সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুফাঁদ
আমরা কেউই জানি না। সড়কে মৃত্যুর কাফেলা আর কত দীর্ঘায়িত হবে! আর কত মানুষ মারা গেলে কাফেলা তার গন্তব্যে পৌঁছাবে? অথবা বলা যায়, কাফেলা তার যাত্রার পরিসমাপ্তি বা ইতি টানবে। বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কের হালচাল দেখে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা খুব কঠিন। তবে সাধারণ মানুষের মতে, সহসা এ মিছিল থামবার নয়। গত ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২৮ দিনে মোট দুর্ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৪৮১টি। আর এই দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয়েছে দুই হাজার ১১১ জনকে। গড়ে প্রতিদিন মারা গেছে প্রায় ১০ জন। এসব দুর্ঘটনার বেশির ভাগ অর্থাৎ ৫১ দশমিক ৬৩ ভাগ ঘটেছে মহাসড়কে।
সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের যাপিত জীবনে আজ এক মহাব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই চাকায় পিষ্ট হচ্ছে অগণিত মানুষ। হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য মূল্যবান প্রাণ। নিঃস্ব হচ্ছে পরিবার। পঙ্গুত্ববরণ করে সমাজ-সংসারের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। এত কিছুর পরও রোধ করা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। একশ্রেণির চালকরূপি দানবের কাছে জীবনকে বন্ধক রেখেই চলতে হচ্ছে পথ। সড়কে এদের ইচ্ছের ওপরেই যেন নির্ভর করছে আমাদের বেঁচে থাকা, না থাকা! প্রতিরোধের যেন কেউ নেই। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অনেক সময় অনেক প্রতিশ্রুতি ও উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও দুর্ঘটনার গতি কমতে দেখা যায়নি। বিপরীতে বলা যায়, কাফেলায় দ্বিগুণ হয়ে যুক্ত হয়েছে মানুষের আর্তনাদ।
আমরা মনে করি, সড়কে-মহাসড়কে শৃঙ্খলার ঘাটতি যেন আকাশ ছুঁয়েছে। সঠিক তদারকি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যথাযথ দায়িত্ব পালন না করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাওয়ার পরিবর্তে দিনকে দিন তা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। আর দক্ষিণ এশিয়ায় সপ্তম। এমতাবস্থায় সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছিল সড়ক পরিবহন আইনে চালকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে দাবির কোনো ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়নি। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি থেকেছে সুদূর পরাহত।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালকদের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু আমরা তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে চালকদের মানসিকতাকে আরো বেপরোয়া করে গড়ে তুলতে সহযোগিতা জুগিয়েছি। এই মানসিকতা থেকে যত দ্রুত সম্ভব বেরিয়ে এসে আইনকে কঠোর থেকে কঠোরতম অবস্থায় উন্নীত করে সমস্যার সমাধানে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে-এটাই আজ জাতির প্রত্যাশা।
"