জেমাম আহমদ

  ১২ মার্চ, ২০২৪

শক্তিসঞ্চয়ী ইট

স্মার্ট প্রযুক্তি ও স্থাপত্যশিল্পের ভবিষ্যৎ

জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নির্মাণসামগ্রীর চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু নির্মাণসামগ্রীর উৎপাদন ও পরিবহনে প্রচুর পরিমাণে শক্তি ব্যবহৃত হয়। এই শক্তির চাহিদা পূরণের জন্য ক্রমবর্ধমান পরিমাণে জ্বালানি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা পরিবেশ দূষণের একটি বড় কারণ। এ সমস্যা সমাধানের জন্য একটি সম্ভাব্য সমাধান হলো শক্তিসঞ্চিত ইটের ব্যবহার। বর্তমানে এই প্রযুক্তি উদীয়মান হলেও গবেষকরা এ বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শক্তিসঞ্চয়ী ইট একটি অভিনব ধারণা, যার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক শক্তি খাতে একটি আমূল পরিবর্তন আসতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশা প্রকাশ করেছেন। এটি এমন এক ধরনের ইট যাতে তাপ বা শক্তি সঞ্চয়ের ক্ষমতা রয়েছে। এই ইটগুলো তৈরিতে বিশেষ ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা হয়, যা তাপ বা শক্তিসঞ্চয় করে রাখতে পারে। ইটের নমুনাগুলোকে পেডট নামক একটি পরিবাহী আবরণ দিয়ে লেপন করা হলে ইটের ছিদ্রযুক্ত কাঠামোর মধ্যে প্রবেশ করে এটিকে শক্তি-সঞ্চয়কারী ইলেকট্রোডে রূপান্তরিত করে। ইটের লাল রঞ্জক বা আয়রন অক্সাইড এই প্রক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে।

শক্তিসঞ্চিত ইট তৈরির জন্য প্রথমে একটি সাধারণ ইট তৈরি করা হয়। এরপর সেই ইটের ওপরে বা ভেতরে ল্যামিনেটেড কার্বন ফিল্ম বা কার্বন নানো-ফিল্ম লাগানো হয়। এই ফিল্মগুলোকে ইটের সঙ্গে শক্তভাবে সংযুক্ত করতে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন : ফিল্মটিকে ইটের সঙ্গে রাসায়নিকভাবে সংযুক্ত করা অথবা ইটের সঙ্গে তাপ দিয়ে সংযুক্ত করা অথবা ইটের সঙ্গে যান্ত্রিকভাবে সংযুক্ত করা। ফিল্ম লাগানোর পর ইটটিকে চুল্লিতে পুড়িয়ে শুকানো হয়। তাপের প্রভাবে এটি ইটের সঙ্গে শক্তভাবে সংযুক্ত হয়ে যায়। শক্তি সঞ্চিত ইট তৈরির জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহৃত হয়। যেমন : সিরামিক, কংক্রিট ও প্লাস্টিক। বাংলাদেশে শক্তি সঞ্চিত ইটের ব্যবহার এখনো শুরুর দিকে রয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২২ সালে ১০ মিলিয়নেরও বেশি শক্তি সঞ্চিত ইট বিক্রি হয়েছিল। এ সংখ্যাটি ২০২৩ সালে ১২ মিলিয়ন এবং ২০২৪ সালে ১৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। শক্তিসঞ্চিত ইটগুলোর বৃদ্ধি জনপ্রিয়তার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, তারা প্রচলিত ইটের তুলনায় আরো দক্ষ। এই ইটগুলোতে টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড নামক একটি পদার্থ থাকে, যা সূর্যের আলো শোষণ করে এবং তাপ শক্তি হিসেবে সঞ্চিত করে। এই ইটগুলোর তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। শীতকালে এই ইটগুলো থেকে তাপ শক্তি বেরিয়ে আসে, যা ঘর বাড়ি গরম রাখতে সাহায্য করে। তার ফলে ভবনের হিটার এবং এয়ার কন্ডিশনারের ওপর চাপ কমে যায়। এই ইটগুলো পরিবেশবান্ধব।

তারা প্রচলিত ইটের তুলনায় কম কার্বন নিঃসরণ করে। এটি ভবনগুলোর কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে সাহায্য করে। এই ইটগুলোর ব্যবহার বাড়লে বিদ্যুৎ খরচ কমানো, পরিবেশ দূষণ কমানো এবং ভবনগুলোকে আরো শক্তিশালী করে তোলা সম্ভব হবে। এগুলো বাড়ি, অফিস, কারখানা, হাসপাতাল, স্কুল ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ভবন নির্মাণে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া এগুলো শহরের রাস্তাঘাট, পার্ক ও অন্যান্য জনসাধারণের স্থানে ব্যবহার করা যেতে পারে। শক্তিসঞ্চিত ইটগুলোকে বিভিন্ন আকার আকৃতি ও রঙের মাধ্যমে তৈরি করা যায়। এ জন্য এটিকে বিভিন্ন ধরনের শৌখিন অথবা স্বনির্বাচিত পছন্দসই ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ প্রকল্পে ব্যবহার করা সহজ করে তোলে। এই ইটগুলোর ব্যবহার বাড়াতে হলে, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগও জরুরি। যেহেতু এ ধরনের ইটগুলো বেশ ব্যয়বহুল, তাই এই প্রযুক্তির সুবিধা সাধারণের মধ্যে সহজলভ্য করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।

এই ইটগুলোর ব্যবহারে করছাড় এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করে বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়তা করতে হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উচিত এই ইটগুলোর প্রচার ও বিপণনে আরো বেশি জোর দেওয়া। ভবিষ্যতে শক্তিসঞ্চিত ইটের ব্যবসায়িক অবস্থা আরো ভালো হবে বলে আশা করা যায়। কারণ, পরিবেশবান্ধব এবং অর্থসাশ্রয়ী এই ইটগুলোর চাহিদা দিন দিন বাড়বে। শক্তিসঞ্চিত ইট হলো একটি প্রযুক্তি, যা আমাদের টেকসই ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা এই প্রযুক্তির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে, আমরা আমাদের গ্রাহককে আরো টেকসই করে গড়ে তুলতে পারি।

লেখক : সফটওয়্যার প্রকৌশলী ও তথ্যপ্রযুক্তি গবেষক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close