুর শহরসহ সদর উপজেলা। সদরে ১৪৭টি নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছে ৯৩ জনের। শনাক্তের হার ৬৩ দশমিক ২৭। চরভদ্রাসন ও সালথায় দুজনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের শনাক্ত হয়েছে। ওই দুটি উপজেলায় শনাক্তের হার ৫০। মধুখালী ও নগরকান্দায় সাতজনের নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছে তিনজনের। ওই দুটি উপজেলায় শনাক্তের হার ৪২ দশমিক ৮৬। আলফাডাঙ্গা দুজনের এবং সদরপুরে একজনের নমুনা পরীক্ষা করে কারো করোনা শনাক্ত হয়নি। ফলে এ দুটি উপজেলায় শনাক্তের হান শূন্য।

রংপুর : রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাদের মধ্যে ১৬ জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। সাতজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শনাক্তের হার ৪৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

শুক্রবার দুপুরে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে রংপুরে ১১৯, দিনাজপুরে ১১০, পঞ্চগড়ে ৩১, নীলফামারীতে ৪৬, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫৬, লালমনিরহাটে ২৩, কুড়িগ্রামে ২১ ও গাইবান্ধায় ৩২ জন। রংপুর মেডিকেল কলেজ ও দিনাজপুর আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের দুটি পিসিআর ল্যাবে ৯৪৩টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৩৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

ডা. জাকেরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ সাত মাস পর রংপুর বিভাগে সর্বোচ্চ করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১৪ জনকে আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডের আইসিইউতে এবং দুজনকে রংপুর করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৭ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close