হাসানুল বান্না অলি

  ২৫ নভেম্বর, ২০২২

ধর্মচিন্তা

মুমিনের ইবাদতের শীতকাল

শস্য-শ্যামলা ও সুজলা-সুফলা আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ দান। বাংলাদেশকে ষড়ঋতুর দেশ বলা হয়। ষড়ঋতুর এ দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি প্রতি বছর ছয়বার ভিন্ন ভিন্ন সাজসজ্জার রূপ ধারণ করে। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যময়তা, অফুরন্ত রূপ ও সাজসজ্জা পৃথিবীর আর কোনো দেশে পাওয়া যাবে না। তাই তো কবি তার কবিতায় বলেছেন, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/ সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।’

বাংলাদেশকে ষড়ঋতুর দেশ বলা হলেও আপাতত বাস্তবে দুটি ঋতু লক্ষ করা হয়। শীত ও গ্রীষ্মকাল। পবিত্র কোরআন মজিদেও আল্লাহতায়ালা শুধু দুটো ঋতুর কথা উল্লেখ করেছেন। তা হলো শীত ও গ্রীষ্মকাল। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন,

‘তাদের (কুরাইশ বংশের লোকদের) অভ্যাস ছিল শীত ও গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণ।’ (সুরা আল-কুরাইশ : ২)

শীতকালে আমরা মাত্রাতিরিক্ত ঠাণ্ডার মুখোমুখি হই, অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে আমরা প্রচুর গরম ও তাপ অনুভব করি। এই দুই ঋতুতে ঠাণ্ডা ও গরমের প্রখরতা মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। হাদিসে রাসুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এই বলে অভিযোগ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে) আমার এক অংশ অন্য অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। তখন আল্লাহতায়ালা তাকে দুটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে, অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দুটি হলো, তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা অনুভব করো তাই।’ (সহিহ বুখারি) অন্য একটি হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, রাসুলে করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা গরমের যে প্রচণ্ডতা অনুভব করো তা জাহান্নামের গরম নিঃশ্বাসের কারণেই। আর শীতের তীব্রতা যা পাও তা জাহান্নামের ঠাণ্ডা নিঃশ্বাসের কারণেই।’ (সহিহ বুখারি)

তবে হাদিসে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীতকালকে মুমিনের জন্য ঋতুরাজ বসন্ত বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘শীতকাল হলো মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ) এর মানে হলো মুমিন বান্দার অফুরন্ত ইবাদাতের জন্য শীতকাল হলো সবচেয়ে উত্তম সময়। শীতকাল মুমিনের জন্য রহমতস্বরূপ। আরো প্রখ্যাত সাহাবি ও মনীষীরা শীতকালকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। মুসলিমজাহানের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.) বলেন, ‘শীতকাল হলো মুমিনের জন্য গনিমত।’

শীতকাল শুধু আমলের মাস নয় বরং শীতকালে নানা রকম শাকসবজি ও ফলমূল খুব ভালো ফলন হয়। আর তখন খুব কম দামেই এগুলো পাওয়া যায়। এটাও আমাদের প্রতি মহান রবের অপার কৃপা।

শীতকালের দিনগুলো ছোট ছোট থাকে এবং পানির পিপাসা কম হয়। তাই আমরা ইচ্ছে করলে এ সময় কম কষ্টে বেশি বেশি নফল সিয়াম (রোজা) পালন করতে পারি। নবী (সা.) বলেন, শীতকালের সিয়াম হলো অনায়াশলব্ধ গনিমত সম্পদের মতো। অর্থাৎ যে সম্পদ অর্জিত হয় খুব অনায়াশে। এজন্য আমরা এই শীতকালে অল্প কিছু হলেও নফল সিয়াম পালনের চেষ্টা করি। সোম ও বৃহস্পতিবারের সাপ্তাহিক সিয়াম পালন করি। আইয়ামে বীজের (হিজরি মাসের ১৩, ১৪, ১৫) দিনগুলোতে সিয়াম পালন করি। এ ছাড়া যদি কারো রমাদানের সিয়ামের কাজা থেকে থাকে। তাহলে সেই কাজাগুলো এখন আদায় করে ফেলতে পারি। সিয়াম পালন করার সর্বোত্তম সময় হলো শীতকাল। এ বিষয়ে ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্য শীতকালের চেয়ে প্রিয় কোনো সময় আছে কি না আমার জানা নেই। কারণ শীতের দিনগুলো ছোট থাকে আর রাতগুলো বড় হয়। তাই দিনে রোজা রাখা আর রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে থাকা সহজ হয়।’ (কিমিয়ায়ে সাআদাত)

শীতকালে দিনগুলো ছোট হলেও রাতগুলো অনেক বেশি দীর্ঘ হয়। তাই রাত ১০-১১টার মধ্যে শুয়ে পড়লে অনেক লম্বা সময় তৃপ্তিসহ ঘুমিয়েও ফজরের আগে ওঠা সহজ হয়। এই বড় রাতের সুযোগ আমরা সহজেই কাজে লাগাতে পারি নিয়মিত তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে। তাহাজ্জুদ সলাত নফল হলেও সরাসরি আল্লাহতায়ালা কোরআনে তাহাজ্জুদ সলাতের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাহাজ্জুদ সলাত বান্দাকে সম্মানিত করে বলেও আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেছেন। একটি হাদিসের ভাষ্য এমন, যেই লোক কনকনে শীতের মধ্যে অজু করে সালাত আদায় করবে আল্লাহতায়ালা তার দিকে তাকিয়ে হেসে দেন। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় অনেক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, তাহাজ্জুদের সালাত আবার অনেকে বলেছেন ফজরের সালাত। অন্য আরেকটি হাদিসে এসেছে, আল্লাহতায়ালা ওই বান্দার দিকে তাকিয়ে হেসে দেবেন এবং তাকে তিনি মাফ করে দিয়ে জান্নাত দান করবেন। শীতকাল এলে আল্লাহর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘শীতকালকে স্বাগতম। কেননা তা বরকত নিয়ে আসে। শীতের সময় রাত লম্বা হয়, যা কিয়ামুল লাইলের (তাহাজ্জুদ সলাতের) জন্য সহায়ক এবং দিনগুলো ছোট হয়, যাতে রোজা রাখতে সহজ হয়।’

আসুন আমরা শীতের সময় ও সুযোগগুলো সুন্দরভাবে কাজে লাগাই। শীতকালে

আমরা যেন বিশেষভাবে কিছু আমলের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close