reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ মার্চ, ২০২৪

পাসপোর্ট অফিসে দালালের দৌরাত্ম্য বন্ধ হোক

দেশের পাসপোর্ট অফিসগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। কখনো পাসপোর্ট অফিসের কোনো কোনো অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও অনিয়মে জড়িয়ে যাওয়ার কথা শোনা যায়। এমনও অভিযোগ রয়েছে, অনেক সময় বাড়তি টাকা ছাড়া পাসপোর্ট মেলে না। একদিকে দালাল চক্রের অর্থবাণিজ্য, অন্যদিকে পাসপোর্ট অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়মের কারণে জিম্মি হয়ে পড়তে হয় পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের।

দেশের অনেক আঞ্চলিক অফিসে যেন ঘুরছে ছকে বাঁধা ঘুষ-দুর্নীতির চরকি। ঘুষ না দিলেই পাসপোর্টের আবেদন হয়ে যায় ত্রুটিপূর্ণ। দালাল ধরে ঘুষ দিলে ত্রুটি থাকলেও বিশেষ সংকেতে গ্রহণ করা হয় আবেদন। দালালদের দৌরাত্ম্য এতই বেপরোয়া যে, তারা নিজেরাই দিচ্ছেন পুলিশ ভেরিফিকেশন। কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত দালাল চক্র পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ-দুর্নীতির যেন শেষ নেই। কখনো কখনো দুর্নীতির কথাও সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। দুর্নীতি রোধে মাঝে মাঝে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শোনা গেলেও কিছুদিন পরই দেখা যায় সবকিছু চলছে আগের মতোই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একদিকে কড়াকড়ি করলে আরেক দিকে খুলে যায় দুর্নীতির নতুন পথ। বিশেষ করে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসগুলো যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এসব অফিসে অলিখিতভাবে দালাল ‘নিয়োগ’ দিয়ে প্রকাশ্যে চলে ঘুষের কারবার।

প্রতিদিনের সংবাদে গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দালালের দৌরাত্ম্য ও অনিয়মের চিত্র উঠে আসে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে দালাল চক্রের অর্থবাণিজ্য আর অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের অনিয়ম চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট সেবাগ্রহীতারা। র‌্যাব ও পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়ে দালালদের গ্রেপ্তার, পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নামপরিচয়ে বানানো নকল সিল জব্দ করলেও বন্ধ হয় না তাদের দৌরাত্ম্য। অভিযোগ আছে, দালালের মাধ্যমেই পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন অফিসের কর্মকর্তারা। প্রত্যেক দালালের আলাদা কোড নম্বর রয়েছে। ফলে আবেদন জমা হলেই অফিস কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন আবেদনটি কোন দালালের মাধ্যমে জমা হয়েছে। কৌশল করে দালালরা আবেদনকারীকে দিয়ে সরকারি ফি ব্যাংকে জমা করায়। দালালরা পুলিশ ভেরিফিকেশন বাবদ টাকা নেওয়ার কারণ খোঁজ করে জানা গেছে, তারা নিজেরাই পুলিশের সিল বানিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। পাসপোর্ট অফিস তা যাছাই করে না।

বলা হয়ে থাকে, পাসপোর্ট খাত দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ খাতে ঘুষবাণিজ্য ও হয়রানি চলে অব্যাহতভাবে। এর আগেও সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ-সংক্রান্ত নানা তথ্য। মনে রাখা দরকার, সমগ্র বিশ্বে পাসপোর্টপ্রাপ্তি নাগরিক অধিকারগুলোর অন্যতম। অথচ এ অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে অনিয়মের শিকার হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ। পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। এ অবস্থা চলতে পারে না। ভুলে গেলে চলবে না, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পাসপোর্ট পেতে পারে, সে জন্য প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা এবং নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। কোনো রকম হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়া পাসপোর্ট পেতে পারে, সেজন্য সরকার পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ এর সব আঞ্চলিক অফিস দুর্নীতিমুক্ত করার পদক্ষেপ নেবে- এটাই কাম্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close