এম খান

  ০৪ অক্টোবর, ২০২২

মুক্তমত

উড়ালপুলে অসদৃশ, প্রতিকার জরুরি

নাগরিক সেবার মাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকায় সাতটি উড়ালপুল স্থাপনের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে সরকার। যার সুফল যান্ত্রিক যানবাহন যাতায়াত নির্বিঘ্ন করছে। তবে রাজধানীবাসীর নাগরিক সেবা লাঘবের জন্য নির্মিত উড়ালপুলের নিয়ন্ত্রণহীনতা ও অব্যবস্থাপনা দারুণ নিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি করছে বলে পুল ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের অভিমত।

সম্প্রতি স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ দ্বিচক্র যান চলাচল সার্বিক বিবেচনায় প্রায় নিষিদ্ধ করার মতো হয়ে ওঠে। সেই বিবেচনায় রাজধানীর সাতটি উড়ালপুলে যান্ত্রিক যান ছাড়া জনসাধারণের চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি বলে আহছান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এক তরুণী বাইকার শিবলী সুলতানা জানান।

কেননা দিবালোকে যাতায়াত কিছুটা নির্বিঘ্ন হলেও মুশকিল হয় রাতে। সাতটি উড়ালপুলের অধিকাংশ সড়কবাতি নষ্ট এবং মাসের পর মাস এদের দেখার কেউ থাকে না। বিভিন্ন সময় বাতিগুলো পুনঃস্থাপিত হলেও দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্বদশায় চলে যায়। ‘আলোর নিচে অন্ধকার’ প্রবাদটি রাজধানীর প্রায় প্রতিটি উড়ালপুলে তার অবস্থান বিপরীত, এখানে অন্ধকারের পাদদেশে আলো থাকলেও কুড়িল মোড়, বিমানবন্দর সড়ক ও প্রগতি সরণির বাতিগুলো প্রায় সময়ই নষ্ট থাকে। তাই বেলাশেষে উড়ালপুলের নীরব এলাকায় মাদকসেবীদের নিরাপদ অভয়ারণ্য এবং রাতে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানির মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালপুলের পদ্মা সেতুর অভিমুখে যাত্রাবাড়ীর তৃতীয় তলায় রাজধানীর কিছু নির্দিষ্ট এরিয়ার মতো এখানেও যেন ‘পূর্ণশশীর পুরোভাগে কুশলসমাচার হাটের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে’। যা যেকোনো সুস্থ পরিবারের সদস্যদের কাছে দৃষ্টিকটুর কারণ। উড়াল পুলগুলোতে উল্লিখিত অনৈতিক কার্যক্রম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দৈনন্দিন জীবনে সব কাজে পলিথিন ব্যাগ ও প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদী-নালা, নর্দমা সব খানেই মিশে গিয়ে জগমণ্ডলকে নীলকণ্ঠ করেছে পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী। আশ্চর্যের বিষয় উড়ালপুলে তার দেখা মিলবে যত্রতত্র। উড়ালপুলের দুই পাশে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, উড়ন্ত পলিথিন দেখলে যে কেউ মনে করবে- বাল্যকালের দূরন্ত ঘুড়ি ওড়ার দৃশ্য। উড়ন্ত পলিথিন কখনো কখনো দ্বিচক্র যানের চাকায় প্যাঁচিয়ে, কখনো আরোহীর চোখে-মুখের সামনে পড়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় বাইকাররা। আবার কোথাও ময়লাভর্তি পরিথিন, প্লাস্টিকসামগ্রী, ভাঙা হেলমেট পরে থাকতে দেখা যায়। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও অব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে একদিকে যেমন মূল্যবান স্থাপনার ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে পরিবেশ দূষিত ও বিষাক্ত হয়ে উড়ালপুল সংলগ্ন নিবাসীদের স্বাস্থ্যঝুঁঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সম্প্রতি সকাল ৭টা হতে ৮টার দিকে রমনা পার্কের অরুণোদয় গেট এবং মন্ত্রিপাড়া রোডের সুগন্ধার মাথায় হেয়ার রোড ডিভাইডার ও তার আশপাশে প্রাতঃভ্রমণ পিপাসুদের প্রাইভেট গাড়ি যত্রতত্র রাখায় চলাচলকারীদের মারাত্মক অসুবিধা দেখেও তা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। অনুরূপ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালপুলের যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ কারাতিটোলা স্কুলের বিপরীত, টিকাটুলি তাসমেরী বিল্ডিং ও গুলিস্তান হোমিওপ্যাথিক কলেজ পয়েন্ট দ্বিতল পথের উভয় প্রান্থে বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও হেলপাররা অননুমোদিতভাবে যাত্রী ওঠানামা করায় কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সেসব কারণে অন্যান্য জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত অ্যাম্বুলেন্স, সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে দ্বিচক্র যানের আরোহীরা। তা ছাড়া মগবাজার, মৌচাক ও মালিবাগ, উড়ালপুলের তেজগাঁও, সাতরাস্তা, হলিফ্যামিলি, ওয়ারলেস, রাজারবাগ, শান্তিনগর, আবুল হোটেল সংলগ্ন একাধিক এলাকায় দুর্বল পিচ ঢালাই ওঠে গিয়ে রাস্তায় ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এসব খানাখন্দ দূর থেকে অনুমান করা দুরূহ বিধায় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অনেকে যানবাহন।

মেগাসিটির নান্দনিক সৌন্দর্যের ভিন্নমাত্রা স্থাপিত উড়ালপুলের নিরাপত্তার স্বার্থে দিবানিশি কাউকে নির্বিঘেœ হাঁটাচলার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ জরুরি। বিশেষ করে মাদকাসক্ত, ভবঘুরে, যুগলবন্দিদের প্রতি নজর বাড়াতে হবে। নিচের সড়ক পরিচ্ছন্ন হলেও ওপরের অবস্থা খুবই নাজুক। যেসব পয়েন্টে পরিবহন কর্তৃপক্ষ যাত্রী ওঠানামার কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব অসদৃশ্য স্থানগুলোতে নিয়মিত টহল বৃদ্ধির দায়িত্ব যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close