reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ জানুয়ারি, ২০২১

সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হোক আগামী প্রজন্ম

সুন্দর এই পৃথিবীতে সবাই সুখে, শান্তিতে বাঁচতে চায়। তাই সুন্দর এবং সুস্থ জীবনের প্রত্যাশায় প্রতিনিয়ত লড়াই করছে সবাই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন, কাজকর্মের জন্যই খাদ্য প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য যে ধরনের খাবার দরকার, তা আমরা খাচ্ছি কি না? না কি রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো বিষ খাচ্ছি! কিন্তু সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিটি মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। আর এ বিশুদ্ধ খাদ্য সুস্থ ও সমৃদ্ধিশালী জাতি গঠনে একান্ত অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে বিশুদ্ধ খাবার প্রাপ্তি এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু বিবেকহীন অসাধু ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের কারণে, যারা অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য এই পন্থা অবলম্বন করে।

১৯৯৪ সালে আমেরিকার এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন এজেন্সির একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করে, ফরমালিন ফুসফুস ও গলবিল এলাকায় ক্যানসার সৃষ্টি করে। ২০০৪ সালের ১ অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গলবিল এলাকায় ক্যানসার সৃষ্টির জন্য ফরমালিনকে দায়ী করে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের (এআইএস) একটি প্রতিবেদন মতে, টেক্সটাইল কালারগুলো খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশের পর এমন কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেই, যার ক্ষতি করে না। তবে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান ক্ষতিগুলো হয় আমাদের লিভার, কিডনি, হৃৎপিন্ড ও অস্থিমজ্জার। ধীরে ধীরে এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বাচ্চা ও বৃদ্ধদের বেলায় নষ্ট হয় তাড়াতাড়ি, তরুণদের কিছুটা দেরিতে। খাদ্যপণ্য ভেজালের কারণেই দেশে বিভিন্ন রকমের ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেলিউর, হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানি এগুলো অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আর আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচ্ছি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে রোগীদের লম্বা লাইন। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের ‘বিষাক্ত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি’ শীর্ষক সেমিনারে বলা হয়, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা দেশে প্রায় ১৫ লাখ। সম্প্রতি সময়ে এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার শিশুমৃত্যুর এক ভয়ানক চিত্র তুলে ধরেছে, যাতে প্রতি ১৯ শিশুর অন্তত একজন ৫ বছরের আগেই মৃত্যুবরণ করে।

জাতিকে খাদ্যে ভেজাল নামক অভিশাপ থেকে বাঁচানো এবং এটি প্রতিরোধ করা একটি যুগোপযোগী একান্ত জরুরি দায়িত্ব ও কর্তব্য। দেশে ভেজাল খাদ্যবিরোধী যেসব আইন প্রণীত হয়েছে, তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। যথাযথ আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে খাদ্যে ভেজাল সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। জনগণ যদি সচেতন হয়ে ভেজাল খাদ্য প্রত্যাহার করে, তবে বিক্রেতা খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার কথা ভাবতেও পারবে না। একটি সুখী, সমৃদ্ধিশালী এবং উন্নত জাতি হিসেবে দাঁড়াতে হলে মানুষকে কর্মঠ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে আর সেটি নিশ্চিত করতে পারে খাঁটি খাবার। তাই আমরা মনে করি, বিক্রেতাদের এই আত্মঘাতী পথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিকে আরো ধারালো করতে হবে। রাষ্ট্রের কাছে এটুকু প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি। নিরাপদ হোক খাদ্য, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হোক আগামী প্রজন্ম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close