হুমায়রা রহমান সেতু

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০২২

শীতের আমেজে ক্যাম্পাস আড্ডা

তেজোদীপ্ত সূর্যটা একটু ক্লান্ত হতেই রাজত্ব করে শীত। রাজা তখন সীমানা আটকে দেয় কুয়াশার চাদরে। শিশিরবিন্দুতে জমে থাকা রাজ্য রূপ নেয় নতুন সাজে। শুষ্ক প্রকৃতি তখন কেঁপে ওঠে হিমশীতল শিহরণে। আবহাওয়ার নতুন রূপের মুগ্ধতায় লেখা হয় নকশীকাঁথার কাব্য-

‘জীর্ণতার মোহবন্ধ ছিন্ন করো/পিঠাণ্ডপুলি আর পায়েসে। সৌন্দর্যের কাঁপন জ্বালাও আগুনের লেলিহান আয়েসে!’

উত্তরের হিমেল হাওয়া অনুভূতিকে ধাক্কা দিয়ে অনুভব করিয়ে দেয় তার অস্তিত্ব। কুয়াশার অন্ধকারে ঢেকে থাকা চারদিকে তখন শুরু হয় শীতরাজার অধ্যায়। শেয়ালের শীতার্ত আর্তনাদে ভোর হতে না হতেই, অতিথি পাখির কলরবে সে অধ্যায়ে রচিত হয় সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প-গদ্য।

বংশী নদীর কোলঘেঁষা ৩২ একরে ঝরে পড়ে বৃক্ষপাতা। পূর্বাাকাশে সূর্য উঁকি মারার আগেই ঝাড়ুদার ভেদ করে কুয়াশা। শিশির মাড়িয়ে যতক্ষণে সবুজবীথিকে আলিঙ্গন করছে ততক্ষণে শুকনো পাতায় নূপুরের ধ্বনি তুলে দৌড়ে পালায় ওম খোঁজা বিষাক্ত বিচ্ছুটিও।

লুকোচুরি খেলতে খেলতে সুয্যিমামা যখন রোদ দেয় তখন কতই না মিষ্টি লাগে। তাইতো সেই মিষ্টির সুবাশে আগমন ঘটে ক্যাম্পাস পিপীলিকাদের। সবুজ ঘাসে জমে থাকা শিশিরে পালতোলা নৌকার মতো চাদর জড়িয়ে বৈঠা ধরে ১৯টি ডিপার্টমেন্টের প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী।

সরগরম হতে থাকে ক্যাম্পাস। শীতের কাঁপন থেমে যেতে থাকে আড্ডার উষ্ণতায়। ক্যান্টিনের ধোঁয়া ওঠা চায়ে চুমুক দিয়ে গরম হয় শীতে কাবু হাবু মিয়াও। কাপ-চামচের ঘষাঘষির টুংটাং শব্দ মিলিয়ে যায় সাংবাদিক সমিতির বারান্দায় থাকা একগুচ্ছ গোলাপের গিটারের ধ্বনিতে। হই-হুল্লোড় আর মজার কসরতে বেঞ্চে জমে থাকা ঠান্ডাতে ঘাম ঝরে এক কোণে চুপচাপ বসে থাকা রোকেয়ারও।

কুয়াশার ধবল চাদরে ঢেকে যাওয়া পথে কয়েক ফুট দূরত্বেরও কিছু চোখে পড়ে না। তবু চোখের পাওয়ার কমে যাওয়া সজীব চশমার শিশির পরিষ্কার করতে করতে এসে নিজেকে ভিজিয়ে নেয় মাঠের ঘাসে জমে থাকা মুক্তা দানায়। শীতের কনকনে ঠান্ডাকে দূরে ঠেলে আড্ডা জমায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী শিউলি, মাজেদারাও।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ম্রিয়মান রোদ্দুর তার উজ্জ্বলতা আরো হারাতে থাকে। তবুও হারিয়ে যায় না সূজিয়া খালার পিঠের দোকানে ভিড়। ভর্তা চিতই কিংবা ডিম চিতই, ভাঁপা পিঠা, মালপোয়া, মাংস পিঠায় তারা আড্ডাকে আরো জিমিয়ে দেয়। সঙ্গে পানিপুরি, চটপটি, আর হিটলার মামার ঝালমুড়ি শীত কে যেন দূরে ঠেলে দেয় কয়েকশত মাইল। সঙ্গে আছে নানীর দোকানে নাতিদের চানাচুর আর কোমল পানির ঝাঁজ। আনন্দময় মূহূর্তের মায়া কাটিয়ে পড়ন্ত বিকেলে আবারও নীড়ে ফিরতে হয় পাখিদের। শীতের আমাজে জমে উঠা ক্যাম্পাস যেন তারুণ্যকে আটকে রাখতে পারে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close