মারুফ হোসেন, ইবি

  ০৪ জুন, ২০২৩

চাপাইগাছি বিলে এক দিন ও কুষ্টিয়ার স্মৃতি

কুষ্টিয়াকে বলা হয় কালচারাল সিটি। বহু গুণিজনের পদচারণে কুষ্টিয়ার মাটি সিক্ত হয়েছে, ধারণ করেছে নানা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে। এখানে রয়েছে লালন শাহের মাজার, শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি, কুমারখালীতে রয়েছে বিষাদ সিন্ধুর অমর স্রষ্টা মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি, গ্রামীণ সাংবাদিকতার প্রবর্তক কাঙাল হরীনাথের জন্মস্থানও এ কুষ্টিয়া। কুষ্টিয়া প্রাকৃতিকভাবেও সৌন্দর্যমন্ডিত। এখানে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা কালের সাক্ষী হয়ে নীরবে-নিভৃতে দাঁড়িয়ে আছে।

কুষ্টিয়ায় আমার একে একে কেটেছে প্রায় ছয়টি বছর। এ সময় বিভিন্ন জেলার নানা রকম মানুষের সঙ্গে হয়েছে পরিচয়। কারো সঙ্গে গড়ে উঠেছে সখ্য। দূরত্বের ব্যবধান ঘুচিয়ে বন্ধুত্ব, সৌহার্দ, সৌজন্য, হৃদ্যতা গড়ে ওঠেছে অনেকর সঙ্গে। হাবিবউল্লাহ, নুহু আলম, আনোয়ার, মনির, মাহফুজ, সাদিকসহ অনেকে অন্তরঙ্গ হয়ে যায়। ক্যাম্পাস লাইফের প্রথমদিকে একা একা থাকতাম। বিষয়টা ফ্রেন্ডরা লক্ষ করে। একা থাকতাম বলে ওদের কথাও শুনেছি ঢের। পরে আড্ডা-গল্পে ওদেরই বিরক্ত করতাম। একা থাকতে পছন্দ করলেও ঘোরাঘুরি করতে আমার বেশ ভালো লাগত। সময় পেলেই বেড়াতে যেতাম সরকারি কলেজমাঠ, গড়াই নদীর পাড়, রেনউইক বাঁধ কিংবা এনএস রোড। কত গল্পগুজবই হতো তখন বন্ধদের সঙ্গে। কলেজের ভেতরের মাঠটার সবুজ ঘাসের ওপর বসে গ্রুপ স্টাডিও বেশ জমে উঠত। খেলার মাঠের কোনায় বসে চলত ইংরেজিচর্চা। ক্রিকেট, ফুটবলও খেলতাম মাঝেমাঝে।

কুষ্টিয়ায় আমার শেষ সময়গুলো কেটেছে ঝাউদিয়ায়। এখানে এসেও হৃদ্যতা গড়ে ওঠে ইসমাইল, শরীফ, সাব্বির, কামরুলদের সঙ্গে। ঝাউদিয়ায় রাতের বাদাম কিংবা বিরিয়ানি পার্টির দিনগুলো স্মৃতির পাতায় অম্লান হয়ে থাকবে। ইসমাইলের রান্নার হাত দারুণ। ও আমাদের প্রায়ই বিরিয়ানি তৈরি করে খাওয়াত। ক্লাস, কোচিং, পরীক্ষা সব মিলিয়ে ব্যস্ততাও থাকত ঢের। তার পরও চলত পার্টি-আড্ডা-ঘোরাঘুরি। অবসর পেলেই শরীফ, সাব্বির, ফজলুল হক, কামরুলকে নিয়ে বেড়িয়ে পরতাম। কখনো সাইকেল নিয়ে কখনো-বা হেঁটে। আবার কখনো একাণ্ডএকাই হাঁটতে বেড়োতাম।

ঝাউদিয়ার শাহি মসজিদ আমাদের মেস থেকে হেঁটেই যাওয়া যেত। দৃষ্টিশোভন এ স্থাপনা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসেন। এ ছাড়া ঝাউদিয়াতে রয়েছে অনেক দর্শনীয় জায়গা। চাপাইগাছি বিল এখানকার মনোমুগ্ধকর ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভ্রমণপিপাসুদের নৌকা নিয়ে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখা যায়। ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় এ জায়গাগুলোতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল খুব কিন্তু সুযোগ হচ্ছিল না। ওদিকে ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে একটু স্নিগ্ধ বাতাস আর প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে অনেকের মনই হাহাকার করছিল। হঠাৎ এক দিন অনিলের উদ্যোগে চাপাইগাছি বিলে নৌকা ভ্রমণের কথা পাকাপাকি হয়। সবাই যেতে রাজি। চাঁদাও তোলা হলো। বিকেলে একটা অটো ভাড়া করে সবাই চেপে বসলাম। গন্তব্য চাপাইগাছি বিল। আগে থেকেই নৌকা ঠিক করে রাখা হলো। বিলের যতই কাছাকাছি পৌঁছাতে লাগলাম, ততই যেন মনের মধ্যে একটা আনন্দের ঢেউ বয়ে যাচ্ছিল। অটো এসে থামল বিলের কাছে। সবাই নেমে নিচে দাঁড়ালাম। একটু পরই নৌকা ছাড়বে। সবার মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছিল। নৌকা ছাড়ার সময় হলে সবাই যার যার জায়গায় বসে পড়ে। কামরুল এসে ভিডিও করা শুরু করল। ও আমাদের কজনের কাছে নৌকা ভ্রমণের অনুভূতি জানতে চাইল।

নৌকা ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাস আর ঢেউয়ের তরঙ্গে সব অবসাদ দূর হয়ে আমরা যেন প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলাম। মেঘাচ্ছন্ন আকাশটা আস্ত আস্তে আলোকিত হতে লাগল। কেউ কেউ বিলের জলে হাত ভেজাচ্ছিল। ছবি তোলাতেও ব্যস্ত হয়ে পড়ল কেউ কেউ। সময় যত গড়াচ্ছিল ততই মন চাচ্ছিল, আরেকটু থাকি না এ সুন্দর প্রকৃতির মাঝে। অবশেষে আমরা পাড়ে এসে পৌঁছলাম। নৌকা থেকে নেমে অটো নিয়ে মেসে ফেরার পথে একটা চা আড্ডাও হয়ে যায় আমাদের। সেদিনের স্মৃতি অমলিন হয়ে থাকবে স্মৃতির অ্যালবামে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close