মো. জাহানুর ইসলাম, ঢাবি

  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এক দিন

পঞ্চাশের অধিক দেশের কয়েক হাজার প্রকাশক প্রতিষ্ঠানের অংশ নেওয়া জার্মানির ফ্রাঙ্কফ্রুট বইমেলা বিশ্বের লেখক ও পাঠক মহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। বিশ্ব মহলে ফ্রাঙ্কফ্রুট বইমেলার মতো আমাদের অমর একুশে বইমেলার ওতটা নামডাক না থাকলেও দিন দিন তা ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফ্রাঙ্কফ্রুট মেলায় কখনো যাওয়ার সুযোগ হয়নি, তাই সেখানকার পাঠকদের মধ্যে বই নিয়ে কেমন আগ্রহ উদ্দীপনা কাজ করে তা আমার জানা নেই। তবে অমর একুশে বইমেলা নিয়ে একটু আধটু জানাশোনা আছে। সেই জানাশোনার নিরিখে বলতে পারি, আমাদের অমর একুশে বইমেলা নিয়ে লেখক ও পাঠকদের মাঝে যে আগ্রহ ও উদ্দীপনা কাজ করে কেন জানি মনে হয় পৃথিবীর আর অন্য কোথাও এমনটা নেই। আমাদের এখানে নভেম্বর ডিসেম্বর মাস আসলেই বইমেলার তোড়জোড় শুরু হয়। এর আরো এক মাস পরে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে গ্রন্থমেলা শুরু হয়। মেলা শুরু হওয়ার আগে বেশ সময় পাওয়ায় কখন মেলায় যাবেন, না যাবেন তার একটা পরিকল্পনা লেখক পাঠকরা আগেই করে রাখেন। ২০২৩ সালের বইমেলা নিয়ে আমিও আগেই পরিকল্পনা তৈরি করে রেখেছিলাম। সেই পরিকল্পনা অনুসারে বইমেলার দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২ ফেব্রুয়ারি বিকালের দিকে বইমেলায় যাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন গেট দিয়ে মেলায় প্রবেশ করি। প্রবেশের সময় গেটে বইমেলার একটা ম্যাপ চোখে পড়ে। ম্যাপটি দেখে বইমেলায় কোথায় কী আছে তা বোঝার চেষ্টা করি। এর অল্প কিছু সময় পরে মেলা প্রাঙ্গণের মূল এরিনায় প্রবেশ করি। চোখ যেদিকে যায় সেদিকেই বই প্রেমিকদের ভিড় দেখে আপ্লুত হই। তখন গ্রন্থমেলার অতীত ইতিহাস খুব করে মনে পড়ে। মনে পড়ে ১৯৬৫ সালের কথা, যে সালে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীন শিশু গ্রন্থমেলার আয়োজন করেছিলেন, যেটি বাংলাদেশের প্রথম গ্রন্থমেলা হিসেবে পরিচিত। মনে পড়ে ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জের গ্রন্থমেলার কথা, যে মেলায় সরদার জয়েনউদদীন দর্শকদের গ্রন্থমনস্ক করে তুলতে মেলার ভেতরে একটি গরুর গায়ে লিখে রেখেছিলেন ‘আমি বই পড়ি না’। মনে পড়ে তৎকালীন স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহা, স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী এবং বর্ণমিছিলের তাজুল ইসলামের কথা। মনে পড়ে আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষে ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার কথা। মনে পড়ে ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত গ্রন্থমেলার কথা, যেটিতে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। মনে ভাবনার ডালাপালা বাড়তে থাকে। মনের গহিনে প্রশ্নের উদ্রেক হয় তারা যদি শুরু না করতেন তাহলে কি আজকে এমন জমজমাট বই উৎসব করা সম্ভব হতো? মনের অবচেতনে নীতিবাচক উত্তর আসে। এমন সব চিন্তা করতে করতে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে নানা লেখকের বই দেখি। নতুন নতুন বইয়ের ঘ্রাণে বিমোহিত হই।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে শুরু করলে মেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করার পরিকল্পনা করি। এমন সময় সাবেক রুমমেট ছোট ভাই রাফির সঙ্গে দেখা হয়। তার সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিই। পরে আরো কিছু সময় বিভিন্ন স্টলে ঘোরাঘুরি করি। এমন সময় হঠাৎ করে তরুণ কলামিস্ট ও বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি আকিব হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়। পরে একে একে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয় তরুণ কলামিস্ট বিশাল সাহা, তোফায়েল আহমেদ, পারভেজ, রুমান মিয়াসহ আরো কয়েকজন। তাদের সঙ্গে নিয়ে আবারও গ্রন্থমেলার বিভিন্ন স্টলে নতুন নতুন বই অবলোকন করি। ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে মেলায় আগত দর্শনার্থী ফাইজুল ইসলামের সহযোগিতায় নিজেদের ক্যামেরা বন্দি করি। দেখতে দেখতে মেলার সময় প্রায় শেষ হয়ে আসে, আমরাও গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ ত্যাগ করি। শেষ হয় আমাদের গ্রন্থমেলায় ঘোরাঘুরি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close