সাধন সরকার

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

মুক্তমত

টেকসই পর্যটনে ইকো ট্যুরিজম

বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। পলল সমভূমির এ বদ্বীপ বিভিন্ন দিক দিয়ে সম্ভাবনাময় ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। নদীমাতৃক বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল জুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী। পাহাড়, নদী-নালা, খাল-বিল, দ্বীপ-সমুদ্রসৈকত, বনভূমি, চা বাগান, হাওর-বাঁওড়, লেক ইত্যাদি পরিবেশগত পর্যটন বা ইকো ট্যুরিজমক্ষেত্র দেশের সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবেশবান্ধব পর্যটন এলাকায় প্রকৃতি-পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে প্রকৃতির ঐশ্বরিক সৌন্দর্য উপভোগ, উপলব্ধি ও অধ্যয়ন করাই হলো ইকো ট্যুরিজম। ইকো ট্যুরিজম বা পরিবেশগত পর্যটনের মাধ্যমে প্রকৃতিকে গভীরভাবে জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। পর্যটন খাতে ইকো ট্যুরিজমের ধারণা বিপুল সম্ভাবনা তৈরি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এ সময়ে ইকো ট্যুরিজমের ধারণা দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। প্রকৃতি-পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, মানব-পরিবেশ মিথস্ক্রিয়া ও প্রকৃতি সংরক্ষণে ইকো ট্যুরিজমের গুরুত্ব অপরিসীম। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে ভুগতে থাকা বাংলাদেশের মতো দেশসমূহের জন্য ইকো ট্যুরিজমের ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, প্রকৃতির সান্নিধ্যে বিনোদনের সুযোগ, সংস্কৃতির মিলন, প্রাকৃতিক সম্পদের বৈচিত্র্য রক্ষা, পরিবেশদূষণ রোধ, পরিবেশবান্ধব টেকসই পর্যটনের বিকাশ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সাধনে ইকো ট্যুরিজম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ ইকো ট্যুরিজমের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়।

সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকলে লাভজনক ও পরিবেশ সংরক্ষণের পর্যটন স্পট সামগ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এজন্য দরকার ইকো ট্যুরিজম। যার ফলে পরিবেশগত সম্পদের জীববৈচিত্র্য যেমন সংরক্ষণ হবে, তেমনি পর্যটনশিল্পেরও হবে প্রসার। বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা ইকো ট্যুরিজমের জন্য সবচেয়ে বেশি সহায়ক। এখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করে বৈচিত্র্যপূর্ণ সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই পর্যটন সবচেয়ে বেশি কার্যকর। প্রকৃতিগতভাবেই পার্বত্য জেলাগুলো ইকো ট্যুরিজমের সেরা স্পট। ছোট-বড় দর্শনীয় স্থান তো বটেই, সঠিক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারলে ন্যূনতম প্রকৃতি-পরিবেশে সমৃদ্ধ স্থানকেও ইকো ট্যুরিজমের আওতায় এনে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ানো যায়। পরিকল্পিত ইকো ট্যুরিজমের আওতায় কোনো দূষিত এলাকার দূষণ রোধ করে পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। সুন্দরবন, কক্সবাজার ও কুয়াকাটার মতো বিখ্যাত পর্যটন স্পটকে কেন্দ্র করে ‘কমিউনিটি বেজড কালচারাল ইকো ট্যুরিজম’ গড়ে তোলা যেতে পারে। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে থাকা ছোট ছোট দর্শনীয় স্থান ও প্রকৃতি-পরিবেশের ছোঁয়া আছে এমন স্পটে পরিকল্পিতভাবে ইকো ট্যুরিজম করা গেলে পর্যটক যেমন আকর্ষণ করা যাবে, তেমনি প্রকৃতিও রক্ষা পাবে। ইকো ট্যুরিজমের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় অর্থনৈতিক-সামাজিক বিকাশ ও প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণ। বর্তমান সময়ে পরিবেশগত পর্যটন এলাকায় পর্যটক আকর্ষণ করে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সবুজ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে।

পর্যটন স্পটকে কেন্দ্র করে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলা হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন বাড়ে, তেমনি যাতায়াত ব্যবস্থা, খাবার ব্যবস্থা, হোটেল, পণ্যসামগ্রী বিক্রিসহ পর্যটক ও স্থানীয়দের নানামুখী চলাচল বৃদ্ধি পায়। তবে ইকো ট্যুরিজম প্রকৃতি সংরক্ষণ ও টেকসই পর্যটনে যেমন সহায়ক, তেমনি বিপরীতভাবে ইকো ট্যুরিজমের কোনো প্রকল্প যেন প্রকৃতি-পরিবেশের জন্য ক্ষতি বয়ে না আনে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। ইকো ট্যুরিজম ব্যবস্থাপনায় সম্ভাব্য পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে তা টেকসই পর্যটনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। সব উন্নত দেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার পর্যটন। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি) সম্প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছে, পর্যটনের হাত ধরে বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বাস্তবতা এটাই যে, ইকো ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হবে এশিয়ার রোল মডেল।

লেখক : শিক্ষক ও কলাম লেখক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close