মিথিলা ফারজানা

  ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪

দৃষ্টিপাত

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অকার্যকারিতা ও সচেতনতা

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক, যা আমরা ব্যবহার করি অনায়াসে। কিন্তু এর কার্যকারিতা, অকার্যকারিতা, সাইড-ইফেক্ট সম্পর্কে জেনে না জেনেই তুমুল ব্যবহার। এই ওষুধ ব্যবহারের শেষ কোথায়? কেন ও কত মাত্রায় এর ব্যবহার হয়? সেসব না জেনেই প্রতিনিয়ত একদল ফার্মেসি দোকানদার এসব হাই-পাওয়ারের ওষুধ রোগীকে দিয়ে যাচ্ছেন। সামান্য ভাইরাল ফিভার, হাঁচি, কাশি, গা-ব্যথার মতো সাধারণ অসুস্থতায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার করার প্রশ্ন আসেই না। ক্ষেত্রবিশেষে অবশ্যই দেওয়া যাবে। তবে সেই ক্ষেত্রে অর্থাৎ আসল রোগটা কী? সেটা যাচাই করে নিতে হবে আগে। এসবের জন্য নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে ও সঠিক মাত্রায় রয়েছে। দেখা যায়, জ্বর নিয়ে এক রোগী গেলেন, ফার্মেসিওয়ালা ধরিয়ে দিলেন ‘এরিথ্রোমাইসিন ৫০০ এম/জি’ ৩ দিনের জন্য। আবার দেখা যায়, রোগী নিজেই গিয়ে চাইলেন, আমাকে এই কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক দেন। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের ওষুধ। ধরা যাক, একজন রোগীর শরীরে ১০১ ডিগ্রি জ্বর। হাঁচি, কাশিও রয়েছে। সে নিজেই নিজেকে পরামর্শ দিলেন ‘সাধারণ নাপায় কাজ হবে না, দ্রুত সুস্থ হব না, অ্যান্টিবায়োটিক খাব।’ এখন এই যে দ্রুত সুস্থ হওয়ার প্রচেষ্টা কিংবা আকাঙ্ক্ষা কতটা বিপজ্জনক, সেসব বিষয়েই আজকের আলোচনা। অনুমান করে কাউকে ৩ দিন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল খাওয়ানো হয়েছে। সে সুস্থ। প্রকৃতপক্ষে তিনি সুস্থ নন। সি/এস টেস্ট করালে দেখা যাবে কোন কোন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রোগীর শরীরে কার্যকর। ঠিক কত দিন তাকে ওষুধ সেবন করতে হবে। দেখা গেল, ওই রোগীর ওষুধ লাগত ৭ দিনের জন্য, কিন্তু তাকে দেওয়া হলো ৫ দিনের আর তিনি ৩ দিন খেয়েই সম্পূর্ণ সুস্থ থাকায় আর খেলেন না। অর্থাৎ ডোজ সম্পূর্ণ করেননি। এখন হবে কী, রোগীর শরীর থেকে ক্ষতিকর ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়েছে, তবে কিছু অংশ ধ্বংস হয়নি। এই যে কিছু অংশ থেকে যাচ্ছে, এই কিছু অংশই আবার বংশ বিস্তার করছে। নিজেদের ইমিউনিটি লেভেল হাই করে নিচ্ছে, তারা আগের দেওয়া অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত। ফলে এই ক্ষতিকর ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া নিজেকে এমনভাবে তৈরি করে নিল যাতে এবার যদি পূর্বের দেওয়া সেই একই ওষুধ দেওয়া হয় তাহলে এর কার্যক্ষমতা দ্রুতই লোপ পাবে। এর পরও কিন্তু আছে, ওই রোগী আবার অসুস্থ হয়ে পূর্বে ওষুধ সেবন করে উপকার না পেয়ে অন্য কোনো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল নিলেন এবং এবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। ফলাফল দ্বিতীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল অকার্যকারিতা।

এমন অহরহ মানুষ আছেন যারা না জেনেই হাঁচি, কাশি, জ্বর, সর্দি হলেই অ্যান্টিবায়োটিক নিচ্ছেন। অথচ তারা এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখছেন না। অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াও ধ্বংস হয়, যা শ্বেত রক্তকণিকার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের এক চলমান গবেষণায় উঠে এসেছে যে দেশে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে অন্তত ১৭টির কার্যক্ষমতা অনেকাংশে কমে গেছে। এই ১৭টির বেশি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের অকার্যকারিতার জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আমরাই দায়ী। শুধু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালই নয়, এ ছাড়া আরো নানা ওষুধ মানুষ খাচ্ছে সাময়িক সুস্থতার জন্য। ফলে সেসব ওষুধের কার্যকারিতাও হুমকির মুখে। এমতাবস্থায় করণীয় কী? দেশে অসংখ্য উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স, সদর হাসপাতাল, বিভাগীয় হাসপাতাল রয়েছে। যেখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যেই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকরা সেবা দিয়ে থাকেন। সামান্য কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য নিজস্ব পরামর্শে কিংবা ফার্মেসি দোকানদারের পরামর্শে ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকি আমরা। নিজেও সুস্থ থাকি, কাছের জনদেরও সুস্থ রাখি। আপনার আজকের একটা ভুল সিদ্ধান্ত, আপনারই ক্ষতি। আমাদের মনে রাখা উচিত, সবকিছুরই প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। ওষুধও এর ব্যতিক্রম নয়। নিজে সচেতন হই, অন্যকেও সচেতন করি।

লেখক : শিক্ষার্থী, জমজম ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যাটস, বরিশাল

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close