reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ জানুয়ারি, ২০২২

নির্দোষীও সাজাপ্রাপ্ত হয় অবহেলায়-অদক্ষতায়

কথায় বলে কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ! বাংলাদেশের বাস্তবতার দিকে তাকালে এ চিত্র অহরহই চোখে পড়ে। অনৈতিক কর্মকান্ডের ঘনঘটায় সমাজ যেন ক্রমশই ঢলে পড়ছে অমানিশার অতল গহ্বরে। যারা অনৈতিকতার চর্চা করছেন, তাদের ক্ষমতা অনেক। আর সেই ক্ষমতাই তাদের দিয়েছে অনৈতিকতা চর্চার বিশেষ সুবিধা। এরাই আবার দেশ-জাতি, রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা করেন। আর তাদের এই অনৈতিকতা চর্চার খেসারত দিতে হয় সাধারণ মানুষকে। সময়টা অনৈতিকতার জন্য পৌষ মাস, পাশাপাশি সাধারণের জন্য নেমে আসে সর্বনাশ। এ রকম একটি সর্বনাশ নেমে এলো জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার দুই ব্যক্তির ওপর। একজন শফিউল ইসলাম, অন্যজন মঞ্জুরুল ইসলাম। সম্পর্কে এরা জামাই-শ্বশুর।

পুলিশ বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলা ও অদক্ষতার খেসারত দিতে হয়েছে এই দুই সাধারণকে। কোনো অপরাধ না করেও জেল খেটেছেন ২২ দিন। অথচ আইনে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, অপরাধীকে সাজা দিতে সেই সাজার আওতায় যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি না আসে। এটা করতে যদি অপরাধীদের সাজা কমে আসে অথবা মুক্তি পায়, তখনো তা বলবৎ রাখতে হবে। অর্থাৎ নিরপরাধ ব্যক্তিকে ভুল করেও সাজা দেওয়া যাবে না। কিন্তু আমাদের সমাজে ভুল করার চেয়ে অবহেলা-অদক্ষতা এবং অনৈতিকতার গিলোটিনে পড়ে প্রতিনিয়তই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর সাখিদারপাড়া গ্রামে গত ২৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে হঠাৎ ক্ষেতলাল থানা পুলিশ হাজির হয় নিরপরাধ ব্যক্তিদ্বয়ের বসতবাড়িতে। পুলিশ শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলামকে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর সিল ও বিচারকের স্বাক্ষরযুক্ত একটি ওয়ারেন্ট দেখায়। এরপর তাদের গ্রেপ্তার করে ক্ষেতলাল থানায় নেওয়া হয়। পরদিন পুলিশ তাদের জয়পুরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে। আদালত তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে জয়পুরহাট জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। তারপর পাঠানো হয় কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে।

অনুসন্ধান বলছে, ওই দুজনকে গ্রেপ্তারের পর জয়পুরহাট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ঢাকা নারী ও শিশু নির্য়াতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারকের কাছে একটি নথি পাঠানো হয়। ওই ট্রাইব্যুনালের বিচারক ৭২/২০২০ নম্বর মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখতে পান, জয়পুরহাট জেলার শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলাম নামের কেউ এ মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি নন। তাদের নামে ইস্যুকৃত ওয়ারেন্ট জাল অথবা ভৌক্তিক। ঢাকা থেকে বিষয়টি জানানো হলে জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ওই ব্যক্তিদের মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেন। ওই আদেশ পেয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তারা মুক্তি পান।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ওই ব্যক্তিদের ওপর অযাচিতভাবে যে অন্যায় নিপীড়ন এবং মানসিক নির্যাতন হয়েছে, তার দায় কে বহন করবে। এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই। তবে আমরা এটুকু জানি, আইনে কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে সাজা দেওয়ার এখতিয়ার কারো নেই। এ ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটেছে। কিন্তু কেন? আমরা সেই কেন খুঁজে বের করার দাবি রাখছি। বিষয়টির তদন্ত হওয়া দরকার। দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আদালতের সামনে দাঁড় করানো হোক- এটাই একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close