প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ এপ্রিল, ২০২১

শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, সরকার পাশে আছে : প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে শনাক্ত ও মৃত্যু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় সরকার যখন কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তখন এসেছে বাংলা নববর্ষ। একই সময় শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশবাসীকে বৈশাখী শুভেচ্ছার পাশাপাশি সব ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে পবিত্র মাহে রমজানের মোবারকবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহামারিকালে সবাইকে বলেছেন সাবধানে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। তিনি বলেন, ‘আপনাদের শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার সব সময় আপনাদের পাশে রয়েছে।’ এভাবে মহামারি মোকাবিলায় দেশবাসীকে সাহস জোগানোর পাশাপাশি সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।

মহামারি সংক্রমণ ঠেকাতে আজ বুধবার থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হচ্ছে, জীবন বাঁচাতে তা মেনে চলতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, কোনোভাবেই সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তাই আমাদের আরো কিছু কঠোর ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। আমি জানি এর ফলে অনেকেরই জীবন-জীবিকায় অসুবিধা হবে। কিন্তু আমাদের সবাইকেই মনে রাখতে হবে মানুষের জীবন সর্বাগ্রে। বেঁচে থাকলে আবার সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারব।’

তবে মানুষের জীবন-রক্ষার পাশাপাশি অর্থনীতি যাতে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে না পড়ে, সেদিকেও সরকারের নজর আছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪২ হাজার নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় গত বছর আমরা চারটি মূল কার্যক্রম নির্ধারণ করেছিলাম। চারটি কার্যক্রম হচ্ছে ১. সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা : সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকেই’ প্রাধান্য দেওয়া; ২. আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন : অর্থনৈতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণœ রাখা; ৩. সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি : দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকা-ে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি; ৪. মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা : অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ এমনভাবে বৃদ্ধি করা যেন মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।

সেজন্য প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রায় আড়াই কোটি মানুষকে বিভিন্ন সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে। পল্লী অঞ্চলে কর্মসৃজনের জন্য ৮০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং রমজান ও আসছে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৬৭২ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভিজিএফ, টেস্ট রিলিফসহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো হয়েছে।

ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি জেলায় করোনাভাইরাস রোগীর চিকিৎসা সুবিধার আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ এবং বিদ্যমান আইসিইউ সুবিধা আরো বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গণটিকাদান শুরুর কথাও বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরই মধ্যে ৫৬ লাখের বেশি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। যারা প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসব। আমাদের সে প্রস্তুতি রয়েছে।’

তবে টিকা নিলেই যে সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত হবেন, তেমন না ভাবার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রত্যেকের কাছের মানুষদের সুরক্ষিত রাখতে যার যার নিজের ভাইরাস সংক্রমণ এড়িয়ে থাকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব আমাদের নিজের, পরিবারের সদস্যদের এবং প্রতিবেশীর সুরক্ষা প্রদানের। কাজেই ভিড় এড়িয়ে চলুন। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করুন। ঘরে ফিরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে গরম পানির ভাপ নিন।’

সরকার যে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে, তা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে মহামারিও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

মহামারির কারণে বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখে এবারও বাইরে কোনো অনুষ্ঠান করা যাচ্ছে না বলে সবাইকে ঘরে থেকেই আনন্দ করার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী সবার উদ্দেশে বলেন, ‘বাঙালি বীরের জাতি। নানা প্রতিকূলতা জয় করেই আমরা টিকে আছি। করোনাভাইরাসের এই মহামারিও আমরা ইনশাআল্লাহ মোকাবিলা করব।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close