কর দেন না এমন
তারা যে সামর্থ্যবান। ক্ষমতা অনেক। হাতটাও অনেক লম্বা। আকাশের চাঁদকেও স্পর্শ করার ক্ষমতা রাখেন। বিত্তের বৈভবে গড়া তাদের মেজাজ-মর্জি। দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানানোর ক্ষমতা রাখেন তারা। নিয়মকে অনিয়ম আর অনিয়মকে নিয়ম বানানোর ক্ষমতা তাদের হাতের মুঠোয়। সম্ভবত সে কারণেই এ দেশের সামর্থ্যবান ৬৮ শতাংশ মানুষ কর দেন না। কর দেওয়ার ক্ষমতা আছে অর্থাৎ তিনি বা তারা আইনগতভাবে কর দিতে বাধ্য। কিন্তু তারা তা দেন না। গত বছর সবচেয়ে বেশি আয়ের ২৫ শতাংশ ব্যক্তির মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই তাদের কর দেননি। ফাঁকি দিয়েছেন আয়করের পুরোটাই। সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে উন্নয়ন বাজেটের ৯৫ শতাংশ ছিল বিদেশি সহায়তানির্ভর। আবার বিদেশি অর্থের ৯৫ শতাংশ ছিল অনুদান আর বাকি ৫ শতাংশ ঋণ। কিন্তু সে অবস্থা আজ আর নেই। বাংলাদেশ তার তলাবিহীন ঝুড়িকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে আজ তার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অবস্থা তৈরি করেছে। অর্থনীতির মেরুদ- আগের তুলনায় শতসহস্র গুণ শক্তিশালী হয়েছে। বর্তমানে উন্নয়ন বাজেটের সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ আসে বিদেশ থেকে, যার ৯৫ শতাংশই ঋণ। সুতরাং এখন আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বৈদেশিক ঋণ অথবা সম্পদের ওপর আমরা আর নির্ভরশীল নই।
এদিকে জরিপে অংশ নেওয়া ৭৫ শতাংশ ব্যক্তিই মনে করেন, দেশের করব্যবস্থা ধনী ব্যক্তিদের পক্ষে। কর দিচ্ছেন এমন ৬৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, করব্যবস্থায় দুর্নীতি রয়েছে। পাশাপাশি ৫০ শতাংশ মনে করেন করব্যবস্থা জটিল। তবে ৮৫ শতাংশ ব্যক্তি মনে করেন, কর আদায় ব্যবস্থাপনায় সৎ ও যোগ্য মানসিকতা বিকশিত হলে এবং সেবার মান গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারলে মানুষ স্বেচ্ছায় কর দেওয়ার প্রশ্নে উৎসাহিত হবেন। তথ্য মতে, বর্তমানে দেশের ১০ শতাংশ মানুষ করদাতা। দেশের ৩৫ লাখ করদাতা শনাক্তকরণ নম্বরধারী থাকলেও ২০ লাখের বেশি লোক আয়কর রিটার্ন দেন না। দুটি কারণে মানুষ ভয় পান। একটি আয়কর আইনজীবী, অন্যটি আয়কর সংগ্রহকারী। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিডিপির তুলনায় এক দশকে বেসরকারি বিনিয়োগ ও কর সংগ্রহ বাড়েনি। দেশের অর্থনীতির আকার যতটা বাড়ছে, জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায়ের হার ততটা বাড়ছে না। আবার জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সাধারণ মানুষ এর সুফল পাচ্ছেন না। বরং সমাজে বৈষম্য বাড়ছে। আমরা মনে করি, দেশের ৯০ শতাংশ সম্পদ যখন ৭ শতাংশ মানুষের কাছে জমা হয়েছে, তখন তাদের কাছ থেকে কেবল আয়করই নয়, সব ধরনের কর আদায়ের প্রক্রিয়াকে আরো অনেক বেশি শক্তিশালী করা দরকার। যাদের ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করা আছে, তারা নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে মনোযোগী হবেন এবং কার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেনÑএটাই জাতির প্রত্যাশা।
"