reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

চিকিৎসাসেবায় আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি

স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে বাংলাদেশের। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। স্বাস্থ্য খাতে বিগত কয়েক বছরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে মৌলিক চিকিৎসা চাহিদা পূরণ, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল, অসংক্রামক রোগগুলোর ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধে ব্যাপক উদ্যোগ, পুষ্টি উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সূচকগুলোর ব্যাপক অগ্রগতিতে স্বাস্থ্য অবকাঠামো খাতে অভূতপূর্ব অর্জন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে বহু দূর।

বলাবাহুল্য, এত সব অগ্রগতির পরও কিছু ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছে স্বাস্থ্য খাত। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে রোগীর নিজস্ব ব্যয় সবচেয়ে বেশি হয় বাংলাদেশে। সবশেষ প্রকাশ করা বাংলাদেশ জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যয় হিসাবের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৯ শতাংশই নিজের পকেট থেকেই খরচ করতে হয় রোগীদের। এর কাছাকাছি খরচ হয় আফগানিস্তানে, সেখানে ৬৪ শতাংশ। আর মালদ্বীপে সবচেয়ে কম ১৮ শতাংশ। আবার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রতি বছর বহু মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মানসম্পন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসক, নার্সসহ ২৩ জন স্বাস্থ্যকর্মীর একটি দল থাকা দরকার। বাংলাদেশে আট লাখ স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি আছে। দেশের প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ৩ দশমিক ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি মানসম্পন্ন সেবার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা গেছে, নানা অজুহাতে ৪০ শতাংশ চিকিৎসক অনুপস্থিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপস্থিত স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসকের পক্ষে বিপুলসংখ্যক রোগীকে মানসম্পন্ন সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। সমস্যা আরো আছে। দক্ষিণ এশিয়ায় শিশু জন্মদানে সবচেয়ে বেশি সিজারিয়ান হয় বাংলাদেশে। সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো সামান্য অসুখেও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। চিকিৎসকরা রোগীদের ঠিকভাবে না দেখা, তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে না শোনা, ব্যবস্থাপত্রে প্রয়োজনের বেশি ওষুধ লেখা, ভুল ওষুধ লেখা- এমন নানা অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। রোগ নির্ণয়ের অজুহাতে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করতে বলেন চিকিৎসকরা। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অপচিকিৎসায় কঠোর কোনো শাস্তির নজিরও এ দেশে নেই।

অভিযোগ আছে, জনবল সংকটের কারণে সরকারি হাসপাতালে সেবা সহকারীরা কোনো সার্ভিস দেয় না। চিকিৎসকরা ভালো থাকলেও হাসপাতাল স্টাফরা প্রতিষ্ঠানগুলো কুক্ষিগত করে রেখেছে। ফলে সার্ভিস পেতে দালাল, নার্স এবং আয়াদের পর্যন্ত টাকা দিতে হয়। আর রোগীর চাপ বেশি থাকায় চিকিৎসকরা রোগীকে যতটুকু সময় দেওয়ার কথা তা দেন না। চিকিৎসা খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং রোগীদের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে এসব সমস্যার সমাধান করা জরুরি। তা না হলে সরকারের স্বাস্থ্য খাতের যেটুকু অর্জন আছে তা ম্লান হয়ে যাবে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যসেবার মান অক্ষুণ্ন রাখতে তদারকি অব্যাহত রাখবে। কারণ চিকিৎসাসেবায় মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close