হাসান ইমন

  ১৯ জানুয়ারি, ২০২২

স্বস্তির জায়গাও ইজারা

রাজধানীতে বসবাস করছে দুই কোটি মানুষ। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার বা খেলাধুলার জায়গা খুবই সীমিত। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মাঠ ও পার্ক রয়েছে মাত্র ৫৩টি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের ৩১টি ও ঢাকা উত্তরের ২২টি। এর বাইরে অনেক ওয়ার্ডে নেই পার্ক ও মাঠ। জনসংখ্যা অনুযায়ী বিনোদন স্থানের সংকটের মধ্যেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মাঠ ও পার্কের ইজারা দিতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে একটি পার্কের ইজারা সম্পূর্ণ করেছে। আরেকটি পার্ক ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তবে এ বিষয়ে নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে এমনি বিনোদন স্থানের সংকট। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন পার্ক ও মাঠের ইজারা দিচ্ছে। সিটি করপোরেশন থেকে এটা করা ঠিক নয়। কারণ সিটি করপোরেশন একটা সেবাদাতা সংস্থা। পার্ক ও মাঠ ইজারা না দিয়ে অন্য খাত থেকে রাজস্ব বাড়িয়ে সেটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। আর জনবল বাড়িয়ে মাদকসেবী ও বখাটেদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ গত বছরের নভেম্বর মাসের ৪ তারিখ গুলিস্তান পার্কের (বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান পার্ক) পূর্ব অংশে পাবলিক টয়লেট, ক্যান্টিন ও পার্কের প্রবেশ মূল্য ইজারার জন্য সরকারি দর চাওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৮০০ টাকা। এই পার্কটির ইজারা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পার্কে প্রবেশ ফি হিসেবে ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া কলাবাগান পার্কের ইজারা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব পার্কে প্রবেশ ফি নির্ধারণ হতে পারে বলে জানান কর্মকর্তারা।

দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উন্মুক্ত স্থানগুলোর ‘আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পে মোট ১৬টি পার্ক ও তিনটি খেলার মাঠ রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হয়েছে মাত্র দুটি পার্কের। বাকি ১৪টি পার্ক ও তিনটি খেলার মাঠ সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ রয়েছে। যদিও এর মধ্যে ১২টি পার্ক ও মাঠের কাজ শেষ হয়েছে। তবে কবে নাগাদ উন্মুক্ত করা হবে সেটি অজানা।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৩১টি পার্ক ও মাঠের উন্নয়নের জন্য প্রকল্প নেয়। এরই মধ্যে অনেকগুলো পার্ক ও মাঠের সংস্কার কাজ শেষ। কয়েকটার সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে কিছু মাঠ উন্মুক্ত হলেও অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। এর মধ্যে আবদুল আলীম খেলার মাঠ মাঝেমধ্যে কিছুটা সময়ের জন্য খুলে দেওয়া হয়। মাঠে প্রবেশ করতে না পেরে দিনের বেলায় সাধারণ শিশুরা মাঠের পাশের রাস্তা ও গলির সরু সড়কে খেলাধুলা করে।

বাসাবো খেলার মাঠ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে উন্নয়ন শেষে উদ্বোধন করা হয়। সেই থেকে শিশু-কিশোররা আর খেলাধুলা করতে পারে না। বিকালে কিছু সময়ের জন্য খুলে দেওয়া হয় শুধু বয়স্ক লোকজনের হাঁটার জন্য। খেলার মাঠে এখন শুধু হাঁটার কাজ হয়। একই অবস্থা রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার জোড়পুকুর মাঠেরও। এ মাঠটি সারাদিন বন্ধ রেখে শুধু সন্ধ্যার পর খুলে দেওয়া হয়। এভাবে বেশকিছু মাঠে আর ইচ্ছে হলেই স্থানীয় শিশু-কিশোররা প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া সিক্কাটুলীতে শহীদ বুদ্ধিজীবী খালেক সরদার পার্ক, বাহাদুরশাহ পার্ক, সাঈদ খোকন পার্ক ও ধলপুর আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার পার্কসহ বেশ কয়েকটি মাঠ ও পার্কের উদ্বোধনও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘রাজধানীতে উন্মুক্ত স্থানের সংকটের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পার্কের ইজারা দিতে যাচ্ছে, যা কখনো আদর্শ শহরের মানদণ্ড হতে পারে না। যদিও সিটি করপোরেশন বলছে মাদকাসেবী ও বখাটের উৎপাত বন্ধ করতে এই পদক্ষেপ। তবে জনবল বাড়িয়ে এসব লোকদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’

এই নগর পরিকল্পনাবিদ আরো বলেন, ‘সিটি করপোরেশন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনেক বড় বাজেট দিয়ে থাকে। সিটি করপোরেশনের আয়ের অনেক সোর্স রয়েছে। ওই সব জায়গা থেকে টাকা আদায় করতে পারে। আর পার্ক থেকে রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ টাকা না নিলেও সিটি করপোরেশন চালাতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘গুলিস্তান পার্কের ইজারা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কলাবাগান পার্কের ইজারা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর বাকি পার্কের ইজারাও হতে পারে। পার্কে মাদকাসেবীদের ও বখাটের উৎপাত বন্ধ করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এসব পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ খাতে অনেক টাকা ব্যয় হয়। এসব ব্যয় বহনে সিটি করপোরেশন এসব উদ্যোগ নিয়েছে। তবে পার্কের প্রবেশ ফি ১০ টাকা, যা সাধারণ মানুষ সহজে বহন করতে পারবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close