reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪

পোশাক খাতে গতিশীলতা আনা আমাদের কাম্য

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি তৈরি পোশাক খাত। এ খাতটি শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। বলা যায়, পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস, যা জিডিপিতে ১১ শতাংশ অবদান রাখছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে সামনের সারিতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৩০টি অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশকে ধরা হয়। বদলে যাওয়া এই অর্জনের পেছনে সহায়ক হিসেবে রয়েছে পোশাকশিল্প।

বলা সংগত, পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। এই শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে এরই মধ্যে সরকারের সহায়তায় পণ্য বহুমুখীকরণ, বাজার বহুমুখীকরণ, ফাইবার বহুমুখীকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন, ইনোভেশন ও টেকনোলজি আপগ্রেডেশন এবং কস্ট-কম্পিটিটিভ হওয়ার মাধ্যমে ভ্যালু চেইনে এগিয়ে থাকার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনা মহামারি ও পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নানা ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে এই শিল্পকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। তবে আশার কথা, দেশের তৈরি পোশাক খাত ধূসর সময় পার করে এবার উজ্জ্বল দিনের দ্বারপ্রান্তে। রপ্তানিকারকরা ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের শুরু থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়বে বলে আশা করছেন। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের মূল্যস্ফীতি কমা, বৈশ্বিক খুচরা পর্যায়ের দোকানগুলো বিভিন্ন উৎসবে তাদের শীতকালীন পোশাকের মজুদ বিক্রি করে ফেলায় সামনে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাড়তে পারে। পাশাপাশি তৈরি পোশাক খাতে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য (ওএসএইচ) ব্যবস্থা প্রাথমিকভাবে শ্রম আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও মর্যাদা উন্নীত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যনীতি-২০১৩ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি-২০১৫ গঠন করেছে। শ্রম আইনের ১০৯ ধারা কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুরক্ষা প্রদান করে। প্রতিবেদনটিতে শ্রম আইনে পরিবর্তনের ফলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও নির্মূলে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরে প্রশংসা করা হয়েছে। এ ছাড়া পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যকাঠামো কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা এবং হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর উপায় হিসেবে প্রমাণ হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অন্যদিকে পোশাকশিল্পের বৈশ্বিক ক্রেতাদের প্রতিনিধিরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো রপ্তানি গন্তব্যের প্রধান দেশগুলোর খুচরাপর্যায়ের দোকানগুলো ব্ল্যাক ফ্রাইডে, সাইবার মানডে, ক্রিসমাস ডে ও বক্সিং ডের মতো বিভিন্ন উৎসবের কল্যাণে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে প্রচুর পণ্য বিক্রি করতে পেরেছে। ইউএস সেন্সাস ব্যুরোর উপাত্তও বলছে, গত এক বছরে তৈরি পোশাকের দোকানগুলোয় বিক্রি ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এ বিক্রি ২০২৩ সালের জানুয়ারির মাসিক ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে নভেম্বরে ২১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

বলা বাহুল্য, আমাদের রপ্তানিকারকরা চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে বৈশ্বিক ক্রেতাদের কাছ থেকে পোশাকের অর্ডার বাড়বে বলে আশা করছেন। কারণ ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ফলে বিগত এক বছরে ব্র্যান্ডগুলো সফলভাবে তাদের মজুদ বিক্রি শেষ করায় বাংলাদেশ থেকে তাদের পোশাকের সোর্সিং বাড়াবে বলে বিজিএমইএ নেতারা আশা করছেন। তারা বলছেন, কিছু ক্রেতা এরই মধ্যে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে অর্ডার বাড়াতে আলোচনা শুরু করছেন। আমরা আশা করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি পোশাকশিল্প সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাবে, যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকে আরো গতিশীল করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close