টঙ্গী প্রতিনিধি

  ২২ জানুয়ারি, ২০১৮

৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি

আখেরি মোনাজাতে শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা

টঙ্গীর তুরাগতীরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের তাবলিগ জামাতের দুই পর্বের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। গতকাল রোববার সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকার কাকরাইল মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জোবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজাত চলে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত। বাংলা ও আরবি ভাষায় এ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। মোনাজাতে জীবনের সব গোনা মাফ, কবরের আজাব, জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি এবং জান্নাত নসিবের জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানানো হয়। ইজতেমা ময়দান ও আশপাশে খোলা জায়গায় সমবেত মুসল্লিরা ‘আমিন, আমিন’, ‘ইয়া আল্লাহু’, ‘ইয়া আল্লাহু’ ধ্বনিতে মুখরিত করে তুলেন। আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে দুনিয়ার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন তারা। এ সময় অনেক মুসল্লি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ইজতেমাস্থলে তাবলিগ জামাতের সমবেত দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও আশপাশের জেলার কয়েক লাখ মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আখেরি মোনাজাতে শরিক হন। গত দুই দিনসহ রোববার টঙ্গীর আবহাওয়াও ছিল অনুকূলে। শীতের তীব্রতাও প্রথম পর্বের চেয়ে তুলনামূলক কম ছিল। ফলে দ্বিতীয় পর্বে মুসল্লিদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি লক্ষ করা গেছে। আখেরি মোনাজাতেও মুসল্লিদের উপস্থিতি প্রথম পর্বের চেয়ে বেশি ছিল।

গত শুক্রবার বাদ ফজর বাংলাদেশের মাওলানা ফারুক হোসেনের বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের ৫৩তম ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় ১৩টি জেলার মুসল্লিরা ২৮টি খিত্তায় বিভক্ত হয়ে অংশ নেন। এদিকে আখেরি মোনাজাতে যোগ দিতে গতকাল রোববার ভোর থেকে মানুষ ছুটতে থাকে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের দিকে। মোনাজাত শুরুর আগে লাখ লাখ মানুষ রাস্তার ওপর, বাড়ির ছাদে, বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে বসে মোনাজাতে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। মুসল্লিরা দোয়ায় নবী করিম (সা:) এর তরিকা মনের মধ্যে পয়দা করার তৌফিক দান, গোনাগার বান্দাদের দোয়া কবুল করার কাতর মিনতি জানান। সুষ্ঠুভাবে বিশ্ব ইজতেমার অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে বিপুলসংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।

মুসল্লিদের বাড়ি ফিরতে যানবাহন সংকট : আখেরি মোনাজাত শেষে লাখো মুসল্লি তাদের নিজস্ব গন্তব্যে যেতে যানবাহন সংকটে পড়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হন। মোনাজাত শেষে লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দান থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে স্রোতের মতো একসঙ্গে ফিরতে শুরু করলে একপর্যায়ে ময়দানের চতুরদিকে ছয়-সাত কিলোমিটার বিস্তীর্ণ এলাকায় মানববলয় সৃষ্টি হয়। এসব এলাকার সব রাস্তায় একপর্যায়ে মুসল্লিদের বাড়ি ফেরার কাফেলায় পরিণত হয়। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে মুসল্লির বাড়ি ফেরার স্রোতে কোনো যানবাহন চলাচল করতে না পাড়ায় মুসল্লিরা হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন। পড়েন যানবাহন সংকটে।

আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মহিলা মুসল্লিও আগের দিন রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের আশপাশে, বিভিন্ন মিল-কারখানা, বাসাবাড়িতে ও বিভিন্ন দালানের ছাদে বসে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা যায়। ইজতেমায় মহিলাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যে যেখানে পেরেছেন সেখানে বসেই লাখো মুসল্লির সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নিতে দেখা গেছে।

গাজীপুর জেলা তথ্য কর্মকর্তা এস এম রাহাত হাসনাত জানান, ভিড়ের কারণে যারা মূল ময়দানে যেতে পারবেন না, আখেরি মোনাজাতে তাদের শরিক হতে টঙ্গীর মধুমিতা রোড, টঙ্গী বিসিক এলাকা, নোয়াগাঁও এবং চেরাগআলী, টঙ্গী স্টেশন রোড, রেলস্টেশন, মেঘনা রোড, কামারপাড়া, উত্তরা বিমানবন্দর সড়কের আশপাশের প্রায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত অতিরিক্ত মাইকের সংযোগ দিয়ে মোনাজাত শোনার ও অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।

২০ টাকায় ভ্যান, ৫০ টাকায় অটো : ভাড়াচালিত মোটরসাইকেল, পিকআপ, সিএনজি অটোরিকশা বা ভ্যানগাড়িতে মুসল্লিদের ইজতেমা ময়দানে পৌঁছে দিতে নিজের পরিবহন নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন অনেকেই। তারা ভাড়ার বিনিময়ে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত মুসল্লিদের পৌঁছে দেন ১০০ টাকার বিনিময়ে। এ ছাড়া সিএনজি অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয় ৫০ টাকা। আর পিকআপ ও প্যাডেলচালিত ভ্যানে বিমানবন্দর পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২০ টাকা করে।

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে অংশ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।

নারীদের অংশগ্রহণ : আখেরি মোনাজাতে শামিল হওয়ার জন্য শত শত নারী মুসল্লি আশপাশের মিল-কারখানা ও বাসাবাড়ির ভেতর অবস্থান নিয়ে মোনাজাতে অংশ নেন। নারীদের জন্য আলাদা কোনো জায়গার ব্যবস্থা না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে বসার জায়গা করে নেন।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা : গতকাল বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে। সন্দেহজনক যেকোনো মুসল্লিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশিসহ জিজ্ঞাসাবাদ করে ময়দানে ঢুকতে দিয়েছেন। আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের চাপ শামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষভাবে সতর্ক রাখা হয়েছে বলে জানান গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।

উল্লেখ্য, এবারের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা গত ১২ জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর থেকে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বিদের আমবয়ানের মাধ্যমে তিন দিনব্যাপী প্রথম পর্ব শুরু হয়। গত ১৪ জানুয়ারি প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়। মাঝে চার দিন বিরতি দিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়। গতকাল ২১ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ২০১৮ সালের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা। ইজতেমায় আগত বিদেশি মুসল্লিসহ এ পর্যন্ত দুই পর্বে বিভিন্ন বয়সী মোট আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist