পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ০৬ আগস্ট, ২০২০

ভারতে অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভিতপাথর স্থাপন মোদির

নরেন্দ্র মোদিই দেশের প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি অযোধ্যায় রাম জন্মভূমি পরিদর্শন করলেন। এর আগে কোনো প্রধানমন্ত্রী রাম জন্মভূমিতে যাননি বলে জানিয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকার। দীর্ঘ ২৯ বছর আবার অযোধ্যায় গেলেন নরেন্দ্র মোদি। গতকাল বুধবার ভূমি পূজা হলো অযোধ্যার রামমন্দিরের। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে রামমন্দিরের শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ১৯৯২ সালে শেষবার অযোধ্যা গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তখনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, উত্তর প্রদেশে এই শহরে তিনি তখনই আবার ফিরবেন, যদি কোনোদিন এখানে রামমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। নিজের প্রতিজ্ঞা রেখে দীর্ঘ ২৯ বছর পর রাম মন্দিরের ভিতপাথর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন তিনি।

১৯৯২ সালে শেষবার যখন অযোধ্যা গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি, তখন তিনি ছিলেন মুরলি মনোহর জোশির তিরঙ্গা যাত্রার আহ্বায়ক। সংবিধানের ৩৭০ ধারা খারিজ করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার দাবিতে এই তিরঙ্গা যাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। গত বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে একটি জনসভায় যোগ দিতে ফৈজাবাদ-আম্বেদকরনগরে গিয়েছিলেন মোদি। কিন্তু অযোধ্যা সফর এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অযোধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরেই ধুমধাম করে রাম মন্দিরের ভূমি পূজা হয়েছে। করোনা আবহে বিশাল আয়োজন করা হয়েছে।

এরই মধ্যে সকালেই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটে দেশের সব ধর্ম সমন্বয়ের কথা তুলে ধরেছেন মমতা। গতকাল বুধবার সকালে টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টানÑ একে অপরের ভাই! আমার ভারত মহান, মহান আমার হিন্দুস্তান! আমাদের দেশ তার চিরায়ত বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে, এবং আমাদের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষিত রাখব।

অন্যদিকে রামমন্দির ইস্যুতে কংগ্রেসের অবস্থান কী, দীর্ঘদিন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ইস্যুতে ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো অবস্থান নিয়ে এসেছে কংগ্রেস। কখনো এর স্পষ্ট বিরোধিতা করেনি, আবার রাজিব গান্ধী ছাড়া আর কোনো কংগ্রেস নেতা প্রকাশ্যে এর সমর্থনও করেননি। কিন্তু অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হতেই এই মাঝামাঝি অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর পর এবার রাহুল গান্ধী ভগবান শ্রীরামের বন্দনায় ব্রতী হয়েছেন। এর আগে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী রামমন্দিরের সমর্থনে মুখ খোলেন। প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের উৎসব হয়ে উঠবে রামমন্দিরের এই ভূমি পূজা। কংগ্রেস নেতা শশি থারুরকেও জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিতে দেখা গেছে।

এদিকে গতকাল বুধবার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। বিজেপির নীতিগত আদর্শ এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মূল স্তম্ভই হলো রামমন্দির নির্মাণ। ১৯৯০ সালে দেশজুড়ে রাম নির্মাণের স্বপক্ষে প্রচার গড়ে তোলে বিজেপি। সেই প্রচারের অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তবে এর আগে কখনো রাম জন্মভূমিতে যাননি তিনি এবং নিজের বক্তব্যে বরাবর রামমন্দির প্রসঙ্গ এড়িয়েই গিয়েছেন তিনি। ভূমি পূজার পর রামমন্দির ট্রাস্টের সভাপতি মহন্ত নিত্যগোপাল দাশের সঙ্গে মন্দিরের ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি বলেন, রামমন্দির প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্র নির্মাণের পদক্ষেপ। জয় শ্রী রামের ধ্বনি শুধু অযোধ্যা নয়, গোটা বিশ্বে শোনা যাচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মতোই রামমন্দিরের জন্য কয়েক শতাব্দী ধরে অনেকে আন্দোলন করেছেন। তারই ফল পেয়েছি আমরা। যাদের ত্যাগ ও বলিদানের জন্য আজ রামমন্দিরের স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে, এ ১২০ কোটি দেশবাসীর তরফ থেকে তাদের প্রণাম জানাই।

অযোধ্যায় হনুমান গড়িতে পূজা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেছেন, রামের সব কাজ তো হনুমানই করেন। তারই আশীর্বাদে এই কাজ করতে পেরেছি আমরা। ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলিম প্রধান দেশেও রামায়ন রয়েছে। শুধু তাই নয়, লাওস, কম্বোডিয়ায় গেলেও রামচন্দ্রের আখ্যান জানা যায়। কবির দাশের রাম থেকে মহাত্মা গান্ধীর ভজনগুলোতে রামনাম রয়েছে। একইসঙ্গে তাকে ভূমি পূজার সুযোগ দেওয়ার জন্যও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, এটা তার সৌভাগ্য যে শ্রীরাম জন্মক্ষেত্র ট্রাস্ট তাকে এমন মহান ইতিহাসের অংশ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। হৃদয় থেকে তাদের ধন্যবাদ জানাছেন। আর তাকে তো আসতে হতোই। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ভারত আজ ভগবানের সান্নিধ্য। সরযুর তীরে নতুন ইতিহাস রচনা করছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র ভারত আজ রামময়। পুরো দেশ রোমাঞ্চিত। প্রতিটি মন আলোকিত। আজ পুরো ভারতে এই ভাবনায় আবেগময়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close