প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ জানুয়ারি, ২০২০

যশোরে একই পরিবারের ৩ জনসহ সড়কে নিহত ৯

কক্সবাজারে বনভোজনের বাস উল্টে আহত ৪০

যশোরে প্রাইভেট কার উল্টে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। ঢাকার ধামরাইয়ে বাসের ধাক্কায় ছেলে নিহত হন, এই সংবাদ শুনে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে বাবার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া কক্সবাজারে বনভোজনের বাস খাদে পড়ে ৪০ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে যশোরের কেশবপুরে আলমসাধুর ধাক্কায় শিশু এবং পঞ্চগড়ে বিটিভির জনপ্রিয় ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের শুটিং দেখে ফেরার পথে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের এক কর্মচারী নিহত হয়েছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-

যশোর : যশোরে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে বৈদ্যুতিক খুুঁটি ও পরে একটি বাড়ির প্রাচীরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে শহরের বিমান অফিস মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন যশোর শহরের ঢাকা রোডের তালতলা এলাকার ইয়াসিন আলীর বড় মেয়ে তানজিলা ইয়াসমিন ইয়াসা (২৮), সদ্য এমবিবিএস পাস করা ছোট মেয়ে তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসা (২৫) এবং এদের খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম তিথী (২৬)। আহত হয়েছেন পিয়াসার স্বামী শফিকুল ইসলাম জ্যোতি (২৮), আফরোজা তাবাসসুম তিথীর মেয়ে মানিজুর মাশিয়াব (৪), জ্যোতির দুই বন্ধু শাহিন (২৩) ও হৃদয় (২৮)। জ্যোতি নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন।

এদিকে দুই মেয়েকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যান ইয়াসিন আলী ও তার স্ত্রী রেহেনা পারভীন হিরা। তাদের আর কোনো সন্তান নেই। ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। সমবেদনা জানাতে হাজার হাজার মানুষ নিহতদের বাড়িতে আসেন।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাইভেট কারচালক শফিকুল ইসলাম জ্যোতি পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। গাড়ি চালানোর সময় তিনি নেশা অবস্থায় ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাদক পরীক্ষার (ডোপ টেস্ট) জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নিহতের পরিবারের সদস্যদের আবেদনের ভিত্তিতে লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিহতের স্বজনরা জানান, যশোর শহরের লোন অফিসপাড়া এলাকার ঠিকাদার ও গাড়ি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জ্যোতির সঙ্গে আদ-দ্বীন সখিনা মেডিকেল থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস তনিমা ইয়াসমিন পিয়াসার দেড় বছর আগে বিয়ে হয়। আগামী ২৩ জানুয়ারি বিবাহত্তোর আনুষ্ঠানের দিন ছিল। সে জন্য জ্যোতির বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়। পিয়াসা রাতে ফোন করে জ্যোতিকে জানান, তারা আলোকসজ্জা দেখবেন এবং শহর ঘুরবেন। এ কারণে শুক্রবার রাত ১০টার দিকে জ্যোতি তার নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়ে বের হন। গাড়িতে পিয়াসার বড় বোন তানজিলা, খালাত ভাইয়ের স্ত্রী আফরোজা তাবাসসুম তিথী, তার মেয়ে মানিজুর মাশিয়াব এবং জ্যোতির দুই বন্ধু হৃদয় ও শাহিন ছিলেন। তারা রাতে আলোকসজ্জা দেখে শহরে তাদের স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে রাত সাড়ে ১টার দিকে শহরের পালবাড়ী এলাকা থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। ফেরার সময় শহরের পুরাতন কসবার শহীদ মসিয়ূর রহমান সড়কের আকিজের গলির পাশে একটি বিদ্যুতের খাম্বায় সজোরে আঘাত করে প্রাইভেট কারটি। পরে ধাক্কা লাগে একটি ভবনের প্রাচীরের সঙ্গে। এতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

ধামরাই (ঢাকা) : ঢাকার ধামরাইয়ে ঢাকা-অরিচা মহাসড়কে বেপোয়ারা বাসের ধাক্কায় ইমরান (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হন। এ মৃত্যু সংবাদ শুনে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার বাবা মতিয়ার হোসেন মারা যান। এদিকে স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে পাগল হয়ে বিলাপ করতে করতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন ইমরানের মা। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে ধামরাই উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইমরান ও তার বাবা মতিয়ার হোসেন উপজেলার সূতিপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, বাড়ি থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশ দিয়ে শ্রীরামপুর বাজারে যাওয়ার পথে মানিকগঞ্জগামী নিলাচল পরিবহনের বাসের ধাক্কায় ইমরান গুরুতর হন। স্থানীয়রা সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক ইমরানকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় এলাকায় বয়ে যাচ্ছে শোকের ছায়া।

কক্সবাজার ও উখিয়া : কক্সবাজারের রামুতে বনভোজনে আসা যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ ৪০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার ভোরে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু হাসপাতালসংলগ্ন মেরুংলোয় লম্বা ব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে রামু থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আহতদের উদ্ধার করে রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আর গুরুতর আহতদের কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৪৫ আসনের বাসটি ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মেরুংলোয় লম্বা ব্রিজ অতিক্রম করার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে সাইড দিতে গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে খাদে পড়ে যায়। বাসের ৪০ জন যাত্রীর কমবেশি সবাই আহত হন। এ দুর্ঘটনায় রামু থানার ওসি মো. আবুল খায়ের ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রামুর- ১০ পদাদিক ডিভিশনের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার জন্য বনভোজনটি বাতিল করা হয়েছে।

কেশবপুর (যশোর) : যশোরের কেশবপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় শাবরিনা আফরোজ (৩) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। সে উপজেলার আলতাপোল গ্রামের আবদুল হালিম অটলের কন্যা। গত শুক্রবার দুপুরে শাবরিনা তার মায়ের সঙ্গে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের তেইশ মাইল নামক স্থানে সড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির আলমসাধুর ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় শাবরিনা। তাকে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করে। শনিবার তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বিটিভির জনপ্রিয় ইত্যাদির অনুষ্ঠান ধারণ দেখে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন পঞ্চগড় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের অফিস সহকারী (স্টেনোগ্রাফার) দাইমুল ইসলাম মন্টু (৫৩)। গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে পঞ্চগড়-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের জগদল চৈতন্যপাড়া এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে থামানো একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে গুরুতর আহত হন তিনি। খবর পেয়ে পুলিশ ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ- টেকেরহাট সড়কের সাতপাড়ের নবপল্লী এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, মাদারীপুরের টেকেরহাট থেকে গোপালগঞ্জগামী বন্ধন পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে বাসের দুই যাত্রী নিহত হন। আহত হন অন্ততপক্ষে ১০ জন। নিহতরা হলেন গোপালগঞ্জ সদরের সাতপাড় ইউনিয়নের চামটা গ্রামের নুরু মোল্যার স্ত্রী রুমিছা বেগম (৫০) ও মুকসদুপুর উপজেলার ননীক্ষির ইউনিয়নের মহিষতলী গ্রামের সুবল বালার স্ত্রী শেফালি বালা (৪০)।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close