নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সুদবিহীন বিনিয়োগের নামে প্রতারণার ফাঁদ

শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগের কথা বলে প্রচারণা চালিয়ে নিজের এমএলএম কোম্পানিতে বিনিয়োগে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতেন এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান। বিনিয়োগের ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেখাতেন তিনি।

২০১৮ সালে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার গ্রাহকের ১১০ কোটি টাকা নিয়ে শুরু হয় তার সুদবিহীন কোম্পানি। এরপর গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেই রাগীব নিজের ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে গড়ে তোলেন মাদরাসা ও হোটেলসহ ১৭টি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তার এই ১৭ কোম্পানিতে ৯০০ কর্মচারী ও লক্ষাধিক গ্রাহক রয়েছে। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীদের বেতন ও গ্রাহকদের লভ্যাংশ কোনোটি দিতেন না রাগীব হাসান। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত ব্যক্তি ও ইমামদের টার্গেট করে সুদবিহীন প্রতারণার ফাঁদে ফেলে রাগীব আহসান আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা।

প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ থানাধীন তোপখানা রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান ও তার সহযোগী মো. আবুল বাশার খানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ভাউচার ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ১৯৮৬ সালে পিরোজপুরের একটি মাদরাসায় অধ্যয়ন শুরু করেন রাগীব। পরে তিনি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিন বছর হাটহাজারীর একটি মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন। ১৯৯৯ সালে ২০০০ পর্যন্ত খুলনার একটি মাদরাসা থেকে মুফতি সম্পন্ন করেন। পরে তিনি পিরোজপুরে একটি মাদরাসায় চাকরি শুরু করেন। ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে তিনি বিভিন্ন মসজিদে ইমামতিও করেছেন। এর পাশাপাশি ‘এহসান এস মাল্টিপারপাস’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানিতে ৯০০ টাকা বেতনের চাকরি করতেন। মূলত এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে এমএলএম কোম্পানির আদ্যপান্ত রপ্ত করেন রাগীব আহসান। সেই থেকে ২০০৮ সালে নিজেই ‘এহসান রিয়েল এস্টেট’ নামে একটি এমএলএম কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন অঞ্চলের ধার্মিক সাধারণ মানুষ, মাদরাসার শিক্ষক ও ইমামদের টার্গেট করে শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগের প্রচারণা চালাতেন। বিভিন্ন ওয়াজ-মাজফিলেও তার কোম্পানির জন্য গ্রাহক সংগ্রহ করতেন। এক লাখ টাকার বিনিয়োগে ২০ শতাংশ মুনাফাপ্রাপ্তির প্রলোভন দেখাতেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, রাগীবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, তার কোম্পানিগুলোতে প্রায় ৩০০ কর্মচারী রয়েছে, যাদের কোনো ধরনের বেতন দিতেন না তিনি। কর্মচারীররা মাঠপর্যায় থেকে বিনিয়োগকারী ও গ্রাহক সংগ্রহ করলে তাদের কমিশন দেওয়া হতো। কিন্তু রাগীব তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করেই প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, ১০ হাজার গ্রাহকের ১১০ কোটি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। হাউজিং, ল্যান্ড প্রজেক্ট, ব্যবসায়িক দোকান, ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে সাধারণ গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।

রাগীবের আত্মসাৎ করা অর্থ ও সম্পদের পরিমাণ কত, জানতে চাইলে খন্দকার আল মঈন বলেন, অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দেব। তারা রাগীবের সম্পদ ও অর্থপাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close